কৃষিপণ্য ও গ্রামীণ রূপান্তরিত খাদ্যের মান উন্নয়নে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে সরকার। বিশ্বব্যাংক ও ইন্টারন্যাশনাল ফান্ড ফর এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্টের (ইফাদ) সহযোগিতায় ১৩৪ কোটি ডলারের একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার।
পাঁচ বছরমেয়াদি এই প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু হবে আগামী অর্থবছরে।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বাংলাদেশ খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন উৎপাদিত খাদ্য ও কৃষিপণ্যের পুষ্টির মান উন্নয়নের উপায় খুঁজছে সরকার। এ জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এ প্রকল্পে সরকারকে সহায়তা করতে এগিয়ে এসেছে বিশ্বব্যাংক এবং ইফাদ।
কৃষি মন্ত্রণালয় আগামী পাঁচ বছরের (২০২৩ থেকে ২০২৮ সাল) মধ্যে প্রোগ্রাম অন এগ্রিকালচারাল অ্যান্ড রুরাল ট্রান্সফরমেশন ফর নিউট্রিশন, এন্ট্রেপ্রেনারশিপ অ্যান্ড রেজিলেন্স ইন বাংলাদেশ শীর্ষক কৃষি ও গ্রামীণ রূপান্তর কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবে।
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রস্তাবিত কৃষি ও খাদ্যপণ্যের পুষ্টি মান উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ৫৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার দেবে। এর মধ্যে বিশ্বব্যাংক দেবে ৫০ কোটি ডলার এবং ইফাদ ৪ কোটি ৩ লাখ ডলার। বাকি ৮০ কোটি ডলার বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব তহবিল থেকে ব্যয় করবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য আমরা ইতোমধ্যেই বিশ্বব্যাংক এবং ইফাদের সঙ্গে আলোচনা করেছি। দুই উন্নয়ন সহযোগীই আমাদের এই কর্মসূচিতে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, দেশের কৃষি উৎপাদনের পুষ্টির মান উন্নয়ন ও উন্নত করার পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতির উদ্যোক্তা উন্নয়ন এবং সামাজিক পরিষেবার মাধ্যমে রূপান্তর করতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনেক সংস্থা এই কর্মসূচির অধীনে কাজ করবে।
সংস্থাগুলোর মধ্যে রয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, কৃষি বিপণন বিভাগ, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, কর্মসূচিটি খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি খাত সহনশীল উচ্চ-মূল্যের ফসলের বৈচিত্র্যকরণে কৃষি খাতে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও অন্য সংস্থাগুলো খাদ্য নিরাপত্তা এবং পুষ্টি নিশ্চিত করার জন্য শস্য, ডাল, ফল, শাক-সবজি, মসলার মতো সব প্রধান প্রধান ফসলের উৎপাদনশীলতা এবং স্থায়িত্ব বাড়াতে কাজ করবে। সংস্থাগুলো কৃষকদের সেবা এবং ভর্তুকি প্রদানের ব্যবস্থাকে আরও দক্ষ করার কাজ করবে। কৃষি গবেষণা কেন্দ্রগুলোকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি কৃষিপণ্য বিপণন বাড়াতে প্রচার এবং উদ্যোক্তা বিকাশে কাজ করবে। এই কর্মসূচিটি কৃষি রূপান্তরের জন্য নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আধুনিকীকরণেও সহায়তা করবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত ৫০ কোটি ডলার ঋণের জন্য বিশ্বব্যাংকের প্রাক-মূল্যায়ন ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের মধ্যে ঋণ চুক্তি সম্পন্ন করা যাবে বলে আমরা আশা করছি।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তারা বলছেন, খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে টেকসই কৃষিখাদ্য ব্যবস্থাপনা দরকার। কভিড-১৯ ও জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিক খাদ্য ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছে। কভিড-১৯ শিখিয়েছে, একটি জরুরি অবস্থা অপ্রত্যাশিতভাবে উদ্ভূত হতে পারে এবং দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্য সরবরাহ শৃঙ্খলাকে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলতে পারে।
তারা আরও বলেন, এমতাবস্থায় কৃষিকে টেকসই করা এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলা প্রয়োজন। ভঙ্গুর কৃষিখাদ্য-ব্যবস্থাকে ঠিক করার জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ প্রয়োজন, যাতে প্রত্যেকের কাছে পর্যাপ্ত নিরাপদ এবং পুষ্টিকর খাবার থাকে।