কৃষিতে বাংলাদেশের সাফল্য ঈর্ষণীয়। কৃষিজমি কমতে থাকা, জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও বৈরী প্রকৃতিতেও খাদ্যশস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে উদাহরণ। ধান, গম ও ভুট্টা উৎপাদনে বিশ্বের গড় উৎপাদনকে পেছনে ফেলে ক্রমেই এগিয়ে চলছে বাংলাদেশ। সবজি উৎপাদনে তৃতীয় আর চাল ও মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে। বন্যা, খরা, লবণাক্ততা ও দুর্যোগ সহিষ্ণু শস্যের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশের নাম।
বর্তমান সরকারের পরপর দুই মেয়াদে চার দফায় সারের দাম কমানো হয়। ১০ টাকার বিনিময়ে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়, সেচের পানির ভর্তুকির টাকা সরাসরি কৃষকের একাউন্টে ট্রান্সফার করা হয় এবং সেই সঙ্গে ১ কোটি ৮২ লাখ কৃষকের মাঝে উপকরণ সহায়তা কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। যুগান্তকারী এসব পদক্ষেপের ফলে কৃষিতে এসেছে ঈর্ষণীয় সাফল্য।
সরকার কৃষকদের সম্ভাব্য সব রকম উপকরণ সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের প্রবর্তিত কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড দেশে ও বিদেশে বিপুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। বাংলাদেশের অনুসরণে ভারত সরকার কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছে। দেশের ৩৫টি জেলায় ২৫ শতাংশ ভর্তুকিতে ট্রাক্টর, পাওয়ার টিলার, হারভেস্টরসহ বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহের ব্যবস্থা করেছে। কৃষি পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় বিনামূল্যে সার ও বীজ সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। আউশে প্রণোদনা প্যাকেজও অব্যাহত আছে।
গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রা উন্নয়নে তথ্যপ্রযুক্তিভিত্তিক ই-কৃষি খুলে দিয়েছে আরেক সম্ভাবনার জানালা। কৃষি তথ্য সার্ভিস দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে ২৪৫টি কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র (এআইসিসি) স্থাপন করেছে। এছাড়া ২৮ অক্টোবর ২০১৫ ইনফো-সরকার ২৫৪টি উপজেলার ২৫৪টি আইপিএম/ আইসিএম কৃষক ক্লাবকে এআইসিসিতে রূপান্তরের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এসব কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষি তথ্যকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অনলাইনে জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে মুঠোফোনের জোয়ারে ভাসছে এদেশ। মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ছাড়িয়ে গেছে। কৃষি তথ্য সার্ভিসের ১৬১২৩ নম্বরে যে কোনো মোবাইল থেকে ফোন করে নামমাত্র খরচে কৃষি, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য বিষয়ে কৃষি বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পাওয়া যাচ্ছে।
এক সময় বলা হতো ‘দুধে ভাতে বাঙালি’ কিংবা বলা হতো ‘মাছে ভাতে বাঙালি’। বর্তমান সরকার তার সুপ্রসারিত কৃষি নীতিতে শুধু দুধে ভাতে বা মাছে ভাতে সীমিত নয় পুষ্টিতে বাঙালি হিসেবে বিশ্ব দরবারে পরিচিত হতে চায়। পরিশেষে বলতেই হয়, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের যত অর্জন আছে, তার মধ্যে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি সবচেয়ে উল্লেখ করার মতো। এটা বিশ্বের যে কোনো উন্নয়নশীল দেশের জন্য উদাহরণও বটে।
কৃষিতে বাংলাদেশের আরো কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জনঃ
(১) বাংলাদেশ চাল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ অবস্থানে
(২) বাংলাদেশ সবজি উৎপাদনে বিশ্বে তৃতীয়
(৩) মাছ উৎপাদনে চতুর্থ বাংলাদেশ
(৪) ছাগল উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ বাংলাদেশ
(৫) আম উৎপাদনে সপ্তম বাংলাদেশ
(৬) আলু উৎপাদনে শীর্ষ দশ দেশের কাতারে বাংলাদেশ
(৭) ফসলের জাত উদ্ভাবনেও শীর্ষে বাংলাদেশ। এ পর্যন্ত বাংলাদেশ ধান গবেষণা
ইনস্টিটিউট (ব্রি) ও বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা)
বিজ্ঞানীরা মোট ১৩টি প্রতিকূল পরিবেশে সহিষ্ণু ধানের জাত উদ্ভাবন করেছেন।