খাদেমুল ইসলাম, বাগাতিপাড়া:
তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা এ যেন একই বৃক্ষে দুটি ফুল। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটিকে নিয়ে ভাবা যায় না। শুধু তালগাছকে নিয়ে ভাবলে, বাবুই পাখির বাসা এমনিতেই যেন চোখে ভেসে আসে। অপরদিকে বাবুই পাখির বাসাকে নিয়ে ভাবলে, তাল গাছের ছবি যেন চোখের সামনে চলে আসে। আবহমান কাল থেকেই বাংলার গ্রামাঞ্চলের মানুষের মনের মণিকোঠায় স্থান করে নিয়েছে এরা। একটি যেন অপরটির পরিপূরক।
অথচ এখন আর তেমন চোখে পড়ে না এক পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা সেই তালগাছ আর নিপুণ কারিগর বাবুই পাখির বাসা। কালের আবর্তনে আবহমান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী সেই তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা- এ দুই-ই যেন আজ আমরা হারাতে বসেছি। তালগাছ আর বাবুই পাখির বাসা নিয়ে পাঠ্যপুস্তকে কতই-না কবিতা রয়েছে। কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তালগাছকে নিয়ে লিখেছেন, তালগাছ একপায়ে দাঁড়িয়ে, সবগাছ ছাড়িয়ে, উঁকি মারে আকাশে। মনে স্বাদ, কালো মেঘ ফুঁড়ে যায়, একেবারে উড়ে যায়; কোথা পাবে পাখা সে?
অপরদিকে বাবুই পাখিকে নিয়ে কবি রজনীকান্ত সেন লিখেছেন, ‘বাবুই পাখিকে ডাকি বলিছে চড়াই, কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই, আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে, তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে ।
অথচ একসময় বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলে সারি সারি উঁচু তালগাছ দেখা যেত। আর সেই তালগাছের পাতায় পাতায় দেখা যেত বাবুই পাখির দৃষ্টিনন্দন বাসা। যা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যকে আরো ফুটিয়ে তুলতো। দেখে মনে হতো তাল গাছ যেন তার কানে দোল পড়ে আছে। কিন্তু এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন আর চোখে পড়ে না। কালের বিবর্তনে ও পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে সেই দৃষ্টিনন্দন পাখি, তার বাসা, বাসা তৈরির নৈসর্গিক দৃশ্য ও গ্রামের ঐহিত্যবাহী তালগাছ এ দুটোই আজ বিলুপ্তির পথে।
নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে শোনা যায়, একসময় যেসব গ্রামে সারিসারি তালগাছ ছিল, সেইসব তালগাছের পাতায় পাতায় মোড়ানো থাকতো বাবুই পাখির বাসা। পাশাপাশি পাখির কিচির-মিচির শব্দে গ্রামাঞ্চল মুখরিত থাকতো। সেইসব গ্রামে এখন আর তালগাছও নেই, বাবুই পাখির বাসাও নেই। ১৬-১৭ বছর আগেও গ্রামের রাস্তা-ঘাট, পুকুরপাড় ও মাঠের মধ্যে সারিসারি তালগাছ ছিল। আষাঢ় মাস আসার আগে থেকেই বাবুই পাখি বাসা বুনতে শুরু করতো। তখন কিচির-মিচির শব্দে মুখরিত থাকতো পুরো গ্রাম। এখন হাতেগোনা মাত্র কয়েকটি তালগাছ চোখে পড়ে। এখন আর মুখরিত হয়না কিচির-মিচির শব্দে গ্রামবাংলার জনপদ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, নির্বিচারে বৃক্ষনিধন, কীটনাশকের অপব্যবহার, শিকারিদের দৌরাত্ম, অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবের কারণে তালগাছ ও বাবুই পাখি বিলুপ্ত হতে বসেছে। তবে সম্পতি নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলার গালিমপুর গ্রামে কিছু বাবুই পাখিকে তালগাছে বাসা বাধতে দেখা যাচ্ছে।
এবিষয়ে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ হোসাইন মোঃ রাকিবুর রহমান জানান, জলবায়ু পরিবর্তন ও জনবসতি বাড়ায় গ্রামাঞ্চলে বড়বড় গাছপালাসহ জঙ্গল কেটে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ফলে বাবুই পাখিসহ সকল শ্রেণীর বন্যপ্রাণীর নিরাপদ আশ্রয়স্থল নষ্ট হচ্ছে। এ কারণেই মূলত গাছ ও বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে।
আরও দেখুন
চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত
নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …