নিউজ ডেস্ক:
দ্রুত এগিয়ে চলছে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালী এলাকায় নির্মাণাধীন এক হাজার ৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের ভৌত অবকাঠামোর নির্মাণকাজ। ইতোমধ্যে ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী বছরের জুনে কেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা। উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ হলে বিদ্যুতের ঘাটতি কিছুটা কমবে বলে মনে করছেন তারা।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ২০১৯ সালের ৩১ আগস্ট চীনের প্রতিষ্ঠান নোরিনকো ইন্টারন্যাশনাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড এবং বাংলাদেশের রুরাল পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের যৌথ বিনিয়োগে এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়। কলাপাড়ার ধানখালী ইউনিয়নের লোন্দা গ্রামে ৫০০ একর জমির ওপরে এটির নির্মাণকাজ চলছে। কেন্দ্রটির নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। সবকিছু ঠিক থাকলে ৬৬০ মেগাওয়াট করে দুটি ইউনিটের প্রথমটি থেকে ২০২৪ সালের জুনে এবং অপরটি থেকে অক্টোবরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আশা করছে কর্তৃপক্ষ। আগামী বছরের শুরুতে কাজ শেষ করতে দ্রুত চলছে কর্মযজ্ঞ।
প্রকল্প পরিচালক তৌফিক ইসলাম জানিয়েছেন, প্রথম ইউনিটের বয়লার, মেইন পাওয়ার হাউস, টারবাইন, জেনারেটর হল প্রভৃতি ভৌত কাঠামোর কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে। সেইসঙ্গে চিমনি, কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকক্ষ, গবেষণাগার, জ্বালানি তেল সংরক্ষণাগার, পানি সংরক্ষণাগার, ট্রান্সফরমার গ্রাইন্ড, ফ্লাই অ্যাশ সাইলো, ফুয়েল-ওয়েল পাম্প, রেইন ওয়াটার রিজার্ভার, ফায়ার স্টেশন সার্ভিস অ্যান্ড ফায়ার ফাইটিং ওয়াটার ট্যাংক, রেগুলার অ্যান্ড ইরেগুলার ওয়েস্ট ওয়াটার স্টোরেজ বেসিন, প্রশাসনিক ভবন, প্রকৌশল ভবন, মাল্টিপারপাস হল, ওয়ার্কশপ, মিনি ফায়ার স্টেশন ইত্যাদির অবকাঠামো নির্মাণকাজ প্রায় শেষ। প্রকল্প এলাকায় কয়লা লোড-আনলোডের জন্য জেটি এবং জাহাজ থেকে কয়লা আনার জন্য কনভেয়ার বেল্ট নির্মাণকাজও চলমান আছে। এ ছাড়া মেইন ট্রান্সফরমারসহ প্রকল্পের মূল যন্ত্রপাতিও স্থাপন করা হয়েছে। কিছু মালামাল চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের প্রক্রিয়ায় আছে।
আগামী বছরের জুনে কেন্দ্রের একটি ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের আশা করছেন প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা
প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মিত হচ্ছে জানিয়ে তৌফিক ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে প্রকল্পটিতে ৯৭২ জন বিদেশি এবং পাঁচ হাজার সাত জন বাংলাদেশি দিন-রাত কাজ করছেন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী বছরের জুনে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট এবং অক্টোবরে দ্বিতীয় ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনে আসবে। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ পায়রা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের সঞ্চালন লাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। এটি চালু হলে বিদ্যুৎ ঘাটতি কমবে বলে আশা করছি।’
তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘ইতোমধ্যে টারবাইনের ১০০ এবং চিমনির ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। বয়লারের স্টিল স্ট্রাকচারের কাজও শেষ পর্যায়ে। এ ছাড়া অন্যান্য কাজ চলছে দ্রুতগতিতে। সবমিলিয়ে কেন্দ্রটির ৭৫ শতাংশ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।’
কেন্দ্রটি চালু হলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার শঙ্কা নেই বলে উল্লেখ করেছেন তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী (মেকানিক্যাল) শওকত ওসমান। তিনি বলেন, ‘কেন্দ্রটিতে ব্যবহার করা হচ্ছে আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তি। ২২০ মিটার উঁচু চিমনি দিয়ে কয়েক ধাপে ফিল্টারিং হয়ে বের হবে ধোঁয়া। তাই বাতাসের সঙ্গে মিশে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার কোনও শঙ্কা নেই। কেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হলে ঘাটতি অনেকটা কমবে বলে আশা করছি আমরা।’