নিউজ ডেস্ক:
প্রায় সাতশ’ বছর আগে বারো আউলিয়ার অন্যতম শাহ মোহছেন আউলিয়ার হাত ধরে সমৃদ্ধি এসেছিল চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বটতলী এলাকায়। কথিত আছে মোহছেন আউলিয়ার প্রেমে বিভোর হয়ে মলকাবানু উপাখ্যানের নায়ক প্রখ্যাত জমিদার শেরমস্ত খাঁর জামাতা জমিদার রুস্তম আলী খান প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রুস্তম হাট। সেই থেকে রুস্তম হাট যেন দক্ষিণ চট্টগ্রামের বৃহত্তম বাণিজ্যকেন্দ্র। কর্ণফুলীর তলদেশে বাস্তবায়নাধীন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল ঘিরে দক্ষিণ চট্টগ্রামের আনোয়ারায় যখন চীনের সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন করার পরিকল্পনা, তখন আলোর ঝিলিক যেন শাহ মোহছেন আউলিয়া বাজার বা রুস্তমহাটে। ইতোমধ্যে বদলে যেতে শুরু করেছে এখানকার আশপাশের ব্যবসায়িক চিত্র। টানেল সড়কের আশপাশে ভারী শিল্প কারখানা ও বটতলী এলাকার কাছে ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প জোন করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার। স্থানীয় সূত্র জানায়, বটতলী রুস্তমহাটে বর্তমানে ১৭০০ দোকান রয়েছে। দক্ষিণ চট্টগ্রামের কোনো বাজারে এতসংখ্যক দোকান নেই। এসব দোকানে প্রতি মাসে ব্যবসায়িক লেনদেন শত কোটি টাকার বেশি। এই এলাকায় রয়েছে পাঁচটি বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা ও আউটলেট। ব্যাংকিং চ্যানেলে মাসিক লেনদেনও ৫০ কোটি টাকার কম নয়। এছাড়া মহান অলি শাহ মোহছেন আউলিয়ার মাজার ঘিরে সারা দেশ থেকে প্রতিদিন এখানে হাজারো মানুষের সমাগম হয়। আগামী ডিসেম্বরে টানেল চালু হলে পুরো এলাকাজুড়ে বড় পরিবর্তন আসবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক আবদুল মান্নান চৌধুরী জানান, টানেল ঘিরে পুরো আনোয়ারাই বদলে যাচ্ছে। আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামে এক সময় রুস্তমহাটই ছিল ভরসা। পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা এখান থেকে মালামাল কিনে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতেন। টানেল চালু হলে এই ব্যবসায় নতুন মাত্রা পাবে। তিনি বলেন, বটতলীর সঙ্গে টানেল সংযোগ সড়ক যুক্ত করার একটি পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া কেইপিজেড, চায়না ইকোনমিক জোনের পর এখন ব্যবসায়িক সম্প্রসারণ হবে বটতলীর দিকেই। টানেল থেকে এখানকার দূরত্ব মাত্র দুই কিলোমিটার। তাই ক্ষুদ্র শিল্প ও আবাসিক জোন হবে বটতলী মোহছেন আউলিয়া এলাকা। স্থানীয় সমাজকর্মী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘ছোটবেলায় যেকোনো জিনিস কেনার প্রয়োজন হলে সবাইকে মোহছেন আউলিয়া রুস্তমহাটে যেতে দেখতাম। এই বাজারের পাশ দিয়ে টানেল সড়ক, মিরসরাই থেকে টেকনাফ পর্যন্ত প্রস্তাবিত মেরিন ড্রাইভ পরিকল্পনা, ইকোনমিক জোন, কেইপিজেড সব মিলিয়ে এই এলাকাটি ফিরছে জমজমাট চেহারায়।’ বেসরকারি ইসলামী ব্যাংকের ম্যানেজার মোহাম্মদ আবদুল আজিম বলেন, আধ্যাত্মিক সাধক শাহ মোহছেন আউলিয়ার মাজারের কারণে বটতলী রুস্তমহাট সবসময় পরিচিত ছিল। টানেল চালু হওয়ার পর এই এলাকাটি ব্যবসায়িকভাবে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, টানেল চালু হলে স্বাভাবিকভাবেই এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যে অনেক বেশি পরিবর্তন আসবে। ইতোমধ্যে নতুন নতুন মার্কেট, বড় বড় কোম্পানির শোরুম, ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়েছে। এখানে দু’টি ব্যাংক তাদের শাখা ও আরও দু’টি প্রতিষ্ঠান তাদের আউটলেট চালু করেছে। স্থানীয় ব্যবসায়ী খোরশেদ আলম বলেন, অবস্থানগত কারণে বটতলী মোহছেন আউলিয়া রুস্তমহাট এলাকাটি গুরুত্বপূর্ণ। টানেল চালু হলে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্য অনেক বাড়বে। এখন থেকেই নতুন উদ্যোক্তারা চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন।