নিউজ ডেস্ক:
করোনা ভাইরাস মহামারি মোকাবিলাসহ ভবিষ্যতের দুর্যোগ সহনশীল ব্যবস্থা তৈরিতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে তিনটি অর্থায়ন চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে বাংলাদেশ সরকার। তিনটি চুক্তির আওতায় টিকাদানসহ নানা কর্মসূচিতে মোট ১ বিলিয়ন (১০৪ দশমিক ৪) ডলারের ঋণ সহায়তা দেবে দাতা সংস্থাটি। টাকার অঙ্কে যা প্রায় ৯ হাজার কোটি টাকা। সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন এবং বিশ্বব্যাংকের পক্ষে সংস্থার বাংলাদেশ ও ভুটানের জন্য নিযুক্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেম্বন চুক্তিগুলোয় স্বাক্ষর করেন। বিশ্বব্যাংকের ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) ঋণের অর্থ দেবে, যা পরিশোধে পাঁচ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছর সময় পাবে বাংলাদেশ।
এছাড়া, বিশ্বব্যাংকের দেয়া অতিরিক্ত ৫০ কোটি ডলারের অর্থায়নে কোভিড-১৯ জরুরী ব্যবস্থাপনা ও মহামারি প্রস্তুতিকরণ প্রকল্পের মাধ্যমে সাড়ে ৫ কোটি নাগরিককে টিকাদানের মাধ্যমে সুরক্ষা দিতে পারবে বাংলাদেশ। গত বুধবার বিশ্বব্যাংকের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে একথা জানানো হয়।
ওয়াশিংটন ভিত্তিক দাতা গোষ্ঠীটি জানায়, এই অর্থে বাংলাদেশ সরকার ভ্যাকসিন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ব্যবস্থার সমপ্রসারণ, বিতরণ ও টিকদান কর্মসূচিতে সহায়তা পাবে। পাশাপাশি প্রকল্পটির মাধ্যমে জাতীয় পর্যায়ে কোভিড শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসায় জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রেও সাহায্য করা হবে, বাড়তি এই সক্ষমতার ফলে ভবিষ্যতে জরুরী যেকোনো জনস্বাস্থ্য সঙ্কট মোকাবিলায় প্রস্ততি থাকবে। বিশ্বব্যাংক তাদের প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল এন্টারপ্রিনিউরশিপ (প্রাইড) প্রকল্পের আওতায় আরও ৫০ কোটি ডলার দিচ্ছে, যা সামাজিক ও পরিবেশগত মান নিশ্চিতের মাধ্যমে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি অর্থনৈতিক অঞ্চল, সফটওয়্যার পার্কে দুইশ’ কোটি ডলারের সরাসরি বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করবে।
বিশ্বব্যাংক জানায়, কোভিড-১৯ মহামারিতে জরুরি প্রতিক্রিয়ার প্রস্তুতি প্রকল্পে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থায়ন করে সংস্থাটি। এ অর্থ ৫ কোটি ৪০ লাখ মানুষকে টিকা দিতে সহায়তা করবে। এছাড়া এই অর্থ সরকারকে টিকা সংগ্রহ, স্টোরেজ সুবিধা স¤প্রসারণ এবং টিকা বিতরণে খরচ করা হবে। প্রকল্পটি কোভিড শনাক্তকরণ, প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার পাশাপাশি ভবিষ্যতে জরুরি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়নে সহায়ক হবে।
বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ ও ভুটানের কান্ট্রি ডিরেক্টর মের্সি টেম্বন বলেন, কোভিড-১৯ মহামারিটি বিশ্বজুড়ে একটি বিশাল চ্যালেঞ্জ হিসেবে অব্যাহত রয়েছে। এখনও বাংলাদেশ চ্যালেঞ্জগুলো আর্থিক এবং সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির মাধ্যমে ভালোভাবে মোকাবিলা করছে। তবে টিকা নিশ্চিত, দক্ষতা বৃদ্ধি ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর ওপর অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার নির্ভর করছে। তিনি বলেন, এ প্রকল্পগুলো বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশকে টিকা দিতে সহায়তা করবে। এছাড়া বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে প্রত্যক্ষ বেসরকারি বিনিয়োগ আকৃষ্ট এবং প্রসারিত করার পাশাপাশি ই-জিপি ব্যবস্থাকে উন্নীত করতে সহায়তা করবে।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মিরসরাই-ফেনীতে দ্বিতীয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগর এবং ঢাকার জনতা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে প্রথম ডিজিটাল উদ্যোক্তা কেন্দ্র স্থাপন এবং এই ভবনকে সবুজে রূপান্তরিত করতে প্রকল্পটি সহায়তা করবে। এর ফলে আইটি খাতে আরও বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি দেশি-বিদেশি বেসরকারি বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার মাধ্যমে প্রকল্পটি অর্থনীতিকে কোভিড-১৯ এর প্রভাব থেকে প্রত্যাবর্তন করতে সহায়তা করবে।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন বলেন, বিশ্বব্যাংকের এ অর্থায়নের ফলে দেশের জনগণকে টিকা দেয়া সহজ হবে। এটি অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে এবং স্থিতিশীল রাখতে সহযোগিতা করবে। ডিজিটালাইজিং বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ ও পাবলিক প্রকিউরমেন্ট প্রজেক্টের (ডিআইএমএপিপি) ৪০ মিলিয়ন ডলারের অতিরিক্ত অর্থায়ন কোভিড-১৯ চ্যালেঞ্জগুলোর পাবলিক ক্রয় সংস্থায় বাংলাদেশকে ই-জিপি স¤প্রসারণে সহায়তা করবে। বিশ্বব্যাংকের এই ঋণ আগামী ৩০ বছরের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের আইডিএ প্রোগ্রামের সবচেয়ে বেশি অর্থ রয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় মোট ১৪ বিলিয়ন ডলার।
এর আগে গত বছরের ২৫ জুন তিনটি প্রকল্পের জন্য বিশ্বব্যাংক এ অর্থ অনুমোদন করেছে। ওই সময় বাংলাদেশ ও ভুটানে বিশ্বব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর মার্সি টেমবন বলেন, এটি নজিরবিহীন এক পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে অসাধারণ এক সাড়া। কোভিড-১৯ মহামারি বাংলাদেশের জনগণের জীবিকার উপায়সহ দারিদ্র্য বিমোচন ও সমৃদ্ধি অর্জনের বিশাল সফলতাকে বিপন্ন করে তুলেছে। এমন অবস্থায় এসব প্রকল্পের সুবাদে মানসম্পন্ন অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে (এসইজেড) সরাসরি বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি ও প্রযুক্তিনির্ভর অর্থনৈতিক কর্মকান্ড এ দেশের মানুষজন ও অর্থনীতিকে ঘুরে দাঁড়াতে সহায়তা করবে। বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ৫০ কোটি ডলারের ‘প্রাইভেট ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ডিজিটাল এন্ট্রাপ্রেনিওরশিপ (প্রাইড) প্রজেক্ট’ শুরু হবে। সংস্থাটি জানায়, ২৯ কোটি ৫০ লাখ ডলার ব্যবহার হবে ‘এনহ্যান্সিং ডিজিটাল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড ইকোনসি’ (ইডিজিই) শীর্ষক প্রকল্পে। এর আওতায় সকল সরকারি সংস্থায় সমন্বিত ও ক্লাউড-কম্পিউটিং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম স্থাপন ও সাইবার নিরাপত্তা জোরদার করা হবে। বিশ্বব্যাংক জানায়, তাদের দেওয়া অর্থে ২৫ কোটি ডলারের ‘সেকেন্ড প্রোগ্রামেটিক জবস ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট’ নামে আরেকটি প্রকল্প নেয়া হবে। এছাড়া কোভিড-১৯ মহামারির ধাক্কা সামলে উঠতে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলের নিম্ন-আয়ের তরুণ জনগোষ্ঠী ও বিদেশফেরত প্রবাসী কর্মীদের সহায়তার জন্য গত মার্চে ২০ কোটি ডলারের ঋণ অনুমোদন করেছে বিশ্বব্যাংক। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় এক হাজার ৭০০ কোটি টাকা।
চলতি মাসের ৬ এপ্রিল বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সভায় বাজেট বাস্তবায়নে সহযোগিতার জন্য বিশ্বব্যাংকের কাছে ৫০০ মিলিয়ন ডলার ঋণ সহায়তা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।