করোনা ভাইরাস ও বাংলাদেশের পরিস্হিতি
সুমনা আহমেদ
করোনা ভাইরাস নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। আমি লক্ষ্য করছি একদল একেবারে প্যানিক মোডে চলে গেছে আবার আরেকদল এটাকে কোন পাত্তাই দিচ্ছেনা। আর কিছু মানুষ আছে যারা আমার মতো। যারা পরিস্হিতির গুরুত্ব এবং ভয়াবহতা বুঝতে পারছি এবং সাবধানতা অবলম্বন করছি। হ্যাঁ, আজ আমেরিকাতে National Emergency ঘোষনা করা হয়েছে।
অনেক স্কুল, কলেজ বন্ধ করে অনলাইন এ পাঠদান শুরু হয়েছে। It’s always better safe than sorry! আমেরিকার কথা আজ থাক, অন্যদিন লিখবো। আজকে লিখতে বসেছি বাংলাদেশকে নিয়ে। ফেসবুকে বাংলাদেশের অনেকের পোষ্ট পড়ে বা দেখে খুব ভয় লাগছে। অনেকেই এটাকে কোন গুরুত্বই দিচ্ছেনা। কেউ বা বলছে, কিছুই হবেনা। মরতে তে একদিন হবেই…
অথবা কেউ বলছে, রাখে আল্লাহ মারে কে? অবশ্যই সবাইকেই একদিন মরতে হবে। We aren’t immortal! আর আল্লাহর উপরে তো আস্থা রাখতে হবে কিন্তু তাই বলে নিজে কোন precaution না নিয়ে শুধু ভরসা রাখলে চলবে?
“Indeed, Allah will not change the condition of a people until they change what is in themselves.” (Quran 13:11)
বাংলাদেশ একটি খুবই জনবসতিপূর্ণ দেশ। যেখানে পারসোনাল হাইজিন নিয়ে এখনো mass population সচেতন না। সেখানে একবার যদি ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ে তার ভয়াবহতা কল্পনাও করতে চাইনা।
এটা নিয়ে প্যানিক হওয়ার দরকার নাই আবার পুরোপুরি দায়সারা ভাব করারো আর সময় নাই। This is a serious issue!
এই প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়ে গেল…
একবার কোন এক শহরে খুব বন্যা হলো। রেডিও, টেলিভিশন সব জায়গায় সরকারীভাবে ঘোষনা দিয়ে সবাইকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে চলে যেতে বলা হলো। সবাই তাদের পরিবার নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলেও গেল। এর মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির খুব অবনতি ঘটলো। কিছু মানুষ শহরে আটকা পরে গেল। সিটির নিরাপত্তা কর্মীরা সব বাড়ীতে বাড়ীতে গিয়ে যারা আটকে পড়েছিল তাদেরকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় নিয়ে গেল। বন্যার পানি যখন আরো বেড়ে গেল তখন ফায়ার সার্ভিস হেলিকপ্টার নিয়ে সামান্য যে দু একজন যারা তখনও আটকে পড়েছিল তাদেরকেও উদ্ধার করলো।
যাইহোক, আসল গল্পে আসি। সেই শহরে একজন খুব ধর্মান্ধ ব্যক্তি বাস করতো। সে কোন নিরাপদ আশ্রয়ে গেলনা… নিরাপত্তা কর্মী, ফায়ার সার্ভিস সবাইকে ফিরিয়ে দিল। তার বিশ্বাস তাকে সৃষ্টিকর্তা নিজে হাতে এসে রক্ষা করবেন। যা হবার তাই হলো.. পানিতে ডুবে তার মৃত্যু হলো। মৃত্যুর পরে সে যখন স্রষ্টার সামনে হাজির হলো, তখন সে অভিযোগ করলো যে, সারা জীবন সে অন্ধের মতো স্রষ্টাকে বিশ্বাস করেছে কিন্তু আজ যখন তার সবচেয়ে বড় বিপদ হলো তখন স্রষ্টা তাকে সাহায্য করলেননা? স্রষ্টা সব শুনলেন। সবশেষে বললেন, ‘হে আমার বিশ্বাসী, আমি তোমাকে অনেকবার সাহায্য পাঠিয়েছি কিন্তু তুমি তা প্রত্যাখ্যান করেছো।
শেষ পর্যন্ত সব শেষে তোমাকে আমি ফায়ার সার্ভিসের হেলিকপ্টার দিয়েও উদ্ধার করতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু তুমি সেটাও প্রত্যাখ্যান করেছো। তুমি আমার খুব প্রিয় আর তাই আমি সবকিছু দিয়ে তোমাকে সাহায্য করতে চেষ্টা করেছি কিন্তু তুমি তো আমার সাহায্য গ্রহন করো নাই।’ গল্পের moral হচ্ছে সৃস্টিকর্তা তো literally নিজে এসে তো আমাদেরকে সাহায্য করবেন না।
উনি আমাদেরকে জ্ঞান দিয়েছেন, বিবেক দিয়েছেন, বিচার বুদ্ধি দিয়েছেন আর সর্বপরি, সৃষ্টির সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। তাই আমাদের নিজেদের চোখ কান খোলা রেখে নিজের সর্বোচ্চ দিয়ে এবং সবরকম সতর্কতা অবলম্বন করে বিপদ আপদ, রোগব্যাধী থেকে রক্ষা পেতে চেষ্টা করতে হবে।
বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা কোরোনাভাইরাসকে Pandemic অর্থাৎ, বিশ্বব্যাপী মহামারী হিসেবে ঘোষনা দিয়েছে।
বিষয়টার গুরুত্ব অনুধাবন করুন। তাদের উপদেশ গুলো মেনে চলুন। পরিস্কার পরিছন্নতা বজায় রাখুন, নিজে সুস্থ থাকুন, আশেপাশের সবাইকে সুস্থ থাকতে সাহায্য করুন। পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানেরও অঙ্গ।
জয় বাংলা।
সুমনা আহমেদ, প্রবাসী লেখক