নিউজ ডেস্ক:
- আত্মনির্ভরশীল দেশ গড়ার লক্ষ্য অর্থমন্ত্রীর
- অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বিপুল ভর্তুকি
- দেশীয় শিল্পে উৎসাহ, আমদানি নিরুৎসাহিত
- রাজস্ব আয় ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা
- বাজেট ঘাটতি ২ লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা
- এনবিআরকে টার্গেট ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা
- মূল্যস্ফীতি ৫.৬ শতাংশ
দরিদ্র মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশ করেছেন। পাশাপাশি তিনি দেশীয় শিল্পকে উৎসাহ প্রদান করেছেন, যাতে আমদানিযোগ্য পণ্য দেশেই উৎপাদন করা যায়। অর্থাৎ বাংলাদেশকে একটি আত্মনির্ভরশীল দেশে রূপান্তরের জন্য তিনি তার নতুন বাজেটে আমদানিকে নিরুৎসাহিত করেছেন। প্রস্তাবিত বাজেটে অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরে মোট ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা ব্যয়ের পরিকল্পনা করেছেন, যা জিডিপির ১৫.২ শতাংশ। এই বাজেট প্রণয়নকালে অর্থমন্ত্রী রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সম্ভাব্য ঝুঁকি এবং আমদানিজনিত মূল্যস্ফীতি বিবেচনায় নিয়েছেন। তার এই চতুর্থ বাজেটে সে অনুযায়ী তিনি কৌশলও নির্ধারণ করেছেন, যাতে এ সবের প্রভাব থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করা এবং অর্থনীতি গতিশীল রাখা যায়
অর্থমন্ত্রী বাংলাদেশকে একটি সুখী সমৃদ্ধ উন্নত বাংলাদেশে পরিণত করতে চান। সে লক্ষ্যেই তিনি কোভিড-১৯ পরবর্তী বাংলাদেশকে আবার উন্নয়নের ধারায় নিয়ে যেতে চাইছেন আগামী বাজেটের মাধ্যমে। যাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অন্তর মন প্রথিত সোনার বাংলার সুবর্ণ রেখাটি বাংলাদেশ স্পর্শ করতে পারে। তাইতো ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে মূল্যস্ফীতি, কৃষি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, মানবসম্পদ উন্নয়ন, অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বৃদ্ধি, রফতানি বৃদ্ধি ও রফতানি বহুমুখীকরণ, কর্মসৃজন ও পল্লী উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবেলা এবং সামাজিক নিরাপত্তা কার্যক্রমের আওতা সম্প্রসারণে অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে।
‘কোভিড-১৯ অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল তার এবারের বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেছেন। মহামারী করোনার প্রভাব কমে যাওয়ায় অর্থমন্ত্রী চাইছেন দেশের অর্থনীতিকে আবার আগের মতো উন্নয়নের মহাসড়কে নিয়ে যেতে। সে লক্ষ্যেই অর্থমন্ত্রী তার নতুন বছরের বাজেট প্রণয়ন ও তা বাস্তবায়নের কর্মকৌশল গ্রহণ করেছেন। এ সময় অর্থমন্ত্রী দেশের গত ১৩ বছরের অগ্রগতির পেছনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনর অবদানকে তার বাজেট বক্তৃতায় উল্লেখ করেন। এ সময় তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বে ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ অভাবনীয় স্বর্ণালি এক অধ্যায় পার করছে। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে শান্তি, প্রগতি আর সম্প্রীতির এক মিলনমেলায়। একের পর এক রচিত হচ্ছে উন্নয়নের সাফল্যগাথা। বাংলাদেশ আজ বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য অনুকরণীয় উন্নয়ন স্বপ্নদ্রষ্টা। তাঁর নেতৃত্বে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে বাংলাদেশ।
তবে আগামী অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ বাজারের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকেই অর্থমন্ত্রী বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে মনে করছেন। এ প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তব্যে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম বাড়ার কারণে বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়টি পণ্যের (জ্বালানি তেল, এলএনজি, গম, রাসায়নিক সার, পাম অয়েল, সয়াবিন তেল, কয়লা, ভুট্টা ও চাল) একই পরিমাণ আমদানি করতে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে সম্ভাব্য অতিরিক্ত ব্যয় হিসেবে ৮ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার পরিশোধ করতে হবে। এসব পণ্যের বাইরেও আন্তর্জাতিক বাজারে শিল্পের কাঁচামাল ও অন্যান্য ভোগ্যপণ্যের দাম এবং আন্তর্জাতিক পরিবহন খরচ বেড়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারে আমদানিতে মুদ্রাস্ফীতির চাপ অনুভূত হচ্ছে।
তিনি বলেন, সরকার দেশে বর্তমানে বিরাজমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বৃদ্ধির মাধ্যমে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কর্মসংস্থান বাড়ানোসহ সামষ্টিক অর্থনীতির অন্যান্য চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে চায়। তিনি আরও বলেন, দেশের স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী যাতে কম দামে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে পারে সে জন্য সরকার ন্যায্যমূল্যে খোলাবাজারে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করছে। শহর অঞ্চলে ওএমএসের আওতায় চাল ও গম বিক্রয় অব্যাহত রয়েছে। রমজানে ১ কোটি পরিবারকে কার্ডের মাধ্যমে ৬টি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করা হয়েছে। এছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর একটা উল্লেখযোগ্য অংশকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা হয়েছে, যাদের কাছে ডিজিটাল ব্যবস্থায় নগদ অর্থ দেয়ার সক্ষমতা সরকারের রয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর এবং জেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মজুদকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার কারণে আগামী অর্থবছরে জ্বালানি তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, সার ও বিদ্যুত খাতে সরকারের যে ঘাটতি হবে তা আমরা মূল্য বাড়িয়ে ভোক্তা পর্যায়ে শতভাগ চাপিয়ে দেব না।
অর্থনীতি চাঙ্গা করতে অর্থমন্ত্রী বিপুল ভর্তুকির আশ্রয় নিয়েছেন। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ পরিস্থিতিতে গোটা বিশ্ব এখন অর্থনৈতিক সঙ্কটের মুখে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে সেই সঙ্কট কাটিয়ে নতুন উদ্দীপনা আনতে কৌশল হিসেবে বেছে নিয়েছেন ভর্তুকি, প্রণোদনা এবং নগদ ঋণ খাতে ব্যয় বাড়ানোর উদ্যোগকে। তার লক্ষ্য এর মাধ্যমে চলমান অর্থনীতি, উদ্যোক্তা-ব্যবসায়ী তথা ক্রেতা-ভোক্তার সক্ষমতার উন্নয়ন ঘটবে।
আগামী অর্থবছরে ৬ লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকার মধ্যে মূল খরচ হচ্ছে পরিচালন ব্যয়। বাজেটে পরিচালন ও অন্যান্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৩১ হাজার ৯৯৮ কোটি টাকা এবং উন্নয়ন ব্যয় হচ্ছে ২ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬ কোটি টাকা। ফলে প্রস্তাবিত বাজেটে মোট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াবে দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা মোট জিডিপির ৫ দশমিক ৫ শতাংশ। গত অর্থ বছরের মূল বাজেটে ঘাটতির এ হার ছিল ৬ দশমিক ২ শতাংশ। গত অর্থবছরের বাজেট সংশোধনের পর ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ১ শতাংশ। অনুদানসহ নতুন অর্থবছরের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৪১ হাজর ৭৯৩ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণ ও বৈদেশিক উৎস হতে এ ঘাটতি মেটানো হবে। এর মধ্যে বৈদেশিক ঋণ ৯৫ হাজার ৪৫৮ কোটি টাকা এবং অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ হচ্ছে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩৩৫ কোটি টাকা। অভ্যন্তরীণ ঋণের মধ্যে ব্যাংক ব্যবস্থা থেকেই নেয়া হবে এক লাখ ৬ হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এছাড়া ব্যাংক বহির্ভূত ঋণ ধরা হয়েছে ৪০ হাজার ১ কোটি টাকা। যার মধ্যে সঞ্চয়পত্র থেকে নেয়া হবে ৩৫ হাজার কোটি টাকা এবং ৫ হাজার ১ কোটি টাকা অন্যান্য খাত থেকে নেয়া হবে। ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে এই বিশাল টাকা ঋণ গ্রহণের ফলে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে এবং নগদ অর্থে টান পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে
প্রস্তাবিত বাজেটের খরচ মেটাতে অর্থমন্ত্রী মোট রাজস্ব প্রাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন ৪ লাখ ৩৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কর থেকে পাওয়া যাবে ৩ লাখ ৮৮ হাজার কোটি টাকা। কর থেকে অর্জিতব্য আয়ের মধ্যে সিংহভাগই আসবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকে। বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়ের লক্ষ্য দেয়া হয়েছে ৩ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা এবং রাজস্ব বোর্ড বহির্ভূত খাত থেকে সরকারের আয় হবে ১৮ হাজার কোটি টাকা। এছাড়া কর ব্যতীত প্রাপ্তির মধ্যে রয়েছে ৪৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক অনুদান প্রাপ্তি ধরা হয়েছে ৩ হাজার ২৭১ কোটি টাকা। তবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয় নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। কোন অর্থবছরেই জাতীয় রাজস্ব বোর্ড তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারে না। ফলে শেষ মুহূর্তে গিয়ে লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হয়, সেটিও শেষ পর্যন্ত অর্জিত হয় না। তবে এবারও এই উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা কতটা পূরণ হবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।
অর্থমন্ত্রী অবশ্য এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আশাবাদী। তিনি বলছেন, যুগোপযোগী করনীতি, দক্ষ কর ব্যবস্থাপনা এবং ব্যবসায়ীসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২২-২৩ অর্থবছরে প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে।
নতুন অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭.৫ শতাংশ। কোভিড-১৯ এর প্রলম্বিত প্রভাব, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ইত্যাদি বিবেচনায় নিয়ে এই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন বলে অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন।
বর্তমান সময়ে উচ্চ মূল্যের যুগে অর্থমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের জন্য মূল্যস্ফীতির লক্ষ্য নির্ধারণ করেছেন ৫.৬ শতাংশ। তবে আগামী অর্থবছরে অর্থমন্ত্রী কিভাবে এই নিম্ন মূল্যস্ফীতি ধরে রাখবেন তার একটি ব্যাখ্যা বাজেট বক্তৃতায় দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের মূল কৌশল হবে বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বাড়ানো। সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনা কার্যক্রমসহ খাতভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ সুচিন্তিতভাবে নির্ধারণ করেছে।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে অসঙ্গতি রোধের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বদ্ধপরিকর। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মূলত বহিস্থ এবং কিছু অভ্যন্তরীণ কারণে সম্প্রতি কিছুটা বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির বৈশ্বিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাণিজ্য সহযোগীদের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, টাকার অবচিতি, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ- যে বিষয়গুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
অভ্যন্তরীণ কারণগুলো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, যা অর্থনীতিকে পূর্ণ কর্মসংস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য যেন অস্থিতিশীল না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়িয়েছে। দেশের স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠী যাতে কম মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে পারে সে জন্য টিসিবির মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও জেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মজুদকারীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি আরও বলনে, মূল্যস্ফীতি যাতে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং বেসরকারী খাতে প্রয়োজনীয় ঋণ প্রবাহ যেন অব্যাহত থাকে সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ বজায় রাখছে। অর্থমন্ত্রী আশা করছেন এসব পদক্ষেপের কারণে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে।
আগামী ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটে সরকারী ভর্তুকির পরিমাণ বাড়ছে। এই খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটের চেয়ে ভর্তুকির পরিমাণ ১৫ হাজার ৯২০ কোটি টাকা বেশি। এটিকে তিনি আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যবস্থাপনায় একটি চ্যালেঞ্জ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সরকারের ভর্তুকি ব্যবস্থাপনার ওপরও চাপ সৃষ্টি হয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের প্রাথমিক প্রাক্কলনে ব্যয় এবার আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ হাজার ৭৪৫ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১ দশমিক ৯০ শতাংশ। এই ব্যয় আরও বাড়তে পারে উল্লেখ করে আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘আন্তর্জাতিক বাজারে তেল, গ্যাস ও সারের মূল্যের সাম্প্রতিক যে গতি-প্রকৃতি, তাতে ভর্তুকি ব্যয় আরও ১৫-২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে, যা আগামী অর্থবছরের বাজেট ব্যবস্থাপনার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ।
সংশোধিত বাজেট ॥ সার্বিক রাজস্ব আহরণ ও ব্যয়ের অগ্রগতি বিবেচনায় অর্থমন্ত্রী চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট সংশোধন করেছেন। সংশোধিত বাজেটে মোট সরকারী ব্যয়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ৯৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। যা মূল বাজেটে ছিল ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা। অর্থাৎ মূল বাজেট থেকে ব্যয় হ্রাস পেয়েছে ১০ হাজার ১৮১ কোটি টাকা। তবে লক্ষণীয় বিষয় হলো এবারই প্রথম রাজস্ব আহরণের কোন লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করা হয়নি। মোট রাজস্ব আহরণ চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্থাৎ ৩ লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের লক্ষ্যমাত্রায়ও কোন কাটছাঁট করা হয়নি। অর্থাৎ মূল লক্ষ্যমাত্রা ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকায়ই অপরিবর্তিত রয়েছে। এখন দেখার বিষয়, অর্থবছর শেষে এ লক্ষ্যমাত্রা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয় কিনা?