নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনা শুরুর পর ব্যাপক ধাক্কা সামলে ধীরে ধীরে স্বাভাবিক চেহারায় ফেরছে রপ্তানি। চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রসহ শীর্ষ ২০ দেশের ১৪টিতেই রপ্তানি বেড়েছে। কমেছে ৬টিতে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব অনুযায়ী, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিন মাসে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের আগের একই সময়ের চেয়ে প্রায় সাড়ে ৮ শতাংশ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ১৪ কোটি মার্কিন ডলার যা স্থানীয় মুদ্রায় ১ হাজার ১৯০ কোটি টাকা।
বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক। মোট রপ্তানির প্রায় ৮৪ শতাংশই আসে এ খাত থেকে। আবার রপ্তানির প্রায় ৮০ শতাংই যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৮টি দেশ ও উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে।
করোনা শুরু হওয়ার পর গত মার্চ থেকে বাংলাদেশের রপ্তানি কমতে থাকে। ইউরোপ ও আমেরিকায় করোনার প্রকোপ বাড়তে থাকায় সেখানে লকডাউনের কারণে মানুষের যাতায়াত একেবারেই কমে যায়। খাবার ও ওষুধের বাইরে অন্যান্য দোকানপাট কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। ফলে সেখানে বিক্রি না হওয়ায় রপ্তানি কমে যায় ব্যাপকভাবে। তবে মে থেকে ধীরে ধীরে সেখানে ব্যবসা খুলতে থাকলে বাংলাদেশের রপ্তানি ফের বাড়তে থাকে।
গত জুন থেকে রপ্তানিতে দারুণভাবে ফিরে আসে বাংলাদেশ।
রপ্তানিকারকরা বলছেন, আগামী দুই মাসেও ভালো রপ্তানির সম্ভাবনা দেখছেন তারা। অপেক্ষাকৃত কম দামের পোশাকের চাহিদা বাড়ায় এই সুযোগ নিতে পারছে বাংলাদেশ। ক্রয়াদেশ বাড়তে থাকায় শুরুতে কিছু শ্রমিক ছাঁটাই করলেও নতুন করে ফের শ্রমিক চাইছেন তারা। বেশ কয়েকজন উদ্যোক্তার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক রাজধানীর মিরপুরের এডাম্স অ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুল হক মুকুল ইত্তেফাককে বলেন, ক্রয়াদেশ বাড়তে থাকায় এখন তার শ্রমিকের প্রয়োজন হয়েছে। তিনি শ্রমিক চেয়ে বিজ্ঞপ্তি টানিয়েছেন। একই তথ্য জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা গ্রুপের প্রধান ফজলে শামীম এহসান। ইত্তেফাককে তিনি জানান, বহু রপ্তানিকারকই এখন নতুন করে শ্রমিক চাইছেন। তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত ভালো রপ্তানির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এর পর দুই তিন মাস হয়তো কিছুটা কমতে পারে। তবে তিনি বলেন, ক্রেতারা পোশাকের দর কমিয়ে দিচ্ছেন বলে অভিযোগ তার।
যুক্তরাষ্ট্রে গত তিন মাসে বাংলাদেশের রপ্তানি হয়েছে ১৮০ কোটি ১৮ লাখ ডলারের পণ্য। ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে দেশটিতে রপ্তানি হয়েছিল ১৬৬ কোটি ১৭ লাখ ডলারের।
যুক্তরাষ্ট্রের পরে বাংলাদেশের দ্বিতীয় প্রধান রপ্তানি গন্তব্য জার্মানি। দেশটিতে গত তিন মাসে রপ্তানি হয়েছে ১৫৩ কোটি ৪৬ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ পণ্য। আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে রপ্তানি বেড়েছে ৩ দশমিক ৫৪ শতাংশ। শীর্ষ ২০ রপ্তানি গন্তব্যের মধ্যে বাদবাকি দেশগুলো হলো যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, পোল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, জাপান, কানাডা, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ডেনমার্ক, বেলজিয়াম, সুইডেন, তুরস্ক, চীন, রাশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। এর মধ্যে রপ্তানি কমেছে যুক্তরাজ্য, স্পেন, জাপান, ভারত, বেলজিয়াম ও চীনে। বাদবাকি দেশগুলোতে রপ্তানি বেড়েছে।