নিউজ ডেস্ক:
প্রায় দেড় বছর ধরে চলমান করোনা মহামারির ধাক্কা সামলে চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে আবার গতি ফেরার পূর্বাভাস দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
ব্যাংক ও আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার গবেষণা বিভাগ বলেছে, যদি করোনা পরিস্থিতি বর্তমানের পর্যায়েও থাকে, তার পরেও এবার প্রবৃদ্ধি অর্জিত হতে পারে ৬ দশমিক ১০ শতাংশ। আর যদি করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হয়, তাহলে প্রবৃদ্ধি আরও বেড়ে হতে পারে ৬ দশমিক ৬৮ শতাংশের মধ্যে। পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই বাড়তি প্রবৃদ্ধি হবে শিল্প, সেবা ও কৃষি খাত আরও করবে ধরে নিয়ে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এই পূর্বাভাস সরকারের লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি। এবার সরকার ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে।
২০০৯ সাল থেকেই বাংলাদেশ উচ্চ প্রবৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ধাক্কা খায় করোনার প্রথম বছরে। ২০২০ সালের মার্চে করোনা আঘাত হানার পর ৬৬ দিনের সাধারণ ছুটিতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ছিল স্থবির। আর এই আঘাত কতটা ছিল, তা প্রকাশ পেয়েছে সম্প্রতি।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে ২০১৯-২০ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয় ৩ দশমিক ৫১ শতাংশ যা গত দুই দশকে সর্বনিম্ন।
২০২০-২১ অর্থবছরের চূড়ান্ত হিসাব এখনও প্রকাশ পায়নি। তবে ৯ মাসের তথ্য হিসাব করে পরিসংখ্যান ব্যুরো প্রাথমিক হিসাবে বলেছে, গত অর্থবছরে ৫ দশমিক ৪৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে। তবে চূড়ান্ত হিসাব এখনও জানানো হয়নি।
অথচ করোনা আঘাত হানার আগে বাংলাদেশ দুই অঙ্কের প্রবৃদ্ধির দিকে ছুটছিল। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়; যা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি।
চলতি অর্থবছরের দুই মাস পেরিয়েছে। এর বেশিরভাগ সময়ই শাটডাউন নামে পরিচিত বিধিনিষেধের কারণে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের গতি ছিল সীমিত। তবে ১১ আগস্ট থেকে বিধিনিষেধ শিথিল হতে শুরু করলে আবার গতি পেতে শুরু করে অর্থনীতি।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গবেষণা বিভাগ প্রবৃদ্ধি নিয়ে তাদের গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
‘রিসেন্ট প্যাকটিসেস অফ ফোরকাস্টিং রিয়েল গ্রোস ডমেসস্টিক প্রডাক্ট (জিডিপি) অ্যান্ড ইনফ্লেশন ইন বাংলাদেশ ব্যাংক’ শিরোনামে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘গত বছরের মার্চে দেশে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর থেকেই অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু করে। পরে তা মাহামারির আকার ধারণ করে। প্রথম ঢেউয়ের পর দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। তবে, পরিস্থিতি দিন দিন উন্নতি হচ্ছে।’
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘মহামারির মধ্যেই দেশে উৎপাদন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। মাঝে লকডাউনের কারণে বেশ ব্যাহত হয়েছিল। এখন করোনার মধ্যেই পুরোদমে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলছে। শিল্প, সেবা ও কৃষি খাতে গতি ফিরে এসেছে। আমদানি বাড়ছে। রপ্তানি আয়ে গতি ফিরে এসেছে। প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের গতিও ভালো।’
সবমিলিয়ে এই তিন খাতেই (শিল্প, সেবা ও কৃষি) আগের দুই অর্থবছরের চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে বলে আশা করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
গবেষণা দলের প্রধান বাংলাদেশ ব্যাংকের রিসার্চ ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক সায়েরা ইউনুছ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখেই আমরা এই গবেষণা করেছি। আমাদের রপ্তানির প্রধান বাজার ইউরোপ-আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসছে। বাংলাদেশেও উন্নতি হচ্ছে।
‘যদি দেশে তৃতীয় ঢেউ না আসে, বিশ্ব পরিস্থিতি এখনকার মতো স্বাভাবিক থাকে, তাহলে চলতি অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৮ শতাংশে পৌঁছতে পারে। আর যদি অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন যেমন চলছে, সেভাবেও চলে তাহলে ৬ দশমিক ১ শতাংশ অর্জিত হবে।’
অর্থনীতির গবেষক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি মনে করি, প্রবৃদ্ধির দিকে না তাকিয়ে করোনা মোকাবিলার দিকেই এখন সরকারের সবচেয়ে বেশি নজর দেয়া উচিত। দেশের বেশিরভাগ মানুষ যাতে অল্প সময়ের মধ্যে টিকা পায় সেদিকেই সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। সরকার চেষ্টা করছে। মাঝে একটু সমস্যা হলেও এখন ঠিকঠাক মতোই হচ্ছে বলে মনে হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা চলে গেলে বা স্বাভাবিক হলে প্রবৃদ্ধি এমনিতেই বাড়বে। আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে। একটু সময় লাগবে আর কি?’
মূল্যস্ফীতি ৫.৪১ থেকে ৫.৫৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে
বাজেটে গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৩ শতাংশে আটকে রাখার লক্ষ্য ধরেছে সরকার। বাংলাদেশ ব্যাংক যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তাতে অবশ্য এর চেয়ে খানিকটা বেশি হবে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে মূল্যস্ফীতির হার ৫.৪১ থেকে ৫.৫৬ শতাংশের মধ্যে থাকবে।