সায়েদুল ইসলাম, বিবিসি বাংলা, ঢাকা
বিশ্বে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে অনেক দেশেই বিভিন্ন মাত্রার ‘লকডাউন’ চলছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাবে বিশ্বের কমপক্ষে ৮২টি দেশে সম্পূর্ণ বা আংশিক লকডাউন কার্যকর রয়েছে।
লকডাউনের ফলে এসব দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, আর্থিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে রয়েছে। এই তালিকায় রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের মতো দেশগুলো থেকে শুরু করে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ ।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এর মধ্যেই পূর্বাভাস দিয়েছে, সারা বিশ্বে সাড়ে ১৯ কোটি মানুষ তাদের পূর্ণকালীন চাকরি হারাতে যাচ্ছে।
মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া এবং ইউরোপের অনেক দেশে বাংলাদেশের বিশাল শ্রমবাজার রয়েছে। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি কীভাবে এই শ্রমবাজারের ওপর প্রভাব ফেলছে?
কাজ নেই, খাবার নেই, চাকরি নেই
ওমান থেকে আবু জাফর নামের একজন বাংলাদেশি শ্রমিক বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “লকডাউন শুরুর পরেই মালিক জানিয়ে দিয়েছে, তাদের আর লোক লাগবে না, আমাদের দেশে যেতে বলেছে। অনেক টাকা খরচ করে গতবছর মাত্র এই দেশে এসেছি। এখনো তো দেনাও শোধ হয়নি।”
এখন কি করবেন বুঝতে পারছেন না আবু জাফর।
সৌদি আরবে ফ্রি ভিসায় গিয়েছিলেন আবু হোসেন। তিনি জানাচ্ছেন, লকডাউন শুরু হওয়ার পর থেকেই তার কোন কাজ নেই, তাই কোন আয়ও নেই। এই মাসে পরিবারের কাছে কোন টাকাপয়সা পাঠাতে পারেননি।
“এখানে অবস্থা খারাপ দেখতেছি। অনেক মানুষের কাজ নেই। অনেক কোম্পানি লোক ছাটাই করতেছে। এখন যে আমরা কিভাবে চলবো, তাই বুঝতে পারছি না।” ছবির কপিরাইট Getty Images Image caption মধ্যপ্রাচ্যে নির্মাণ খাতে কাজ করেন এশিয়ার বিভিন্ন দেশের শ্রমিকরা
শুধু মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় না, ইতালি, ফ্রান্স, সাইপ্রাস, স্পেনের মতো ইউরোপের দেশগুলোয় থাকা অনেক অবৈধ বাংলাদেশি শ্রমিক মানবেতর অবস্থায় পড়েছেন চলমান লকউনে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে যাওয়া শ্রমিকরাও ছাটাইয়ের শিকার হচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার বাংলাদেশি সাংবাদিকরা।
ইতালির ভেনিসে একটি আবাসিক হোটেলের মালিক আবেগ আল মামুন, যার প্রতিষ্ঠানে পাঁচজন বাংলাদেশি চাকরি করেন। কিন্তু লকডাউনের কারণে তার প্রতিষ্ঠান পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে।
আবেগ আল মামুন বিবিসি বাংলাকে বলছেন, “এখানে সরকার কর্মীদের জন্য ৮০ শতাংশ বেতন দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। বাকি ২০ শতাংশ মালিকের দেয়ার কথা। অনেক মালিক সেটাও দিতে পারছেন না। যাদের সর্বশেষ কোন চাকরি ছিল না বা চুক্তিহীন, তারা এরকম কোন সুবিধা পাচ্ছেন না।”
“ইতালিতে প্রায় একলক্ষ অবৈধ বাংলাদেশি আছে,যারা নানারকম ব্যবসা বাণিজ্য বা চাকরি করতো। লকডাউন শুরু হওয়ার পর তাদের কোনরকম কাজ নেই, আয় নেই।”
“যারা ব্যবসা বাণিজ্য করেন, তাদের ব্যবসা নেই, ফলে তারাও অনেকে আর কর্মীদের রাখতে পারবেন না। ফলে বৈধ বাংলাদেশিরাও বেকার হয়ে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে।”
তিনি জানাচ্ছেন, ফ্রান্স বা স্পেনেও যেসব বাংলাদেশি ছোটখাটো ব্যবসা বা চাকরি করেন, তাদের অবস্থাও একই রকম।
মালয়েশিয়ার স্থানীয় সাংবাদিক আহমেদুল কবির বলছেন, মালয়েশিয়ায় কয়েক লাখ অবৈধ বাংলাদেশি রয়েছে যারা নির্মাণ খাত, পর্যটন, ছোটখাটো ব্যবসাবাণিজ্যের সাথে যুক্ত। কিন্তু এখন তাদের কোন আয় নেই।