মো. রশীদুল হাসান
করোনার এই মহামারিতে আমার মনে কিছু প্রশ্ন দানা দিচ্ছে বারবার। কিছুতেই এর উত্তর খুঁজে পাচ্ছি না। আমার প্রথম প্রশ্ন জনাব মির্জা ফখরুলের কাছে, যিনি বিশ্বাস করেন যে, খালেদা জিয়া মুক্তি পেলে দেশে করোনা থাকবে না। গত ২৪ মার্চ একটি অনলাইন নিউজপোর্টালের মাধ্যমে জেনেছিলাম বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জোর দিয়ে বলেন, ‘বেগম জিয়া মুক্তি পেয়েছেন এখন দেশে আর কোনো করোনাভাইরাস থাকবে না।’
এখন করোনায় দিনে দিনে আক্রান্তের সংখ্যা মারাত্মকভাবে বেড়েই চলেছে কিন্তু বিএনপিকে জনগণের পাশে দেখা যাচ্ছে না। এমনকি বিএনপি-মনা কোনো প্রতিষ্ঠান বা এনজিওকেও মাঠে পাওয়া যাচ্ছে না।
আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন তাহলে এরা কি সবাই বিশ্বাস করে, যেহেতু খালেদা জিয়া মুক্ত তাই বিএনপির কোনো সমর্থককে করোনা আক্রান্ত করার সাহস পায় না? তাহলে মানুষের সেবায় তাদের কোনো ভূমিকা নেই কেন? এরা বিভিন্ন সময় (সুযোগ বুঝে) জনগণের কষ্টে নিজেরা কান্নায় (!) ভেঙে পড়েন। যেহেতু তাদের নেত্রী মুক্ত, আর করোনা আক্রান্তের কোনোরূপ সম্ভাবনা নাই তাই এখন পানি ঘোলা করতে ব্যস্ত এবং সুযোগ বুঝে জনগণের জন্য আবার গলা ফাটাবেন।
বলতে খুব কষ্ট হচ্ছে তবুও স্বার্থপরের মতো বলি আমি এখন ঘরে বসেই সকল কাজ করছি। যেহেতু ঘরে বসেই করতে হচ্ছে স্বভাবতই আমি ফোন, ইন্টারনেট এবং বিকাশ আগের তুলনায় অনেক বেশি ব্যবহার করছি। আমি নিশ্চিত এই ব্যবহারের ঊর্ধ্বগতি সকলের ক্ষেত্রেই ঘটছে। করোনার কারণে সকল ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও মোবাইল কোম্পানি ও বিকাশের মতো অন্যান্য ট্রানসেকশন যাদের মাধ্যমে করা হচ্ছে তাদের ব্যবসা সবচাইতে ভালো হচ্ছে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।
আমার তৃতীয় প্রশ্ন এই মহামারিতে তারা কি ব্যবসায়িক মনোভাব একটু কমিয়ে সরকার ও জনগণের পাশে দাঁড়াবে না? লক্ষ লক্ষ শ্রমিকের বেতন দেয়া এবং শ্রমিকদের বেতনের টাকা তাদের পরিবার-পরিজনের কাছে পাঠনোর খরচ ন্যূনতম লাভ করা এখন সময়ের প্রয়োজন। লক্ষ লক্ষ ছাত্রছাত্রী ঘরে বসে আছে তারাও বিভিন্নভাবে এখন মোবাইল ডেটা বেশি ব্যবহার করছে। এই মুহূর্তে মোবাইলটাও এখন শিক্ষার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই ন্যূনতম রেটে ব্যবহার করতে পারত তাহলে সবাই অনেক উপকৃত হতো।
আমার শেষ প্রশ্ন তাদের কাছে যারা দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়ে নকল পিপিই বণ্টন করে জেনেশুনে সবাইকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন। আপনাদের কি একটিবার ও বুক কাঁপল না? কজন ডাক্তারের দায়িত্ব অবহেলার (যদিও আমি সেটা বিশ্বাস করি না) জন্য তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন, আর নিজেদের এত বড় দায়িত্ব অবহেলার জন্য এখনও কীভাবে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন এবং প্রতিদিন জনসম্মুখে আসছেন। ভুল স্বীকার করে যদি দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিতেন তাহলে মানুষ হয়তো আপনাদের ক্ষমা করত।
আপনার জ্ঞাত কুকর্মের ফলে যারা আজ করোনায় আক্রান্ত হলো এবং এই আক্রান্ত রোগীদের দ্বারা অন্য শত শত লোক আক্রান্ত হবে এর দায় নিবে কে? করোনা ঠেকাতে হাজারো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে কত নতুন নতুন শব্দ কোয়ারেন্টাইন, আইসোলেশন, লকডাউন, নিরাপত্তা জোরদারসহ সকল উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো আপনাদের কুকর্ম ঠেকাবে কে? আপনাদের দৌরাত্ম্য ঠেকানোর নতুন কোনো শব্দ কি আমরা জানতে পারব? অপেক্ষায় রইলাম…
সর্বশেষে আমি তাদের নিয়ে কিছু বলব যারা সম্মুখভাগের যোদ্ধা, আমাদের ডাক্তার, নার্স, টেকনিশিয়ান, চিকিৎসাসেবায় জড়িত সকল ব্যক্তি, নিরাপত্তা প্রদানকারী সকলে, অত্যন্ত জরুরি সেবাপ্রদানকারী সংস্থা ও ব্যক্তিগণ। বিশ্ব তথা দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আপনাদের ঋণ জাতি কোনোদিন শোধ করতে পারবে না। প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছেন ডাক্তার, নার্স ও নিরাপত্তা সংস্থার ভাইবোনেরা।
অনেক অব্যবস্থাপনা আছে, অনেক ত্যাগ ও কষ্ট স্বীকার করেও আপনারা পিছু না হটে সামনে থেকে এই মহামারির বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকসহ সকলে আছি, থাকব আমরা আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আসুন সবাই মিলে সরকারের পাশে দাঁড়াই, জনগণকে ও দেশকে বাঁচাই।
লেখক : অধ্যাপক, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়।