নিজস্ব প্রতিবেদক:
চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায় আগের দুই মাসের চেয়ে বেড়েছে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, অর্থনীতি ধীরে ধীরে আগের চেহারায় ফিরছে বলেই ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আহরণে।
অর্থনীতি সচল হচ্ছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে রাজস্ব খাতে। অর্থনীতিবিদেরা বলেছেন, এটা ভাল খবর। তবে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ লাগলে ঝুঁকি আবার বাড়তে পারে। সে জন্য সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে।
চলতি অর্থবছরের সেপ্টেম্বরে রাজস্ব আদায় আগের দুই মাসের চেয়ে ভাল অবস্থানে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সর্বশেষ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, অর্থবছরের শুরুতে জুলাই মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি কমে ঋণাত্নক হয় ৬ দশিমক ৭ শতাংশ।
আগস্টে পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়। এ মাসে আগের অবস্থান থেকে বেড়ে দাঁড়ায় শূন্য দশমিক ১৬ শতাংশ। এর পরের মাসে সে্প্টেম্বরে আরও এক ধাপ এগিয়ে আদায় বেড়েছে দেড় শতাংশের ওপরে। অর্থাৎ এই মাসে রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি হয় ১ দশমিক ৫৫ শতাংশ। প্রবৃদ্ধির উর্ধ্বমুখী প্রবণতায় ঘুরে দাঁড়াচ্ছে রাজস্ব আয়।
অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, করানোর প্রভাব কাটিয়ে দেশের অর্থনীতি ধীরে ধীরে আগের চেহারায় ফিরছে। এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আহরণে।
তাদের মতে, এটা সরকারের জন্য ভালো খবর। কারণ রাজস্ব বাড়লে বাজেট ঘাটতি কমবে। ফলে কিছুটা স্বস্তিতে থাকবে সরকার।
যোগাযোগ করা হলে সরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের সাবেক উর্ধ্বতন পরিচালক, অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত নিউজবাংলাকে বলেন, কোভিড-পরবর্তী রাজস্ব আয় বাড়াতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে এনবিআর। এটি তারই প্রচেষ্টার ফসল।
তিনি মনে করেন, করোনার দ্বিতীয় ঢেউ লাগলে ঝুঁকি আরও বাড়বে। সে জন্য এনবিআরকে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে।
এনবিআরের কর্মকর্তারা বলেন, আমদানি-রফতানি কর্মকাণ্ড বেগবান হচ্ছে। ফলে রাজস্ব আদায় বাড়ছে।
বাজেট বাস্তবায়নে ৮৫ শতাংশ অর্থের জোগান দেয় এনবিআর। মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট), আয়কর ও আমদানি – এই তিন উৎস থেকে এ রাজস্ব আহরণ করে সংস্থাটি।
গত কয়েক বছর ধরে অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ অর্থাৎ রাজস্ব আয়ের চিত্র সন্তোষজনক নয়। করোনার প্রাদুর্ভাবে এ খাত বড় ধরনের বিপর্যয়ের মুখে পড়ে। এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতি উন্নতি হচ্ছে।
এনবিআরের পরিসংখ্যান আনুযায়ী, চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে মোট আহরণ হয় ৪৮ হাজার ১৭ কোটি টাকা।
এর মধ্যে আয়কর থেকে আদায় হয় ১৫ হাজার ৩৭৩ কোটি টাকা এবং কাস্টমস ১৫ হাজার ৯০২ কোটি টাকা। বাকি ১৬ হাজার ৭৪২ কোটি টাকা ভ্যাট থেকে আসে।
তবে প্রবৃদ্ধির উর্ধ্বমূখী প্রবণতা হলেও এই অর্থবছরের তিন মাসে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক পিছিয়ে এনবিআর।
পরিসংখ্যান মতে, আলাচ্য অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে সবচেয়ে ভাল প্রবৃদ্ধি হয় আমদানি শুল্কে (কাস্টমস ডিউটি)। এ খাতে আদায় বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৬ শতাংশ।
কাস্টমস কর্মকর্তরা বলেন, আমদানি বাড়ায় এর ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে আদায়ে। জানা যায়, গত জুলাই পর্যন্ত আমদানি কমে যায়। এর পর থেকে বাড়ছে।
রাজস্ব আহরণের অন্যতম খাত আয় করেও প্রবৃদ্ধি মোটামুটি সন্তোষজনক। চলতি অর্থবছরের তিন মাসে আয়কর বেড়েছে প্রায় ৫ শতাংশ।
কর কর্মকর্তরা বলেন, ৩০ নভেম্বর আয়কর রিটার্ন জমার শেষ সময়। অনেক করদাতা রিটার্ন দাখিল করায় কর আহরণ বাড়ছে।
তবে ভ্যাট আদায় প্রত্যাশা অনুযায়ী বাড়েনি। ভ্যাট কর্মকর্তরা জানান, হোটেল রেস্তোরা, পর্যটনসহ অনেক সেবা খাত এখনও পুরোপুরি সচল হয়নি। চাঙ্গা হয়নি অভ্যন্তরীণ চাহিদা। এসব কারণে ভ্যাট আদায় উল্লেখযোগ্য নয়।
এবারেরর বাজেটের আকার ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। বিশাল বাজেট বাস্তবায়ন কেন্দ্র করে এনবিআরের মাধ্যমে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সরকার।
এর মধ্যে প্রথম তিন মাসে আয় হয় ৪৮ হাজার ১৭ কোটি টাকা। ফলে মোট লক্ষ্যমাত্রার মাত্র সাড়ে ১৪ শতাংশ আদায় হয়, যদিও প্রাক্কলিত লক্ষ্যমাত্রাকে অতি উচ্চাভিলাষী বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদরা।
গত মার্চে লকডাউন ঘোষণার পর থেকে রাজস্ব আয়ে ধস নামে। এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত রাজস্ব আহরণে নাজুক আবস্থা বিরাজ করে। এরপর থেকে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে।