নিউজ ডেস্ক:
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের বিনিয়োগে কর দিতে হবে কি না, তা নিয়ে এক ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। আর এ বিভ্রান্তি দূর করতে কর অব্যাহতির প্রজ্ঞাপন জারি করবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। সংস্থাটিকে এমন পরামর্শ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ বিবেচনায় নিয়ে পেনশন স্ক্রিমের চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে কর রেয়াত মিলবে। আর পেনশন বাবদ দেওয়া অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
নতুন আয়কর আইন-২০২৩-এর ষষ্ঠ তপশিলে (অংশ-৩) বলা হয়েছে, জীবন বীমার প্রিমিয়াম, প্রভিডেন্ট ফান্ডের চাঁদা, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলের চাঁদা, সরকারি সিকিউরিটিজ বা মিউচুয়াল ফান্ডে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিনিয়োগ, বছরে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা (মাসিক ১০ হাজার) ডিপিএসে বিনিয়োগ ও শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করলে সেই অর্থের ওপর কর রেয়াত বা করছাড় পাওয়া যাবে। এ ক্ষেত্রে উল্লিখিত খাতে যে পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হবে, তার ১৫ শতাংশ বা ১০ লাখ টাকার কম, যেটি হবে, সেই পরিমাণ অর্থ করছাড় পাওয়া যাবে। কিন্তু ষষ্ঠ তপশিলে পেনশন স্কিমের চাঁদার কথা উল্লেখ নেই। অন্যদিকে, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩-এর ১৪ (১) (ঢ) ধারায় বলা আছে, পেনশনের চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াতের জন্য বিবেচিত হবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ প্রাপ্ত অর্থ আয়করমুক্ত থাকবে। তবে আয়কর আইনের ৭৬ (২) ধারায় বলা আছে, আয়কর আইন ছাড়া অন্য কোনো আইন বা আইন হিসেবে পরিগণিত দলিলের মাধ্যমে যদি কোনো ব্যক্তিকে কর অব্যাহতি দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে ওই আইন বা আইন হিসেবে পরিগণিত দলিলে যাই থাকুক না কেন, এনবিআর প্রজ্ঞাপন দ্বারা ওই ব্যক্তিকে কর অব্যাহতি না দিলে সেই বিধান কার্যকর হবে না।
তাই বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে উদ্যোগ নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। আয়কর বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, সরকারি ও বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান নিজেদের আইনে কর অব্যাহতি দিচ্ছে, যার আইনগত ভিত্তি নেই। শুধু আয়কর আইন অনুযায়ী আয়কর অব্যাহতি দেওয়ার এখতিয়ার রয়েছে এনবিআরের। বিষয়টি বৈধতা দিতেই প্রজ্ঞাপন জারি করতে সম্প্রতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এনবিআরকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১৭ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এক মাসে পেনশন নিবন্ধন চূড়ান্ত করেন ১২ হাজার ৮৯২ জন। সবচেয়ে বেশি নিবন্ধন করেছেন প্রগতি স্কিমে। এখানে বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রতিষ্ঠান অংশ নিয়েছে। এ স্কিমে মোট অর্থ জমা পড়েছে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৪৫ হাজার টাকা। দ্বিতীয় অবস্থানে আছে সুরক্ষা স্কিম। এখানে নিবন্ধন করেছেন ৪ হাজার ৯৬৪ জন। বিপরীতে অর্থ জমা পড়েছে ২ কোটি ৪৬ লাখ ৯ হাজার টাকা। নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তৃতীয় অবস্থানে আছে সমতা স্কিম। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৩২১ জন নিবন্ধন করেছেন। বিপরীতে অর্থ জমা পড়েছে ২১ লাখ ৮৬ হাজার টাকা। তবে সবচেয়ে কম সাড়া পড়েছে প্রবাসী স্কিমে। এখানে এখন পর্যন্ত নিবন্ধন করেছেন ৩৯৩ জন। বিপরীতে অর্থ জমা পড়েছে ৮১ লাখ ২৭ হাজার ৫০০ টাকা।