আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সমন্বয় করা হবে ♦ কমানোর দাবি এফবিসিসিআইরও
জ্বালানি তেলের দাম কমানোর উদ্যোগটির প্রশংসা করে অর্থনীতিবিদ ড. জামালউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এদেশে গণমানুষের নেত্রী। তিনি সবসময় গণমানুষের সুখ-দুঃখের দিকে খেয়াল রেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকেন। জ্বালানি তেলের বিষয়েও বাস্তবতার আঙ্গিকে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। বর্তমানে অভাবের সময়ে সারা দেশে জ্বালানি তেলের দাম যেভাবে বৃদ্ধি করা হয়েছে তা আরেকটু রয়েসয়ে বৃদ্ধি করলে ভালো হতো। একেবারে তেলের দাম বৃদ্ধি না করে ভাগ ভাগ করে যদি তা বৃদ্ধি করা যায় তাহলে মানুষের ওপর চাপ কম পড়বে। এই প্রক্রিয়ায় তেলের দাম বৃদ্ধি আরও আগে থেকে করা উচিত ছিল। ভারতে যেদিন তেলের দাম পরিবর্তন হয় সেদিনই তার সঙ্গে সামঞ্জস্য করা হয়। এর একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি আছে। এমন একটি ব্যবস্থা থাকা উচিত যেখানে ১৫ থেকে ২০ দিন বা এক মাস পর নির্দিষ্ট পরিমাণ হারে তেলের দাম বৃদ্ধি করার সুযোগ থাকে। তবে তা একবারে বৃদ্ধি করা যাবে না। আমি মনে করি সরকার যদি সত্যিই তেলের দাম কমানোর বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করে থাকে তাহলে এটি খুবই ভালো একটি উদ্যোগ। আমাদের অনেকদিন কিন্তু তেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়নি। আবার একবার বৃদ্ধি করলে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমে আসলে দেশে না কমালে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়। দাম কমালে মানুষের মধ্যে হা-হুতাশ, অবিশ্বাস, নাভিশ্বাস কমে আসবে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ম তামিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, তেলের দাম কমানোর উদ্যোগটি ভালো। তবে প্রশ্ন হচ্ছে তেলের দাম কমার সঙ্গে বাস ভাড়া ও পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রক্রিয়া কমবে কি না। এটি যদি সরকার নিশ্চিত করতে না পারে তাহলে তেলের দাম কমিয়ে লাভ নেই। জনগণ যদি এর সুবিধা ভোগ করতে না পারে তাহলে তেলের দাম কমালে টাকাটা ব্যবসায়ীদের পকেটে ঢুকবে। সাধারণ মানুষ এর কোনো উপকার পাবে না। জিনিসপত্রের ভাড়া কমানোই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সমস্যা। দেশে একবার কিছুর দাম বাড়লে সেটা আর কমে না। এ জন্য যখন দেশে তেলের দাম বৃদ্ধি পাবে তখন সরকার ভর্তুকি দেবে আর যখন কমবে তখন লাভ করবে আর লাভের টাকায় পরে ভর্তুকি দেবে। এটি একটি পলিসির মাধ্যমে আসা উচিত। আর যদি সরকার ভ্যারিয়েবল প্রাইসে আসতে চায় অর্থাৎ আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে ভর্তুকি আমরা দেব না, এটি যদি চিন্তা করি তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তেলের দাম ওঠানামা করবে। তা আমরা প্রতিদিন সামঞ্জস্য করতে পারি। তিন দিন পর পর বা ১৫ দিন পর পরও সামঞ্জস্য করতে পারি। ভারত যখন এই প্রক্রিয়া শুরু করেছিল তখন তারা ১৫ দিন পরপর দাম সমন্বয় শুরু করেছিল। এখন তারা প্রতিদিন তেলের দাম সমন্বয় করছে। তবে জ্বালানি তেলের দাম কমানোর ব্যাপারে সরকারের এই চিন্তা-ভাবনা অবশ্যই ইতিবাচক। সম্প্রতি বিশ্ববাজারেও তেলের দাম কমে এসেছে। আর সর্বশেষ গতকাল বিদ্যুৎ বিভাগ ও জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ আয়োজিত জাতীয় শোক দিবসের এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক জ্বালানির বাজারে যে ঊর্ধ্বমুখী মূল্য তার কারণে বাংলাদেশও ভুক্তভোগী। তবে এটা সাময়িক সময়ের জন্য। সাধারণ মানুষের ভোগান্তি কমাতে সরকার কাজ করছে। এ বছরের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক পরিস্থিতি ভালো হলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্য সহনীয় পর্যায়ে চলে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, জ্বালানি তেলের দাম কমাতে শুল্ক কমানোর চিন্তা করছে সরকার। শুল্ক কতটা কমানো যেতে পারে সেজন্য বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) ও পেট্রোবাংলাকে নিয়ে পর্যালোচনা করছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ। শিগগিরই জ্বালানি বিভাগ থেকে শুল্ক কমানোর প্রস্তাব অর্থ বিভাগের মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে পাঠানো হবে বলে জ্বালানি বিভাগ সূত্রে জানা গিয়েছে। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা জনগণের সামনে তুলে ধরতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। সচিবালয়ে গত বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বৈঠকে গণভবন প্রান্ত থেকে ভিডিও কনফারেন্সে যোগ দেন।