গল্প : প্রথম দেখা
(এক অতিনাটকিয় কাল্পনিক ঘটনার প্রেক্ষাপটে। নিম্নলিখিত ঘটনার সাথে বাস্তবের কোনো মিল নেই।)
এতোদিন যাবৎ চিঠির বুক চিঁড়ে কলমের কালি তো নেহাত কম চলল না। মনে মনে এইরকম ভেবে অনিমেষ তার
সদ্য পরিচিতা বান্ধবীকে একখানি নিবেদন পাঠাবে বলে মনস্থির করল। প্রিয় সম্বোধন করে লেখা শুরু করলো
অনিমেষ। অনিমেষের চিঠি লেখার আগে মাস খানেক আগের প্রেক্ষাপটে একটু ফিরে যাওয়া যাক।
সেদিন ছিলো ১২ই আষাঢ়। সকাল থেকেই আকাশ ঘন কালো মেঘে আচ্ছন্ন, সঙ্গে বইছে ঝোড়ো হাওয়া।
বৈশাখের তীব্র দবদাহের পর তিলোত্তমা যেনো একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলছে। অনিমেষ ঠিক করল, প্র্যাক্টিকেল
ক্লাস অ্যাটেন্ড করে, কলেজ স্ট্রিট থেকে একটা বই কিনে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব বাড়ি ফিরবে। ওদিকে আকাশের
অবস্থাও ভাল নয়। বৃষ্টি নামলো বলে। সেই মতো সে তার পরিচিত ঘণশ্যাম সামন্ত-র বুকস্টল থেকে বইটা কিনে
সবেমাত্র ব্যাগে ঢোকাতে যাবে এমন সময়ে ঝামঝমিয়ে নামলো বৃষ্টি। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। হাওয়ার দাপটে এক
প্রকান্ড গাছের ডাল ভেঙে পড়লো ইলেকট্রিক তারের উপর। বিচ্ছিন্ন হলো বিদ্যুৎ পরিষেবা। অসময়ে নেমে এলো
তিমির। মুহুর্তের মধ্যে বইমহলে একেবারে ছুটোছুটির হিড়িক পড়ে গেলো। যে যেখানে পারল আশ্রয় নিয়ে
নিজেকে বৃষ্টি থেকে সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করল। দোকানের ভেতর থেকে ঘণশ্যাম বাবু বললেন : “অনিমেষ
ভেতরে ঢুকে দাঁড়াও নইলে ভিজে যাবে যে”।
অনিমেষ বললো : “না না দাদা ঠিক আছে, এখানে বৃষ্টির ছাট তেমন আসছে না”। সময় যতো গড়াল বৃষ্টির তেজ
ততোই বাড়তে থাকল। সঙ্গে প্রচণ্ড বজ্রপাত এবং হাওয়ার দাপট বহাল থাকলো। বড়ো বড়ো গাছ গুলো যেনো
স্বস্তির বৃষ্টিতে মনের আনন্দে দুলছে। প্রকৃতির এই মধুরিমা অনিমেষকে আষ্টে-পৃষ্ঠে বাঁধল। গুণ গুণ করে রবি
ঠাকুরের “আজি ঝর ঝর মুখর বাদল দিনে…” গানটা না গেয়ে আর থাকতে পারল না সে। মনে মনে অনিমেষ
ভাবলো অঝোর বর্ষনের সাথে কর্কশ গর্জনের যে এক অপূর্ব মেলবন্ধন তার জুড়ি মেলা ভার। হঠাৎ করেই
অনিমেষের চোখ দুখানি স্তম্ভিত হয়ে গেলো। সে দেখলো ঠিক তার উল্টো দিকে অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল
প্রবেশদ্বারের পাশে দাঁড়িয়ে এক সুন্দরী যুবতী, সঙ্গে এক বান্ধবী। দুজনেই বেশ গল্পে মত্ত। যুবতীর পড়নে হালকা
গোলাপি রঙের শাড়ী, ডান কাঁধে ঝুলছে একটি ব্যাগ। দু হাত দিয়ে সে কোনোরকমে ছাতাটা ধরে রেখেছে। বৃষ্টির
সাথে প্রবল হওয়ার দাপটে তার ছাতাটা একেবারে বেসামাল। আকস্মিক পথ চলতি মানুষের ভিড়ে বেচারি
নিজেকে কোনো সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়নি। ভাবলো অনিমেষ। ভয়ঙ্কর প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে
লড়াই করতে করতে তার ছাতা হাল ছেড়ে দিয়েছে। সে প্রায় ভিজতে বসেছে। তাতে তার সৌন্দর্য্যকে যেনো আরো
বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে। যেনো স্পর্ধা এড়িয়ে যৌবন ফেলেছে সাড়া। জীবনে এই প্রথম এত কাছ থেকে কোনও
সুন্দরী যুবতীকে চাক্ষুস করছে অনিমেষ। সে বিভোর হয়ে তার মুখপানে চেয়ে রইলো। ঘন্টাখানেক বাদে বৃষ্টি
থামার পর ঘণশ্যাম বাবুর ডাকাডাকিতে ঘোর কাটে অনিমেষের। তিনি অনিমেষকে বললেন : “কিছু ভাবছিলে
অনিমেষ?”
অনিমেষ একটু হেসে বললো : “না না দাদা”।
তারপর সে বইয়ের যথাযথ মুল্য চুকিয়ে দিয়ে মেয়েটির দিকে তাকাতেই হতাশ হলো। মেয়েটিকে দেখতে পেলো
না। বেশ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করার পর ভাবলো বোধহয় চলে গেছে। বাড়ি ফিরে রাতে খাওয়া দাওয়ার পর
বিছানায় শুয়ে অনিমেষ আজ বিকালের ঘটনাগুলো নিজের মতো সাজিয়ে তার মধুরতাকে উপভোগ করলো। এর
পরে অনিমেষ প্রায় দিনই তার কলেজ শেষে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে থাকে, সেদিনের সেই
মেয়েটি কে একবার দেখার জন্য। কিন্তু মেয়েটিকে সে আর দেখতে পায়না।
অনিমেষ বরাবরই একটু চাপা প্রকৃতির ছেলে। তাই এ বিষয়ে বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আলোচনা করতে সে
একেবারেই না রাজ। এমনকি কলেজের ঘনিষ্ঠ মহলেও সে বিষয়টি সম্পূর্ণ গোপন রাখলো।
একদিন কলেজ থেকে বেরিয়ে হঠাৎ সেদিনের সেই মেয়েটির সঙ্গে থাকা বান্ধবী কে দেখলো অনিমেষ। মেয়েটি
সূর্য সেন স্ট্রিট দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। চট করে কোনো অপরিচিতাকে ডাকতে কেমন বাধো বাধো ঠেকল তার।
তবুও মনে সাহস সঞ্চয় করে অনিমেষ বললো : “শুনছেন”?
মেয়েটি ঘুরে দাঁড়িয়ে অনিমেষের মুখে চেয়ে বললো : “আমাকে বলছেন”?
অনিমেষ একটু এগিয়ে গিয়ে বললো : “অজ্ঞে হ্যাঁ, আপনার নাম জানতে পারি?”
মেয়েটি একটু বিরক্তি প্রকাশ করে বললো : “কেনো বলুন তো? আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না”।
অনিমেষ আরো কোমল হয়ে বললো : “দেখুন আমিও আপনাকে ঠিক চিনি না, তবে আপনার সাথে আমার বিশেষ
দরকার আছে”।
অনিমেষের বাহ্যিক দৃষ্টিভঙ্গি মেয়েটির বিরক্তিকে কিছুটা হলেও হিম করেছে। মেয়েটি বললো : “আমার নাম
পল্লবী, পল্লবী বসু। দেখুন আমার বাড়ি বহুদূর, রানাঘাট স্টেশনে নেমে আরো মাইল আটেক। ৪:২৮ এর রানাঘাট
লোকাল টা না পেলে আমাকে প্রায় পয়তাল্লিশ মিনিট অপেক্ষা করতে হবে। তাই বলছিলাম আগামীকাল যদি
আপনার কথা শুনি?”
অনিমেষ হাত ঘড়িতে দেখলো চারটে বেজে দশ মিনিট হয়েছে এবং পল্লবীর কথা চিন্তা করে আর কথা না বাড়িয়ে
আগামীকাল কফি হাউসের সামনে অপেক্ষা করবে বলে জানালো। পল্লবী “আচ্ছা ঠিক আছে” বলে বিদায় নিলো।
সেদিন বাড়ি ফিরে অনিমেষ ঠিক কিভাবে পল্লবীর কাছে তার ইচ্ছাগুলো প্রকাশ করবে তার হিসাব নিকাশ করতে
লাগলো।
পরদিন নির্ধারিত সময়েই অনিমেষ পৌঁছে গেলো কফি হাউসে। পল্লবী পৌঁছালো কিছুক্ষণ পর। প্রাথমিক পরিচয়
শেষে তারা বেশ খানিকটা সময় গল্প করে কাটলো। যার বেশিরভাগ অংশ জুড়েই ছিল অনিমেষের সেদিনের সেই
মেয়েটিকে দেখার কাহিনী এবং তাকে ঘিরে অনিমেষের উপলব্ধি উদ্দীপনা। কথা প্রসঙ্গে অনিমেষ জানতে পারলো
মেয়েটির নাম রিঙ্কি সেন। বালিগঞ্জ মে-ফেয়ার রোড এর আদি বাসিন্দা পেশায় উকিল শ্রী রথীন্দ্রনাথ সেন
মহাশয়ের জেষ্ঠা কন্যা রিঙ্কি। রিঙ্কি সবে মাত্র ভূগোল অনার্স নিয়ে বি.এ পাশ করে ভর্তি হয়েছে কলকাতা
বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর রথীন্দ্র বাবুর ছোটো মেয়ে পায়েল এ বছরই উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে পদার্থ বিদ্যা অনার্স নিয়ে
ভর্তি হয়েছে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে। পাড়া প্রতিবেশীর কাছে রথীন্দ্র বাবুর এই দুটি ফুল বড্ড প্রিয়। পাড়ার
যেকোনো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে পায়েল রিঙ্কির পরিবেশনা থাকবেই। ছোটো থেকেই রিঙ্কির কলেজ স্কোয়ার চত্তরটা
ভীষণ পছন্দের, তাই যাদবপুরে চান্স পাওয়া সত্ত্বেও বই পাড়ার লোভ সে কোনোমতেই ত্যাগ করতে পারে নি, আর
সেইজন্যেই তার কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া।
অন্য দিকে অনিমেষের কাছ থেকে পায়েল জানতে পারে যে শোভাবাজার নিবাসী রাজা কালি কৃষ্ণ লেনের
চট্টোপাধ্যায় বাড়ির একমাত্র ছেলে অনিমেষ। প্রোপিতামহের সময় থেকেই তাদের জমিদারি। যদিও তার জৌলুস
এখন অনেকটা ফিকে। তবুও সম্ভ্রান্ত ভদ্র পরিবার হিসাবে আজও খ্যাতি লাভ করে চট্টোপাধ্যায় বাড়ি।
অনিমেষের বাবা শ্রীযুক্ত কমলেশ চট্টোপাধ্যায় পেশায় একজন নাম করা চিকিৎসক। তাই মূলতঃ বাবার-ই ইচ্ছায়
অনিমেষের ডাক্তারি পড়া। অনিমেষ কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম বি বি এস পাশ করে সেখানেই পোস্ট
গ্র্যাজুয়েটে ভর্তি হয়েছে।
দীর্ঘ আলাপচারিতার পর অনিমেষ সোজাসুজি পায়েলের কাছে রিঙ্কির বাড়ির ঠিকানা চেয়ে বসলো। পল্লবী
প্রথমে দ্বিধা বোধ করলেও শেষমেশ অনিমেষের অপাপবিদ্ধ নির্মল মুখের দিকে চেয়ে রিঙ্কির বাড়ির ঠিকানা না
দিয়ে পারল না। অনিমেষ পল্লবীকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে আলোচিত ঘটনা সমূহ রিঙ্কির কাছে সম্পূর্ণ
গোপন রাখার অনুরোধ জানালো। পল্লবীর ট্রেনের সময় হয়ে গেছে। সে বললো : “অনিমেষ বাবু এবার আমায়
উঠতে হবে যে”। অনিমেষ বললো : “ও হ্যাঁ তাই তো”। এরপর দু হাত জোড় করে বললো : “আপনার অনেক
মূল্যবান সময় ব্যয় করে দেবার জন্য আমি গভীরভাবে ক্ষমাপ্রার্থী”। পল্লবী হালকা হাসি রেখে বললো : “আরে না
না, ঠিক আছে। আসি কেমন?”
অনিমেষ সামান্য মাথা দুলিয়ে বললো :” আসুন, সাবধানে যাবেন আর আমার অনুরোধ টা একটু মাথায়
রাখবেন”। পল্লবী “নিশ্চয়ই” বলে চলে গেলো।
অনিমেষ কলেজ স্ট্রিট থেকে খান কয়েক পোস্টকার্ড কিনে বাড়ি ফিরল। অনিমেষের হৃদয় সাগরে তখন
সুনামিস্বরূপ ঢেউ এর উতাল পাতাল চলছে। নানারকম চিন্তা ভাবনা, অভূতপূর্ব অনুভূতি এবং হাজারো প্রশ্ন ভিড়ে
তার মন বড়ো অস্থির হয়ে উঠলো।
একদিন সাত পাঁচ না ভেবে রিঙ্কিকে একটা চিঠি লিখবে বলে ঠিক করলো অনিমেষ। দিন হিসাবে বেছে নিলো
২২শে শ্রাবণ। ছোটো থেকেই অসম্ভব রবীন্দ্রপ্রেমী অনিমেষ। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও সাহিত্যের উপর তার দখল
নেহাত কম ছিলো না। তাই ভাষাগত দিক থেকে রবীন্দ্রনাথ কে পাথেয় করে মনের ভাব ব্যক্ত করলো একটি
বেনামী চিঠি লিখে। যদিও আত্মবিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে নিজের ঠিকানা জুড়ে দিলো চিঠিতে। তার বিশ্বাস ছিল
আবহাওয়া যতোই প্রতিকূল হোক না কেন নৌকা একসময় ঠিক তীরে পৌঁছাবে। কিন্তু দিন কুড়ি কেটে যাওয়ার
পরেও অনিমেষ তার বাড়ির লেটার বক্সে রিঙ্কির কোনো চিঠি পেলো না। মনে মনে ভাবতে লাগলো হয়তো বেনামী
চিঠি পেয়ে সে কোনো উত্তর দেয়নি। আবার এও ভাবল যে, একটা ভদ্র বাড়ির মেয়ে কেনই বা একটা অচেনা
বেনামী ছেলের চিঠির উত্তর দেবে। এই ভেবে মন কে শান্ত করলো সে। এরপর অনিমেষ বহুবার ক্লাস ফাঁকি দিয়ে
রিঙ্কি কে শুধু একবার দেখার জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতো বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিকে। কিন্তু ভাগ্যদেবী
তার উপর সহায় হননি। প্রিয় মানুষকে একবার মন ভরে দেখার অসুখটা যে কতোটা ভয়ঙ্কর তা বেশ ভালো ভাবেই
উপলব্ধি করতে পারলো অনিমেষ।
অনিমেষের প্রথম সেমিস্টারের পরীক্ষার দিন ঘোষণা হয়ে গেলো। এদিকে কলেজেও এখন আর বেশি ক্লাস হচ্ছে
না। আবার কলেজে না গেলে রিঙ্কিকে দেখার সম্ভাবনাও থাকছে না। তাই সে সপ্তাহে তিনদিন কলেজ যাওয়ার
সিদ্ধান্ত নিলো। একদিন হঠাৎ কলেজ স্ট্রিটৈ এক বইয়ের দোকানে পল্লবীর সাথে দেখা। পল্লবীকে কিছু জিজ্ঞেস
করার আগেই সে গড় গড় করে রিঙ্কির সমস্ত খবর উগড়ে দিলো। পল্লবীর কাছে জানতে পারে জ্বর, সর্দি, কাশি
হওয়ার জন্য সে এতদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসতে পারেনি। খবর টা শুনে অনিমেষ মানসিক ভাবে একটু ভেঙে
পড়লো। বিষন্ন চিত্তে বাকি খবর গুলো মনযোগ সহকারে শুনল। এবং একটি বেনামী চিঠি যে সে পেয়েছে এই
খবরটাও পেলো অনিমেষ। যদিও চিঠি পেয়ে তার প্রতিক্রিয়া সে জানতে চায়নি। পল্লবীও এব্যাপারে তেমন কিছু
বলেনি। তবে, অনিমেষের অনুরোধে মান্যতা দিয়ে পল্লবী কোনো কথাই রিঙ্কিকে জানায় নি। মন খারাপের মধ্যেও
চিঠির খবরটা শুনে অনিমেষের সমগ্র শরীরে যেনো একটা খুশির বাতাবরন খেলে গেলো।
এরপর মাস খানেকের মধ্যে অনিমেষ রিঙ্কিকে বেশ কয়েকটা চিঠি লিখেছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত একটা চিঠিরও
উত্তর আসেনি অনিমেষের কাছে। এদিকে তার পরীক্ষাও ক্রমশ এগিয়ে আসছে। এবং বন্ধুবান্ধব মারফত জানতে
পারলো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের পরীক্ষাও নাকি আসন্ন। পড়াশোনায় গভীর ভাবে মনোনিবেশ করলো
অনিমেষ। কিন্তু রিঙ্কির কথা সে কিছুতেই ভুলতে পারে না। প্রতি রাতে সে রিঙ্কির কথা ভাবে, তাকে অনুভব করে।
বেশ কয়েক মাস কাটলো। অনিমেষের পরীক্ষাও ভালো মতো মিটল। এখন সে অনেকটাই চাপ মুক্ত। শহর
ঢেকেছে কুয়াশার চাদরে।
একদিন বিকালে অনিমেষ তার প্রিয় বারান্দায় বসে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্পগুচ্ছ পড়েছিলো। এমন সময় তাদের দরজার উপর নকল টুনটুনিটা কয়েকবার ডেকে উঠে জানান দিলো নিচে কোনো অতিথি এসেছে। কিঞ্চিৎ বিরক্তি প্রকাশ করল অনিমেষ। বইটা টেবিলের উপর রেখে সে নিজেই গেলো নিচে।
দরজা খুলতেই সে দেখলো খাকি পোষাক পরিহিত এক জীর্ণ শীর্ণ ব্যক্তি। সমগ্র গাল জুড়ে কাঁচা পাকা খোঁচা
খোঁচা দাড়ি। হতে একটা রঙিন খাম। তিনি যে পোস্ট অফিসের পিয়ন তা বুঝতে বেশি দেরি হলো না অনিমেষের।
ভদ্রলোককে দেখে অনিমেষ বললো : কিছু বলবেন? ভদ্রলোক কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন : আচ্ছা এটা কি চার
নম্বর কালি কৃষ্ণ লেন? অনিমেষ বললো : “হ্যাঁ, বলুন”। এরপর ভদ্রলোক তার হাতের রঙিন খামটি দিয়ে চলে
গেলেন। অনিমেষ খামটা নিয়ে ওপরে এসে টেবিলে রেখে আবার গল্পগুচ্ছ হাতে তুলে নিলো। পড়তে পড়তে কখন
যে বেলা গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো তা সে বুঝতেই পারল না। অবশেষে পাশের বাড়ির সন্ধ্যারতির গানে তার
মনোযোগ ভাঙ্গে। কিছুক্ষণ বাদে রান্নাঘর থেকে অনিমেষের মা চেঁচিয়ে বললেন “খোকা চা দেবো “? অনিমেষের
ইতিবাচক উত্তর পৌঁছালো মায়ের কাছে। চায়ের কাপে বেশ কয়েকবার চুমুক দেবার পরে অনিমেষের চোখ
পড়লো টেবিলের উপরে রাখা সেই রঙিন খামটার উপর। এমন অদ্ভুত খাম সে আগে কখনো দেখেনি।
কৌতুহলবশত খামটা খুলে একটা চিঠি পেলো সে। সেদিন অনিমেষের জীবনে ছিল এক অদ্ভুত আনন্দের দিন।
চিঠি টা ছিলো রিঙ্কির লেখা। তার দেওয়া চিঠি গুলোর প্রত্যুত্তর। অনিমেষের অমন সুন্দর লেখনী বন্ধনী দিয়ে যে
রিঙ্কিকে আকৃষ্ট করতে বেশি সময় লাগেনি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। অনিমেষ তার বাঁধ ভাঙ্গা ঢেউ এর উচ্ছ্বাস
সীমাবদ্ধ রাখল নিজের মধ্যেই। অন্যদিকে রিঙ্কিও মনে মনে ভাবতে লাগলো তার চিঠিটা যথা স্থানে এবং যথা
ব্যক্তির হাতে পৌঁছাল কিনা? যতক্ষণ না কোনো উত্তর আসে বেশ দুশ্চিন্তা গ্রাস করে বসলো রিঙ্কিকে। জীবনে এই
প্রথম কোনো পরপুরুষকে চিঠি লিখেছে সে। বেশ কিছু দিন বাদে অনিমেষের উত্তর পায় রিঙ্কি। এইভাবে চিঠির
আদান প্রদানে তাদের সম্পর্কের পথ ধীরে ধীরে প্রশস্ত হতে শুরু করে। পরবর্তীকালে রিঙ্কির অনুরোধে অনিমেষ
চিঠি লিখিত রিঙ্কিদের আরেকটি বাড়ির ঠিকানায়। পাছে বাবার কাছে ধরা পড়ে যায় সেই ভয়ে। সেই বাড়িতে
রিঙ্কির ঠাকুরদা ও ঠাকুমা থাকেন। অনিমেষের চিঠির মোহে রিঙ্কি তার সুখ-দুঃখ গুলো কে সঙ্গী করে অনিমেষের
উপর অনেকটা নির্ভরশীল হয়ে পড়লো। প্রবল ভাবে প্রত্যাশা করতে লাগলো তাকে। টিউশন থেকে ফেরার পথে
তাদের পুরোনো বাড়ির লেটার বক্সে একবার ঢু না মারলে রাতে ঘুম আসে না রিঙ্কির। পারস্পরিক সাক্ষাত না
হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র গুটি কয়েক চিঠিই যে দুটি আত্মাকে এতটা কাছাকাছি আনতে সক্ষম এই ভেবে দুজনেই
আবেগপ্রবন হয়ে পড়লো। বাড়তে থাকলো সম্পর্কের গভীরতা, ভালোবাসা এবং পারস্পরিক সাক্ষাতের চাহিদা।
এখন তারা আর কেউই বেনামে চিঠি লেখে না।
গল্পের শুরুতে প্রিয় সম্বোধন করে অনিমেষ যে চিঠি লেখা শুরু করেছিলো, রিঙ্কি তা সদ্য পড়ে শেষ করলো। চিঠি
তে অনিমেষ জানিয়েছে আগামী ১৪ই শ্রাবণ সে তার সাথে দেখা করতে চায়, অনিমেষ ফিরে যেতে চায় এক বছর
আগের সেই বৃষ্টি মুখর দিনটাতে। দেখতে চায় রিঙ্কিকে ঠিক সেদিনের মতো ভিজতে। অনিমেষের প্রস্তাবে রিঙ্কি
আত্মহারা। বিন্দুমাত্র দেরি না করে চিঠির উত্তরে সে অনিমেষকে কলেজ স্কোয়ারের ভেতরে কালি মন্দিরের
সামনে অপেক্ষা করতে বললো। দুজনের মনেই তখন প্রথম দেখার আকাঙ্খা, আবেগ এবং উদ্দীপনার পারদ
ক্রমশ চড়ছিল।
অবশেষে এলো বহুল প্রতীক্ষিত ১৪ই শ্রাবণ। সেদিন সকাল থেকেই শ্রাবণ ধারা ঝরছে। আকাশ ঘন কালো মেঘে
আচ্ছন্ন। রিঙ্কি আকাশের অবস্থা দেখে একটু আগেই বেরোলো বাড়ি থেকে। একেই বৃষ্টি বাদলের দিন তারপর
আবার কলকাতা শহরের যা জ্যাম। বাড়িতে বললো বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষে টিউশন করে একেবারে ফিরবে।
রাস্তাঘাট তুলনামূলক ফাঁকাই। যানজট প্রায় নেই বললেই চলে। আজকে রিঙ্কির মনটা যেনো বাড়তি উদ্দীপিত ও
রোমাঞ্চে ভরা। তখনও তিনটে বাজতে দশ মিনিট বাকি। রিঙ্কি পৌঁছে গেলো কলেজ স্কোয়ারে। সেখানে মায়ের
মন্দিরে বসে অপেক্ষা করলো অনিমেষের জন্য। মনে মনে সে ভাবতে লাগলো চিঠির আদান প্রদান এক জিনিস
আর সামনা সামনি কথা বলা আরেক জিনিস। লজ্জা, ভয়, সব কিছু মিশিয়ে এক মিশ্র অনুভূতির ঢেউ খেলে
যাচ্ছে সর্বদা। এমন সময়ে ভয়ঙ্কর এক শব্দে আশেপাশের লোকজন চমকে উঠল সঙ্গে রিঙ্কিও। মনোযোগ গেলো
ভেঙে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই “অ্যাক্সিডেন্ট অ্যাক্সিডেন্ট” বলে এদিকে ওদিকে ছোটাছুটি শুরু করে দিলো।
রিঙ্কি এসব ব্যাপারে খুব নার্ভাস, তবুও সে ছুটে কলেজ স্কোয়ারের বাইরে বেরিয়ে এলো। কিন্তু যা দেখলো তাতে
তার সমগ্র শরীর গুলিয়ে উঠতে লাগলো, সে দু হাত দিয়ে চোখ ঢেকে পেছনে সরে গেলো। রক্তাক্ত অবস্থায়
একজন ট্রাম লাইনের উপরে পড়ে আছেন। যেনো মনে হচ্ছে রাঙা চাদর বিছিয়ে শুয়ে অন্তিম ঘুমে মগ্ন। পড়নে
ঘিয়ে রঙের পাঞ্জাবী, সাদা ধবধবে পাজামা রক্তে রাঙা, মাথা ভর্তি একরাশ কোঁকরানো চুল। প্রত্যক্ষদর্শীদের
কানাকানিতে রিঙ্কি শুনতে পেলো রাস্তা পার হওয়ার সময় ছেলেটিকে একটা লরি পিষে দিয়ে চলে যায়।
কিছুক্ষণের মধ্যেই এসে পৌঁছায় আমহার্স্ট স্ট্রিট থানার পুলিশ। এদিকে রিঙ্কিরও অনিমেষের জন্য আর তর
সইছিল না। মনকে আর স্থির রাখতে পারলো না সে। শুধু ভাবছিল কখন আসবে সে? পুলিশ বডি তল্লাশি করে
একটা চিঠি আর আইডেন্টিটি কার্ড ছাড়া আর কিচ্ছু পেলো না ওই ব্যক্তির কাছ থেকে। অনিমেষ আসবে বলে
রিঙ্কি মন্দিরের দিকে পা বাড়ালো। ওদিকে ইনিশিয়াল আইডেন্টিফিকেশনের জন্য পুলিশ যুবকের আই কার্ডে
লেখা নাম ধরে ডাকল। নাম শুনে রিঙ্কির বুকটা ধড়াস করে উঠলো। মুহূর্তের মধ্যে তার সারা শরীর অসাড় হয়ে
যেতে থাকলো। পুলিশ আধিকারিক আরেকবার বললেন : “এনার নাম শ্রী অনিমেষ চট্টোপাধ্যায়। ইনি কলকাতা
মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র, যদি এনাকে কেউ চেনেন দয়াকরে আমাদের সহযোগিতা করুন”। ভাগ্যের পরিহাসে
সেদিন হতভাগ্য অনিমেষকে শনাক্ত করার জন্য কোনো পরিচিত ব্যক্তি ছিলেন না। ছিল এমন একজন যার সাথে
আগে তার কোনোদিনই সাক্ষাত হয়নি। ভিড়ের মাঝখান থেকে হাত তুলে বিষণ্ণ চিত্তে মুখে একরাশ বেদনার ছাপ
নিয়ে এগিয়ে এলো রিঙ্কি। আঁখির কোণে তখন ধীরে ধীরে জমতে শুরু করেছে অশ্রু। চত্বরটা লোকে লোকারণ্য
হয়ে গেলো। পুলিশ কর্তৃপক্ষ ওই রাস্তায় সম্পূর্ণ যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছাত্রীরাও
আসতে আসতে ভিড় জমাতে শুরু করলো ঘটনাস্থলে। একজন পুলিশ আধিকারিক রিঙ্কিকে জিজ্ঞেস করলেন :
“আপনার নাম”? নাম বললো রিঙ্কি।
পুলিশ আধিকারিক : “আচ্ছা রিঙ্কি দেবী আপনি অনিমেষ বাবু কে চেনেন” ?
রিঙ্কি : “এতোদিন চিনতাম না, কিন্তু আজ চিনলাম। কারণ আজই আমি তাকে প্রথম দেখলাম”।
পুলিশ আধিকারিক : “তার মানে”?
রিঙ্কি নীরব থাকলো। বারবার সে দেখছে অনিমেষের নিথর দেহটাকে আর দেখছে চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা
বেশ কিছু গোলাপ ফুল, অর্ধেক ভাঙা একটা চশমা আর একটা ঝোলা ব্যাগ। চোখের জল আর বাঁধ মানতে চাইছে
না তার, ছোট্ট শিশুর মতো ফুঁপিয়ে উঠেছে বারবার।
পুলিশ আধিকারিক : “আচ্ছা যখন দুর্ঘটনা ঘটে তখন আপনি কোথায় ছিলেন”?
রিঙ্কি বলতে বলতে আর নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলো না। কান্নায় ভেঙে পড়লো সে। পুলিশ কর্তৃপক্ষ রিঙ্কির
মানসিক অবস্থার কথা চিন্তা করে আপাতত বয়ান নেওয়া বন্ধ করলেন এবং বললেন : “বাই দ্য ওয়ে রিঙ্কি দেবী
আপনাকে আমাদের সাথে একটু যেতে হবে। আমাদের কর্তব্য অনুযায়ী আগে বডি ময়নাতদন্ত করতে হবে।
তারপর কিছু বেসিক ফর্মালিটিস কমপ্লিট করে আমরা আপনাকে রিলিস করে দেবো”। পুলিশ ভ্যানের সামনে
উঠে বসল রিঙ্কি। অনিমেষের বডি তোলা হলো ভ্যানের পেছনে। মিনিট দশকের মধ্যে ভ্যান পৌঁছালো কলকাতা
মেডিক্যাল কলেজে, অর্থাৎ শেষবারের মতো নিশ্প্রান দেহে অনিমেষ প্রবেশ করলো তার কলেজে। রিঙ্কি নেমে
দাঁড়ালো। এরপর একটি স্ট্রেচারে করে অনিমেষের রক্তাক্ত নিথর দেহ সাদা কাপড় দিয়ে মুড়ে নিয়ে যাওয়া হলো
পোস্ট মর্টেম ঘরে। রিঙ্কি দু হাত তুলে কাঁপা কাঁপা ঠোঁটের মধ্যে দিয়ে কিছু বলতে চাইছিল। কিন্তু তার কন্ঠ ক্রমশ
আড়াষ্ঠ হয়ে আসছে। প্রথম ও শেষ বারের জন্য সে ছুঁয়ে দেখতে চাইছিল তার প্রিয় অনু কে। হ্যাঁ, শেষের চিঠি
গুলো তে রিঙ্কি অনিমেষকে ‘অনু’ সম্বোধন করেই লিখিতো। অনিমেষ তখন শবাগারে চিরনিদ্রায় আচ্ছন্ন।
কিছুক্ষণ বাদে পুলিশ কর্তৃপক্ষ এসে অনিমেষের কাছ থেকে পাওয়া জিনিস গুলো রিঙ্কির হতে সমর্পণ করলো।
তাতে ছিল অনিমেষকে লেখা তার শেষ চিঠিটা আর কিছু গোলাপ ফুল, নিয়তির করুন পরিনতিতে সেই ফুলগুলো
আর অনিমেষের কাছ থেকে পাওয়া হলো না রিঙ্কির।
ওদিকে বন্ধুবান্ধবদের কাছ থেকে খবর পেয়ে ছুটে আসে পল্লবী। অনেক খোঁজা খুঁজির পর শেষমেশ অসহায়
ভাবে রিঙ্কিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে এগিয়ে গেলো সে। দেখলো রিঙ্কি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। হতে কিছু
কাগজপত্র আর কিছু গোলাপ ফুল। রিঙ্কির অন্তরে তখন দাউদাউ করে জ্বলছে এতোদিনের জমে থাকা আবেগ,
ভালোবাসা, না বলা কতো কথা, প্রতি রাতে তার প্রিয় অনু কে ঘিরে একরাশ রঙিন স্বপ্ন এবং জীবন্ত অবস্থায়
তাঁকে একটি বারের জন্য না দেখার আক্ষেপ। এমতবস্থায় পল্লবীকে দেখে জড়িয়ে ধরলো রিঙ্কি এবং পুড়ে দগদগে
হয়ে যাওয়া স্মৃতিগুচ্ছগুলো ছাই হয়ে অঝোর ধারায় ঝরে পড়ল অশ্রু বেশে। পল্লবীরও চোখের জল বাঁধ মানল
না। এমনই ভাগ্যের পরিহাস সেদিনই অনিমেষের প্রথম সেমিস্টারের ফল প্রকাশিত হয়। সে রেকর্ড নাম্বার পেয়ে
প্রথম হয়েছে অথচ তখন সে শবাগারে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথ ছিলো তার প্রাণ তাই বোধহয় রবি ঠাকুরের
মতো সে-ও বিদায় নিলো শ্রাবণ মাসে। সকাল থেকে ভিজে চলেছে কলকাতা। কাঁদতে কাঁদতে রিঙ্কি পল্লবীকে
বললো : আচ্ছা পল্লবী অনু টা বড্ড লাজুক তাই না? প্রথম দিনও বিশ্ববিদ্যালয়ের উল্টো দিক থেকে লুকিয়ে
লুকিয়ে আমায় দেখছিলো আর আজও কোথাও না কোথাও থেকে লুকিয়ে আমায় দেখছে। তাও একবারও
আমাকে সামনাসামনি দেখা দিলো না। অথচ নিজেই দেখা করার প্রস্তাব দিয়েছিলো। বড্ড বেইমান ছেলে টা।
আমাকে ছেড়ে একা পালিয়ে গেলো চিরদিনের জন্য। সেদিন বৃষ্টি তে ভিজতে ভিজতে রিঙ্কি শুধু একটা গানই
গিয়েছিল – “আমার প্রাণের ‘পরে চলে গেল কে বসন্তের বাতাসটুকুর মতো”।
দুজনের জীবনেই বাসা বেঁধেছিল এক নিঃস্বার্থ নীরব ভালোবাসা। কিন্তু এক অপ্রত্যাশিত দমকা হাওয়ায় সব চূর্ণ
বিচূর্ণ হয়ে গেলো। রিঙ্কির জীবনে এই অভিশপ্ত প্রথম দেখার স্মৃতি তাকে আজও কুড়ে কুড়ে খায়।
Name : Souvik Dey Roy
Address : 3/50 Jatin Das Nagar, PO and PS Belgharia, Kolkata – 700056