নিজস্ব প্রতিবেদক, গুরুদাসপুর:
কোভিড -১৯ এর বৈশ্বিক মহামারীর কারনে গত বছরের ১৭ মার্চ থেকে দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিলো। প্রায় দেড় বছর পর ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পুনরায় চালু করার নির্দেশ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। দেড় বছর বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীর অভাবে চরম চ্যালেঞ্জে পড়েছে নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার অর্ধশত কিন্ডার গার্ডেন প্রতিষ্ঠান।
করোনাকালে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কওমি, হাফেজিয়া, মক্তব খোলা থাকায় কিন্ডার গার্ডেনের অধিকাংশ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন সেখানে। অর্থের অভাবে জীবিকার তাগিদে অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারী অন্যত্র চলে গেছেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকা প্রতিষ্ঠানের ভাড়া দিতে না পারায় প্রতিষ্ঠানের ঘর ছেড়ে দিতে হয়েছে। প্রতিষ্ঠান রক্ষা করতে গিয়ে অনেকে ব্যাংক, এনজিও সহ অন্যত্র থেকে ঋন নিয়ে ঘরভাড়া মিটাতে গিয়ে ঋনে জর্জড়িত হয়ে পড়েছেন। কিছু প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও উদ্যোক্তা অর্থনৈতিক অভাবে তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানা গেছে।
গুরুদাসপুর উপজেলা কিন্ডার গার্ডেন সমিতির সভাপতি এমদাদুল হক জানান, উপজেলার অর্ধশত কিন্ডার গার্ডেন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে প্রায় ৭হাজার শিক্ষার্থী লেখাপড়া করতো। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক-কর্মচারি মিলে প্রায় পাঁচ শতাধিক বেকার মানুষ কর্মরত ছিলেন। করোনার থাবায় দীর্ঘ দেড় বছর যাবত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সকল শিক্ষক কর্মচারি বেকার হয়ে পড়েছেন। তবে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ধার দেনা করে শিশুদের ভবিষ্যত বিবেচনা করে শিক্ষানুরাগি উদ্যোক্তা ও প্রতিষ্ঠান প্রধান প্রতিষ্ঠান ধরে রাখার আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছেন।
নাটোর জেলা কিন্ডার গার্ডেন এসোসিয়েশনের নেতা গুরুদাসপুর ড. জাফরুল ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইয়াকুব আলী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানে প্লে থেকে ৮ম শ্রেনি পর্যন্ত প্রায় ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী ছিল। ১৮ মাস বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর স্কুল খোলার পর উপস্থিতির হার ৪০ শতাংশ। অনেক শিক্ষার্থী লেখাপড়া ছেড়ে দিনমজুরের কাজ বেছে নিয়েছে। অনেক শিক্ষক ও কর্মচারীর উপস্থিতি নেই। তারা অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন। করোনায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও সরকারের কোন অনুদান বা প্রনোদনা না পাওয়ায় প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখতে ৪লাখ টাকা ঋন নিতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
উপজেলার অন্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান প্রধানের সাথে কথা বলে জানা যায়, সামগ্রিকভাবে কিন্ডার গার্ডেন স্কলের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী না পাওয়ার কথা জানা গেছে। এছাড়া প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষক-কর্মচারি আর্থিকভাবে চরম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তবুও সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা সুদিনের আশায় প্রতিষ্ঠান বাঁচিয়ে রাখার আপ্রান চেষ্টায় করছেন।