নিজস্ব প্রতিবেদক:
- প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের অগ্রাধিকার প্রকল্প ক্রয় কমিটিতে যাচ্ছে আজ
সমুদ্রের নীলাভ জলরাশি ভেদ করে কক্সবাজারে অবতরণ করবে এ৩৮০’র মতো বিশালাকৃতির প্লেন-এমনই স্বপ্ন দেখেন প্রধানমন্ত্রী। এই বিমানবন্দরকে রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তোলার কথা বার বার উচ্চারণ করেছেন। মূলত তার লালিত স্বপ্ন থেকেই অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে আজ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন পেতে যাচ্ছে এটি। দেশের অন্য আর দশটা অগ্রাধিকার মেগা প্রকল্পের মতোই সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেই ক্রয় কমিটিতে ঠাঁই পেয়েছে প্রকল্পটি। জানা গেছে, এতে ১৬৩০ কোটি টাকার সিনোহাইড্রোর দরপত্রটি টিকেছে। আজকের সভায় আর্থিক অনুমোদনের পর অনতিবিলম্বে দেয়া হবে কার্যাদেশ। সেই হিসেবে আগামী ফেব্রুয়ারিতেই আনুষ্ঠানিকভাবে শুভ উদ্বোধন করা হবে এই বিমানবন্দরটির। এরই মধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে আনুষঙ্গিক প্রক্রিয়া। করোনাক্রান্তি কালেও সব ধরনের জটিলতা ও প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ দুর্বারগতিতে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসে। বেবিচক চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মোঃ মফিদুর রহমানের বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের এই প্রকল্প এগিয়ে নিতে যেতে হবে যে কোন মূল্যে। অতীতে যাই ঘটুক আর যাই হয়ে থাকুক এখন আর পিছু ফেরার অবকাশ নেই। আজকের ক্রয় কমিটিতে অনুমোদন পেলে খুব শীঘ্রই কার্যাদেশ প্রদান করে প্রকল্পের গ্রাউন্ড ব্রেকিং করা হবে। তিনি বলেন, দেশের প্রধান পর্যটন জেলা শহর কক্সবাজারকে যুগোপযোগী বিমানবন্দর হিসেবে গড়ে তোলার জন্য একটি প্রকল্প নেয় সরকার। এটি প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প। এর অধীনে একটি অত্যাধুনিক রানওয়ে নির্মাণের কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য দরপত্র আহ্বান করে সব চূড়ান্ত করে আর্থিক দর পাঠানো হয়েছে ক্রয় কমিটিতে।
এ বিষয়ে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শিতায় অনেক প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও এগিয়ে যাচ্ছে কক্সবাজারকে আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার কাজ। ইতোমধ্যে প্রথম দফার কাজ প্রায় শেষের পথে। এখন শুধু ইন্সুট্রুমেন্টাল ল্যান্ডিং সিস্টেম ইনস্টল করার জন্য দ্রুতগতিতে কাজ চলছে যা আগামী দুই মাসের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার টার্গেট রয়েছে। তখনই দিবারাত্রি উড়োজাহাজ ওঠনাামার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।
বেবিচক সূত্র জানায়, কক্সবাজার বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করার স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রীই প্রথম প্রকাশ করেন বছর পাঁচেক আগে। মূলত তারই আগ্রহ ও নির্দেশনায় প্রকল্পটি বেশ গুরুত্ব দিয়ে হাতে নেয়া হয়। দুটি ভাগে নেয়া হয় উন্নয়ন প্রকল্পের। ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ের সম্প্রসারণ কাজ শেষ হয়েছে যা এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। কিন্তু স্থানীয় বসতভিটা উচ্ছেদ সংক্রান্ত জটিলতায় তা সময় লাগছে। এ অবস্থায় দ্বিতীয় পর্যায়ের অত্যাধুনিক রানওয়ে সম্প্রসারণের প্রকল্প নামে নেয়া হয়েছে, যেটা সেটাই আজ (বুধবার) ক্রয় কমিটিতে অনুমোদনের জন্য নেয়া হয়েছে। এই বিমানবন্দরকে রিজিওনাল হাব হিসেবে গড়ে তোলার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আঞ্চলিক হাব গড়ে তোলার পাাশাপাশি সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় আকাশপথে দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা থেকেই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে বেবিচক কক্সবাজার বিমানবন্দর রানওয়ে সম্প্রসারণ প্রকল্পের কাজ হাতে নেয়। বিমানবন্দরের বর্তমান ৯ হাজার ফুট দীর্ঘ রানওয়েকে মহেশখালী চ্যানেলের দিকে আরও এক হাজার ৭০০ ফুট সম্প্রসারিত করে মোট ১০ হাজার ৭০০ ফুটে উন্নীত করা হবে। সম্প্রসারিত হতে যাওয়া ১৭শ’ ফুট রানওয়ের ১৩শ’ ফুটই থাকবে সাগরের পানির মধ্যে। দেশে এই প্রথমবারের মতো সমুদ্রের ভেতরে ব্লক তৈরি করে রানওয়ে সম্প্রসারিত করা হবে।
এ বিষয়ে চেয়ারম্যান এয়ারভাইস মার্শাল মফিদুর রহমান দৈনিক জনকণ্ঠকে বলেন, কক্সবাজার বিমানবন্দরের প্রথম দফা প্রকল্পে ছিল রানওয়ের দৈর্ঘ্য ৬ হাজার ফুট থেকে ৯ হাজার ফুটে উন্নীত করা এবং সমুদ্রের ভেতর বাতিঘরের মতো নান্দনিক কিছু কাজ করার। সেটা সেভাবে অগ্রসর হলেও স্থানীয় ভূমি হুকুম দখল সংক্রান্ত কিছু জটিলতা সময় লেগেছে। যা এখন সমাধান হয়ে গেছে। ৯ হাজার ফুট উন্নত করার পরই এখন হাত দেয়া হবে ১০ হাজার ৭শ’ ফুটে উন্নীত করা। এটাই আজকের ক্রয় কমিটিতে অনুমোদন পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী আব্দুল মালেক জানান, কক্সবাজার বিমানবন্দর উন্নয়নের প্রথম পর্বের কাজের পর দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ২০১৯ সালের নবেম্বরে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে বেবিচক। শর্ত দেয়া হয় সমুদ্রপৃষ্ঠের ওপর রানওয়ে নির্মাণের সক্ষমতা ও অভিজ্ঞতা থাকতে হবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানকে। তখনকার দরপত্রটি ক্রয় কমিটিতে অনুমোদন না পাওয়ায় তা বাতিল করে দ্বিতীয় দফা দরপত্র আহ্বান করা হয়। এতে অংশ নেয় ৭টি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান।
জানা গেছে, এবার অংশ নেয় সান ইনিঞ্জনিয়ারিং, লটি এএমএল জেভি, এইচডি এনডিই জেভি, সিএইচইসি মির আখতার জেভি, চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কো, সিওয়াইডব্লিউবি- সিসিইসিসি জেভি ও সিনো হাইড্রো কর্পোরেশান লি। এগুলোর মধ্যে শেষের দুটো সিওয়াইডব্লিউবি- সিসিইসিসি জেভি ও সিনো হাইড্রো কর্পোরেশান লি প্রযুক্তিগত মূল্যায়নে উত্তীর্ণ হয় যার মধ্যে আর্থিক প্রস্তাবে টিকে যায় সিনোহাইড্রো কর্পোরেশান লি।
জানা গেছে, কক্সবাজার সমুদ্রতীর ঘেঁষে অত্যাধুনিক এজিএল সিস্টেম তৈরি করা হবে যা রাতে অন্ধকারে উড়োজাহার উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় দেখা দেবে অন্যন্য এক নৈসর্গিক দৃশ্য। মনোমুগ্ধকর নির্মাণশৈলীতে সাজানো হয়েছে গোটা এয়ারপোর্টের ড্রয়িং ডিজাইন। এয়ার ফিল্ড লাইটিং সিস্টেম সমুদ্রের জলাবদ্ধাত রক্ষা, সমুদ্র পুনরুদ্ধার, নমনীয় ফুটপাথ, সমুদ্রের যথাযথ পদ্ধতিতে আলোক ব্যবস্থার মতো দৃষ্টিনন্দন বস্তুর সমাহার থাকছে এখানে। কক্সবাজার ঘিরে সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ সম্পর্কে বিমান ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এ্যাডভোকেট মাহবুব আলী এমপি দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, বিমানবন্দরের আশপাশে গড়ে ওঠা কয়েকটি বস্তির জন্য বড় ধরনের প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে আজকের অবস্থানে আসা সম্ভব হয়েছে। বস্তির মধ্যে দোতলা ঘর বাড়ি তোলে চিরস্থায়ী হওয়ার মানসিকতায় নানা শ্রেণীর লোকজনের বাধার মুখে পড়তে হয়েছে। বার বার বৈঠক করে তাদের বুঝিয়ে পুনর্বাসনের জন্য ১৪০টি ভবন করার প্রকল্পও নিতে হয়েছে। যার মধ্যে ২০টির কাজ হয়ে গেছে। এছাড়া অন্যদের টাকা ও জমি দেয়া হয়েছে। এখন আমাদের টার্গেট আগামী দুই মাসের মধ্যেই এএলএস ইন্সটল করে দিবারাত্রি বিমানবন্দর চালু করা। দ্বিতীয়ত আজকের ক্রয় কমিটিতে অনুমোদন পেলে শুধু বাকি থাকবে কার্যাদেশ দেয়া। মোট কথা আমাদের জোর প্রস্তুতি রয়েছে আগামী ২৬ মার্চের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে এর গ্রাউন্ড ব্রেকিং উদ্বোধন করা। কাজ শুরুর তিন বছরের মধ্যে চেষ্টা থাকবে স্বপ্নের এই বিমানবন্দর নির্মাণ কাজ শেষ করে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া।