নিউজ ডেস্ক:
কোন অপপ্রচারই কক্সবাজারে সৈকতের পর্যটক ঠেকানো যাচ্ছে না। সম্প্রতি পর্যটকদের নিয়ে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের গলাকাটা বাণিজ্য ও কথিত পর্যটক গৃহবধূ ধর্ষিত হওয়ার ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রকাশিত হলেও সৈকতের শহর কক্সবাজারে পর্যটকদের কোনো কমতি নেই। গতকাল শনিবার খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের বড়দিনে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে মেঘলা আকাশ উপেক্ষা করে হাজার হাজার পর্যটক এর উপস্থিতি দেখা গেছে।
সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কিছু অনাকাঙ্খিত ঘটনার প্রেক্ষিতে কক্সবাজার শহর, হোটেল-মোটেল জোন এবং বিস্তীর্ণ সৈকত এলাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে তৎপরতা জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। পাশাপাশি হোটেল মালিক ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের দেখা গেছে। তারা আগের চেয়েও নমনীয় এবং আতিথেয়তার মনোভাব নিয়ে পর্যটকদের সেবা দিচ্ছেন। গতকাল শনিবার বিকেলে সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে আগের মতই নির্ভয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন এবং সাগরে গোসল করে আনন্দ নিচ্ছেন পর্যটকরা।
এদিকে ৩০০ টাকার ডাল ভাত, ৭৫ টাকার চায়ের কাপ ও অতিরিক্ত হোটেল ভাড়া এবং পরিবহন ভাড়া আদায়ের বিষয়টি সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, যারা এই কাজগুলো করে পর্যটকদের সাথে গলাকাটা বাণিজ্য করেছেন তাদের অধিকাংশই কক্সবাজারের বাইরের মানুষ। তারা মৌসুমি ব্যবসা করার জন্য পর্যটন শহর ও সৈকত এলাকার বিনোদন কেন্দ্রগুলোতে এসে এই সুযোগটা নিয়েছে।
একইভাবে কয়েকদিন আগে যেই পর্যটক গৃহবধূ কিছু বখাটে সন্ত্রাসীদের হাতে ধর্ষিত হওয়ার ঘটনাটি ঘটেছে, তাতেও দেখা গেছে ওই পর্যটক গৃহবধ‚ কয়েক মাস ধরে কক্সবাজারেই অবস্থান করছিলেন। যাদের হাতে ধর্ষিত হওয়ার খবর প্রচারিত হয়েছে তারা ওই গৃহবধূর পূর্বপরিচিত। তাই বিভিন্ন মহল থেকে নানা ধরনের পশ্ন উঠেছে। এসব কারণে একটি প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে। তাহলে কি কক্সবাজারের বদনাম রটানোর জন্য এবং ব্যাপক পর্যটক স্রোত ঠেকানোর জন্য কোন মহলের পক্ষ থেকে এগুলোর পেছনে কোন ইন্দন আছে কি?
এ প্রসঙ্গে ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটক গৃহবধ‚ ধর্ষণের বিষয়টি নানা ধরনের প্রশ্ন এবং সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও ধর্ষক হিসেবে যাদের নাম বলা হচ্ছে তারাও এলাকায় বখাটে এবং নানা ধরনের অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত। তাই স্বভাবতই প্রশ্ন আসছে ওই মহিলার সাথে ওই বখাটেদেট অন্য কোন লেনদেনের বিষয়ে আছে কিনা পুলিশ তা খতিয়ে দেখছে। এদিকে কক্সবাজার পর্যটন এলাকায় যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন নতুন করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কক্সবাজারে পর্যটক নারী ধর্ষণের ঘটনার পর নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। ইতোমধ্যে ভ্রমণকারী পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সেবার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৭টি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার বিকালে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্তসমূহ গৃহীত হয়: ১. সকল আবাসিক হোটেলে রুম বুক দেয়ার সময় জাতীয় পরিচয়পত্র প্রদর্শন ও দাখিল আবশ্যক। ২. আবাসিক হোটেলসমূহে অনুসরণীয় একটি অভিন্ন আদর্শ কর্মপদ্ধতি (এসওপি) প্রনয়ণ করা হবে। ৩. প্রতিটি হোটেলে কক্ষ সংখ্যা, ম‚ল্য তালিকা ও খালি কক্ষের সংখ্যা সম্বলিত ইলেকট্রনিক ডিসপ্লে বোর্ড স্থাপন করতে হবে। ৪. পর্যটকদের সুবিধার্থে ডলফিন মোড়ে সুবিধাজনক স্থানে একটি তথ্যকেন্দ্র ও হেল্পডেস্ক থাকবে। ৫. প্রতিটি আবাসিক হোটেলে নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা চালু/জোরদার করতে হবে। ৬. হোটেল-মোটেল জোনে অবৈধ পার্কিং এবং সমাজবিরোধীদের কর্মকান্ড বন্ধে অভিযান জোরদার করা হবে। ৭. হোটেল মোটেল গেস্ট হাউজের কর্মকর্তা কর্মচারীদের জন্য প্রশিক্ষণের আয়োজন করবে। তাতে সহায়তা করবে জেলা প্রশাসন।
জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশীদের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় পুলিশ সুপার মো. হাসানুজ্জামান, ট্যুরিস্ট পুলিশের পুলিশ সুপার মো: জিললুর রহমান, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এডভোকেট ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান, সহ-সভাপতি মো. রেজাউল করিম, প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহেরসহ পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।