বুধবার , এপ্রিল ১৭ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / এসো হে বৈশাখ: করোনার কারণে মঙ্গল শোভাযাত্রা জনসমাগম নয়, ঘরে বসেই বর্ষবরণ

এসো হে বৈশাখ: করোনার কারণে মঙ্গল শোভাযাত্রা জনসমাগম নয়, ঘরে বসেই বর্ষবরণ


নিউজ ডেস্কঃ
‘এসো হে বৈশাখ এসো’ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ গান দিয়ে বাংলা নববর্ষকে বরণ করে আসছে বাঙালি। আজ পহেলা বৈশাখ ১৪২৭। নতুন দিনের প্রার্থনায় সুস্বাগতম বাংলা নববর্ষ। কিন্তু বিশ্বব্যাপী মহামারী কোভিড-১৯ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এই পহেলা বৈশাখে মাঠে, ঘাটে, হলে, কোন জনসমাগম হবে না। সবাইকে ঘরে থেকে ডিজিটাল পদ্ধতিতে পহেলা বৈশাখ উদযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতি ও গর্বিত ঐতিহ্যের স্মারক হচ্ছে পহেলা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন, একটি নতুন বছরের শুভ সূচনা। শুভ নববর্ষ। স্বাগত ১৪২৭। চৈত্রের রুদ্রমূর্তির পরের দিনের শেষে আজ বাংলার ঘরে ঘরে নতুন বছরকে আবাহন জানাবে সব বয়সের মানুষ। বাঙালির জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিন এই পহেলা বৈশাখ। আজ নব আলোর কিরণশিখা শুধু প্রকৃতিকে নয়, রঞ্জিত করে নবরূপে সাজিয়ে যাবে প্রত্যেক বাঙালির হৃদকোণও। নব আলোর শিখায় প্রজ্বলিত হয়ে শুরু হবে আগামীদিনের পথচলা। আজ সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে পুরনো সব জরা গ্লানিকে মুছে ফেলে সবাই গাইছে নতুন দিনের গান। বৈশাখী উৎসবের মধ্যে দিয়ে যেন বাঙালি তার শিকড় খুঁজে পায়।

এত বছর চারুকলার মঙ্গল শোভাযাত্রা ও রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে উচ্চারিত হতো বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশ ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ প্রতিষ্ঠার বাণী। কিন্তু এবার করোনার প্রাদুর্ভাবের কারণে মঙ্গল শোভাযাত্রা ও রমনার বটমূলে ছায়ানটের অনুষ্ঠান হবে না। ছায়ানট দুঃখী ও দিনমজুরদের মাঝে খাবার বিতরণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। বটমূলের অনুষ্ঠানটি হবে বিটিভির মাধ্যমে সংক্ষিপ্ত পরিসরে।

‘উৎসব নয়, সময় এখন দুর্যোগ প্রতিরোধের’ এ প্রতিপাদ্যে সীমিত আকারে বর্ষবরণের আয়োজন করছে ছায়ানট। আর এটি করা হবে ডিজিটাল উপস্থাপনার মধ্য দিয়ে। এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ছায়ানটের সভাপতি সনজীদা খাতুন। জানা যায়, বিটিভির সহায়তায় পহেলা বৈশাখের (১৪ এপ্রিল) সকাল ৭টা থেকে ১ ঘণ্টার একটি অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। সেখানে সনজীদা খাতুনের বক্তব্য ও ছায়ানটের পূর্বের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানের বেশকিছু সংকলিত অংশ ও গান যুক্ত করা হবে। ১৯৬১ সালে ছায়ানটের জন্মের পর ১৯৬৭ সাল থেকে প্রতিবছর রমনার বটমূলে পহেলা বৈশাখের ভোরে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে আসছে। করোনাভাইরাসের কারণে প্রত্যেকেই ব্যক্তি, পরিবার ও সামাজিকভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিরাপদ থাকব এই প্রত্যাশায় রমনা বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ অনুষ্ঠানটি হচ্ছে না।

বিগত বছরের অনেক অসন্তোষ-না পাওয়ার দুঃখ-গ্লানিকে পেছনে রেখে নতুনের কেতন ওড়ানো বৈশাখ এসেছে নতুন সম্ভাবনা, প্রত্যাশা ও সমৃদ্ধি অর্জনের লড়াইয়ে জয়লাভের প্রতিশ্রুতি ও প্রেরণা নিয়ে। আনন্দ-হিল্লোল, উচ্ছ্বাস-উষ্ণতা এবার থাকছে না নতুন বছরকে ঘিরে।

সৌর পঞ্জিকা অনুসারে বাংলা বার মাস অনেক কাল আগে থেকেই পালিত হতো। এই সৌর পঞ্জিকার শুরু হতো গ্রেগরিয় পঞ্জিকায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি সময় হতে। মোগল সম্রাট আকবরের নির্দেশে তার সভাসদ আমীর ফতেহউল্লাহ খান সিরাজী প্রায় চারশ বছরেরও আগে হিজরি সনের সঙ্গে মিল রেখে ফসলি সন হিসেবে বাংলা সন বা বঙ্গাব্দের প্রচলন করেছিলেন। তখনই বাংলা সনের সূচনা হয় বৈশাখের প্রথমদিন থেকে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত তা এই জনপদের মানুষের গর্বিত ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃত। বৈশাখী উৎসব সংস্কৃতির অন্যতম সমৃদ্ধ এক উপাদানে পরিণত হয়েছে। এককালে বাংলা নববর্ষে হালখাতাই মুখ্য ছিল। এখনও হালখাতা আছে। ক্রমেই মুখ্য হয়ে উঠছে আনন্দ-উৎসব।

নাচ, গান, মেলা, নতুন হালখাতা, মিষ্টিমুখ, মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ উৎসবের নানা অনুষঙ্গে নববর্ষ উদযাপন নিত্যনতুন মাত্রায় উজ্জ্বলতর হয়ে উঠেলেও এবার রাস্তাঘাটে, মাঠে, হলে এসব হবে না। সবাইকে নিজ নিজ ঘরে থেকে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করতে হবে। ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে সব বয়সী মানুষের সর্বজনীন উৎসব হিসেবে উদযাপিত হয়ে আসছে এই পার্বণ। গতকাল চৈত্রের শেষ দিনে গ্রাম ও শহরে ব্যবসায়ীরা গত বছরের বিকিকিনির হিসাব-নিকাশ চুকিয়ে দিয়েছেন। আজ খুলবেন তারা হালখাতা। এবার বসছে না বৈশাখীমেলা। তাই পটুয়া আর মৃৎশিল্পীরা মেলায় নিয়ে আসছেন না তাদের সৃজন সম্ভার। নাগরদোলায় চড়া আর খেলনা, পুতুল, বাঁশিসহ বৈশাখীমেলার রকমারি পণ্য কেনার দুর্নিবার আকর্ষণে ছেলে-বুড়ো ঘর হতে বের হবেন না। আশপাশে তাকালে দেখা যাবে না পোশাকেও বাঙালিয়ানার ছাপ। নারীরা আজ ঘরে পড়বেন নানা রঙের শাড়ি। কেউ কেউ খোঁপা বা বেণীতে গুজবেন নানা রঙের ফুল। হাতে পড়বেন চুড়ি, কানে দুল। ছেলেরা পরবেন পাঞ্জাবি। হাত বাড়ালেই হয়তো পাওয়া যাবে না হাওয়াই মিঠাই, রঙিন বেলুন, কাঠের পুতুল, মাটির পুতুল, জিলাপি, খৈ-বাতাসা, ঘরগেরস্তির দরকারি বস্তুসহ নানা সামগ্রী।

বাণী : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ পৃথক পৃথক শুভেচ্ছা বার্তায় দেশবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। তারা দেশবাসীকে করোনাভাইরাসের সংক্রামণ থেকে বেঁচে থাকতে নিজ নিজ ঘরে অবস্থান করতে আহ্বান জানিয়ে সবার মঙ্গল কামনা করেছেন।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন, যদি করোনার প্রাদুর্ভাবে অনেক আগেই ঘোষিত সাধারণ ছুটির মধ্যে পড়ে আছে আজকের দিনটি। রাতের আঁধার ঠেলে ভোরের রবি যখন উঁকি দেবে ঠিক তখনই শুরু হবে পহেলা বৈশাখী। সংবাদপত্রগুলো বের করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। রেডিও-টিভিতে প্রচারিত হচ্ছে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।

আরও দেখুন

ঈদ পর ফের বাড়লো হিলিতে আলু,পেঁয়াজ, রসুন ও আদার দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক, হিলি (দিনাজপুর):দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে আলু আমদানি। তবে আমদানিতেও কমছে না ভারতীয় …