নিউজ ডেস্ক:
বাংলাদেশে লিকুইড ন্যাচারাল গ্যাসের (এলএনজি) প্রতি মাসে একটি করে বছরে ১২টি চালান পাঠাতে প্রস্তুত ব্রুনাই।
সম্প্রতি ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহর বাংলাদেশ সফরকালে দুদেশের মধ্যে সম্পাদিত সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) আওতায় এলএনজি সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছে দেশটি। এছাড়াও, জ্বালানি ক্ষেত্রে নতুন আরও কী কী সহযোগিতা হতে পারে তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
ব্রুনাইয়ের সুলতান হাসানাল বলকিয়াহ ১৫ থেকে ১৭ অক্টোবর বাংলাদেশ সফর করেন। রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে সুলতান এই সফর করেন।
বাংলাদেশে এটি তার প্রথম সফর। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সুলতানের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সফরকালে দুদেশের মধ্যে একটি চুক্তি ও তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে।
ব্রুনাইয়ের সঙ্গে সরাসরি বিমান যোগাযোগ, জনশক্তি রপ্তানি, তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস ও পেট্রোলিয়াম সরবরাহসহ পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে সই হয় এসব দলিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ছোট দেশ ব্রুনাই তেল ও গ্যাস সমৃদ্ধ।
বাংলাদেশ এক সময় ব্রুনাই থেকে জ্বালানি আমদানি করলেও বর্তমানে তা চালু নেই। সুলতানের সফরকালে পুনরায় জ্বালানি সহযোগিতায় কাঠামোগত এমওইউ সই হয়েছে। ব্রুনাই এখন শুধু তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল থাকতে চায় না।
তারা তাদের অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে চায়। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে কৃষি, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহী দেশটি।
সুলতানের সফরের কারণে এসব ক্ষেত্রে সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও, আসিয়ানের গুরুত্বপূর্ণ দেশ ব্রুনাইয়ের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করা রোহিঙ্গা সংকট নিরসনের জন্যেও তাৎপর্যপূর্ণ।
সুলতানের সফরের ফলোআপ হিসাবে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে জানতে চাইলে বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রুনাই দারুসসালামের হাইকমিশনার হাজি হারিস বিন ওথম্যান বুধবার যুগান্তরকে বলেন, ‘এটা খুবই কঠিন প্রশ্ন। আমাদেরকে অবশ্যই এমওইউ ও চুক্তির বাস্তবায়নের কাজ করতে হবে।
কারণ এসব এমওইউ আমাদের সম্পর্ক জোরদার করবে। এক্ষেত্রে অনেক চ্যালেঞ্জ থাকলেও আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে বেশকিছু সুযোগও রয়েছে।
আমাদের দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ অনেক কম। ভবিষ্যতে খুব তাড়াতাড়ি আমাদের অবশ্যই বাণিজ্য বাড়াতে হবে।
এক্ষেত্রে, বিভিন্ন অংশীদারদের কাছ থেকে আমাদের সমর্থন দরকার। উভয় দেশের ব্যবসায়ী মহলকে বাণিজ্য ক্ষেত্রে সুযোগ খুঁজে বের করতে হবে।
চ্যালেঞ্জ রয়েছে কিন্তু এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে সই হওয়া এমওইউগুলোর দিকে মনযোগী হতে হবে। আমাদের সম্পর্ক অব্যাহতভাবে জোরদার হবে।’
জ্বালানি খাতে সহযোগিতা সম্পর্কিত এক প্রশ্নের জবাবে ব্রুনাইয়ের হাইকমিশনার বলেন, ‘আমরা বছরে ১২টি এলএনজি চালান পাঠাতে প্রস্তুত। ১০ থেকে ১৫ বছর অর্থাৎ দীর্ঘমেয়াদে এ পরিমাণ এলএনজি পাঠানোর সক্ষমতা আমাদের রয়েছে।
বল এখন বাংলাদেশ সরকারের কোর্টে। এ বিষয়ে সরকার অব্যাহতভাবে আলোচনা করছে। আমরা আমাদের এলএনজি বাংলাদেশে সরবরাহ করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশেরও এটির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। তবে এটা সহজ কাজ নয়। উভয় দেশকেই একমতে পৌঁছাতে হবে। তবেই তা হবে উইন উইন সিচুয়েশন। তবে বেসরকারি ব্যবসায়ী পর্যায়ে ব্রুনাই বাংলাদেশে এলপিজি ও ডিজেল রপ্তানি করছে। তবে সেটা পরিমাণে খুব বেশি পরিমাণে নয়।’
বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের মধ্যে সরাসরি বিমান চলাচলের চুক্তি বাস্তবায়নে কোনো অগ্রগতি আছে কিনা জানতে চাইলে হাজি হারিস বিন ওথম্যান বলেন, ‘কোম্পানিগুলো জেনারেল সার্ভিস এজেন্ট (জিএসএ) পেতে আগ্রহী। কোম্পানিগুলো আলোচনার জন্য ব্রুনাই গেছে। এ ব্যাপারে এখনও কোনো আপডেট আমার জানা নেই।’
অপরাপর ক্ষেত্রে সহযোগিতার অগ্রগতি জানতে চাইলে ব্রুনাইয়ের হাইকমিশনার বলেন, ‘কৃষি ও মৎস্য খাতে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কথা আছে। এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপকে সক্রিয় করতে হবে। বাংলাদেশের অভিজ্ঞতা আছে। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সহায়তা চাই।
প্রাণিসম্পদ আমাদের অন্যতম আগ্রহ। আমরা অর্থনীতিকে বহুমুখী করতে চাই। আমরা তেল ও গ্যাস সম্পদের ওপর নির্ভরশীল থাকতে চাই না। কিছু কিছু কোম্পানি এখানে মাংস প্রক্রিয়া করতে চায়।
দেখা যাক আমরা কি করতে পারি। আমি আশা করি, এমওইউগুলো কার্যকর করা হবে। এটাই এই মুহূর্তে আমাদের অগ্রাধিকার।’