সরকারের ভিশন-২০৪১-এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে এবার বিনিয়োগ বাড়াতে এমন একটি টার্গেট গ্রহণ করা হচ্ছে- যার মাধ্যমে উন্নত দেশের ন্যায় ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে বাংলাদেশে। শুধু তাই নয়, বিশ্বব্যাংকের বিনিয়োগ পরিবেশ সহজীকরণ (ইজি অব ডুয়িং বিজনেস) কার্যক্রম স্থগিতের পর ব্যবসা-বাণিজ্যে যে সংস্কার কার্যক্রম থেমে গিয়েছিল এর মধ্য দিয়ে আবারও সেই কার্যক্রম শুরু হবে। উপরন্তু বিশ্বব্যাংকের কর্মসূচিটি শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামভিত্তিক পরিচালিত হলেও সরকারের নতুন উদ্যোগটি সারা দেশব্যাপী পরিচালিত হবে। আর এই সংস্কার কর্মসূচি এমনভাবে বাস্তবায়ন হবে যাতে প্রতি বছর অন্তত ১০ শতাংশ হারে নতুন বিনিয়োগ রেজিস্ট্রেশন ও শিল্প-কারখানা গড়ে ওঠে।
‘বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন’ শীর্ষক এই কর্মসূচির মূল ভিত্তি হবে- ‘রূপকল্প-২০৪১’। অর্থাৎ সরকার ২০৪১ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে যে কৌশল গ্রহণ করেছে-এই কর্মসূচিটি সেই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)-এর পরিচালক জীবন কৃষ্ণ রায় বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারের ‘রূপকল্প -২০৪১’-এর সঙ্গে সমন্বয় রেখে ‘বাংলাদেশের বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়ন’ কার্যক্রম পরিচালনা করতে এরই মধ্যে একটি রূপরেখা প্রণয়ন করা হয়েছে। সেটি কেবিনেট সচিব অনুমোদনও করেছেন। এখন সেই রূপরেখা অনুযায়ী ব্যবসা-বাণিজ্যে সংস্কার কার্যক্রম গৃহীত হবে। বিডার এই কর্মকর্তা জানান, বিশ্বব্যাংকের ব্যবসা সহজীকরণ কার্যক্রম স্থগিতের পরিপ্রেক্ষিতে তার অনুবৃত্তিক্রমে বাংলাদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নয়নে এ কর্মসূচি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তবে বিশ্বব্যাংকের সংস্কার কর্মসূচিটি শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রামভিত্তিক হলেও নতুন কর্মসূচিটি সারা দেশের ৬৪ জেলায় বাস্তবায়ন করা হবে। এর ফলে বিভাগীয় শহরের বাইরেও জেলা পর্যায়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে যে সমস্যাগুলো রয়েছে সেসব সমস্যা সমাধানেও সংস্কার কার্যক্রম গৃহীত হবে এই কর্মসূচিতে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার তার প্রথম ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের পর এখন ‘রূপকল্প-২০৪২’ বাস্তবায়নের লক্ষ্য নিয়েছে। এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে আগামী দুই দশকে ‘মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)’-এর গড় প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৯ দশমিক ০২ শতাংশ হারে। প্রবৃদ্ধির এ পথ ধরে ২০৩১ সালের বাংলাদেশ হবে একটি উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশ। তখন মাথাপিছু জাতীয় আয় হবে ৩ হাজার ২৭১ ডলার। আর ২০৪১ সালের বাংলাদেশে মানুষের মাথাপিছু আয় হবে ন্যূনতম ১২ হাজার ৫০০ ডলার। এই রূপকল্প অনুযায়ী ২০৪১ সালে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা নামিয়ে আনা হবে ২ দশমিক ৫৯ শতাংশে; পাশাপাশি চরম দারিদ্র্য অর্থাৎ যাদের দৈনিক আয় ২ দশমিক ১৬ ডলারের কম, তাদের সংখ্যা কমিয়ে ০ দশমিক ৬৮ শতাংশে নামিয়ে আনা হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের ‘ভিশন-২০৪১’ অর্জনে যে পরিমাণ বিনিয়োগ লাগবে সেটি নিশ্চিত করতে চাইলে দেশে আন্তর্জাতিক মানের বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য যেসব খাতে সমস্যা বা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে- অগ্রাধিকারভিত্তিতে সংস্কারের মাধ্যমে সেই সমস্যাগুলোর সমাধান করা হবে। প্রস্তাবিত কর্মসূচিতে প্রথম ৫০টি সংস্কার কার্যক্রম গৃহীত হবে যা ৫০ সপ্তাহে নিষ্পন্ন করা হবে; ১০০টি সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে তিন বছরের মধ্যে; প্রতি বছর বিনিয়োগের নিবন্ধন ন্যূনতম ১০ শতাংশ বাড়ানোর লক্ষ্য থাকবে; একই সঙ্গে প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে নতুন শিল্প-কারখানা স্থাপনের টার্গেট থাকবে এই কর্মসূচিতে। এই সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিয়মিত বেসরকারি খাতের সঙ্গে অভিজ্ঞতা বিনিময় ও মতামত নেওয়া হবে এবং প্রতি তিন মাস অথবা ছয় মাস অন্তর সংস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি প্রকাশ করা হবে।
এই কর্মসূচিটিতে গৃহীত সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করতে বেঁধে দেওয়া হবে টাইমলাইন। ব্যবসা-বাণিজ্য লাভজনক করতে এবং অন্য দেশগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জন করতে এই কর্মসূচিতে কিছু লক্ষ্য বেঁধে দেওয়া হবে, যেগুলো বাস্তবায়ন হচ্ছে কি-না সেটি মনিটরিং করতে থাকবে একটি উচ্চপর্যায়ের ন্যাশনাল স্টিয়ারিং কমিটি। এই কমিটির চেয়ারম্যান হবেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প এবং বিনিয়োগ উপদেষ্টা; অর্থনীতি, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/উপমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব/সচিব, এফবিসিসিআই, ডিসিসিআই, এমসিসিআই, এফআইসিসিআই এবং উইম্যান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট সদস্য হিসেবে থাকবেন। সদস্য সচিব হবেন বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান।