নিউজ ডেস্ক:
গাড়ি চলাচলের জন্য মোটামুটি প্রস্তুত স্বপ্নের পদ্মা সেতু। প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছে এ সেতু দিয়ে। এখন বিভিন্ন প্রয়োজনে সেতুর ওপর দিয়ে প্রকল্পের গাড়ি এপার থেকে ওপার যাচ্ছে। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও পুরোদমে চলছে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ। এভাবে কাজ এগিয়ে চললে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই পদ্মা সেতু গাড়ি চলাচলের উপযোগী হয়ে যাবে। তবে শতভাগ কাজ শেষ হবে আগামী বছরের মার্চে। আর স্বপ্নের পদ্মা সেতু গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে আগামী বছর জুন মাসে।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুর মূল অংশের কাজ শেষ হয়েছে ৯৪ দশমিক ২৫ শতাংশ। নদীশাসনের কাজ শেষ হয়েছে ৮৪ দশমিক ২৫ শতাংশ এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সার্বিক কাজ শেষ হয়েছে ৮৭ দশমিক ২৫ শতাংশ।
এদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্পে কর্মরত দেশি-বিদেশি শ্রমিক, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে করোনায় আক্রান্ত না হন সে জন্য গত বছর করোনার শুরু থেকেই নেওয়া হয়েছে কঠোর সুরক্ষাব্যবস্থা। এ জন্য গত দেড় বছরে এ প্রকল্পে কাজ করা ৬ হাজারের অধিক কর্মীর মধ্যে এখনও পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ৩ জন। প্রকল্প এলাকায় অনুমতি ছাড়া বাইরের কারও প্রবেশের সুযোগ নেই। এখানে কর্মরত কেউ ছুটিতে গেলে ফেরার পর তাকে হাসপাতালে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষে নেগেটিভ রিপোর্ট নিয়ে তবেই কাজে ফিরতে হয়।
পদ্মা সেতুর কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী দেওয়ান মো. আবদুল কাদের সময়ের আলোকে বলেন, সেতুর অনেক কাজই এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে পরীক্ষামূলক গাড়ি চলাচল ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। কারণ প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত অনেক গাড়িই এখন ব্রিজের ওপর দিয়ে এপার থেকে ওপারে যাচ্ছে। ব্রিজের ওপরে পুরো রাস্তায় পিচ ঢালাইয়ের পর পরীক্ষামূলক গাড়ি চলাচল আগামী ডিসেম্বর নাগাদ করতে চাই আমরা। অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বর নাগাদ পদ্মা সেতু গাড়ি চলাচলের মতো প্রায় উপযোগী হয়ে যাবে। এ সময়ের মধ্যে আমরা পদ্মা সেতুর সব স্ল্যাব, রেলিং, পিচ ঢালাইয়ের কাজ শেষ করতে চাই। তবে আমরা ২০২২ সালের মার্চের মধ্যে পদ্মা সেতুর শতভাগ কাজ শেষ করব এবং জুনে গাড়ি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ১০ ডিসেম্বর সর্বশেষ অর্থাৎ ৪১তম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে পদ্মা সেতু পদ্মা নদীর দুই কূল স্পর্শ করে। সেতুর সড়ক অংশের ২ হাজার ৯১৭টি স্ল্যাবের মধ্যে বসানো হয়েছে ২ হাজার ৮৩১টি। বাকি আছে আর মাত্র ৮৬টি। ২ হাজার ৯৫৯টি রেল স্ল্যাবের সবই বসানো সম্পন্ন হয়েছে। ভায়াডাক্ট বসানোর কাজ সম্পূর্ণ শেষ হয়ে গেছে। পদ্মা সেতুতে ৫ হাজার ৮৩৪টি শেয়ার পকেটের মধ্যে ইতোমধ্যে বসানো হয়েছে ১ হাজার ৯৭৯টি। মূল সেতু ও ভায়াডাক্ট মিলে রোডওয়েতে মোট ১২ হাজার ৩৯০টি প্যারাপেট ওয়াল বা রেলিং বসানো হবে। এর মধ্যে ৩ হাজার ৬০৬টি বসানো হয়েছে। রোডওয়েতে পানিনিরোধক একটি স্তর (ওয়াটার প্রুফ মেমব্রেন) বসানো হবে। এর ওপর সিমেন্ট ও পিচ ঢালাই হবে।
দেওয়ান মো. আবদুল কাদের বলেন, সেতুর ওপরের রাস্তার পিচ ঢালাই আমরা এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করিনি। তবে পরীক্ষামূলকভাবে ৬০ মিটার রাস্তার পিচ ঢালাই করা হয়েছে। বর্ষা শেষ হলে আগামী নভেম্বর নাগাদ শুরু হবে আনুষ্ঠানিকভাবে রাস্তার পিচ ঢালাই। যে ৬০ মিটার রাস্তায় পিচ ঢালাই দেওয়া হয়েছে সে অংশটুকুও চূড়ান্ত ঢালাই হিসেবেই দেওয়া হয়েছে। আমরা আসলে দেখতে চাচ্ছি ঢালাই কেমন হবে বা কোনো সমস্যা দেখা দেয় কিনা।
এদিকে মহামারি করোনা ও চলমান লকডাউনেও পদ্মা সেতুর কাজ চলছে পুরোদমে। গত বছরের ১৭ মার্চ থেকেই পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকাকে একেবারে সুরক্ষা বলয়ে আনা হয়েছে। এখানে বিদেশি কর্মী আছে ৮০০ জনের মতো। দেশি শ্রমিক আছে ৫ হাজার। এর মধ্যে ৩ হাজার শ্রমিককে করোনার টিকা দেওয়া সম্পন্ন হয়েছে। বাকি ২ হাজারের টিকা এখনও দেওয়া হয়নি। এদের টিকা না দেওয়ার কারণ হলো, এদের বয়স ২৫-এর নিচে। তবে সরকার টিকার বয়সসীমা আরও কমানোয় এখন বাকিদেরও টিকা দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে তাদের টিকা দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করা হচ্ছে। চেষ্টা চলছে বিশেষ ব্যবস্থায় তাদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা যাতে করা যায়।
এ বিষয়ে দেওয়ান মো. আবদুল কাদের সময়ের আলোকে বলেন, করোনা ও লকডাউনের কারণে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ থেমে না থাকলেও স্বাভাবিক সময়ের মতো কাজ করা যাচ্ছে না। এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই, পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে কাজের গতি আরও বেশি হতো। করোনার কারণে নির্মাণকাজের সামগ্রী আনা-নেওয়া কাজে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে।
বিশেষ করে বিদেশ থেকে কেমিক্যালসহ বিভিন্ন উপকরণ আনতে জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। যেমন ইংল্যান্ড থেকে কেমিক্যাল আসার কথা, কিন্তু যে কোম্পানি থেকে কেমিক্যাল নেওয়ার কথা ছিল করোনার কারণে সে কোম্পানি এখন বন্ধ। এভাবে বিভিন্ন দেশ থেকে কেমিক্যাল আনতে দুই থেকে তিন মাস দেরি হয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে প্রথমে যে দেশ থেকে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়, করোনার মধ্যে সে দেশের কারখানাটি বন্ধ হয়ে গেছে। পরে ভারত থেকে সে কেমিক্যাল আনতে হয়। কিন্তু এগুলো নতুন করে আনার উদ্যোগ নিতে তো সময় লেগে যায়। যেমন কয়েক মাস আগে অস্ট্রেলিয়া থেকে কেমিক্যাল আনার কথা ছিল, কিন্তু করোনার কারণে দেশটির সংশ্লিষ্ট কোম্পানির কারখানাটি বন্ধ হয়ে যায়। পরে সে কেমিক্যাল ইংল্যান্ড থেকে আনা হয়। এ ধরনের কিছু সমস্যা ছাড়া পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজে আর কোনো বিঘ্ন ঘটছে না করোনায়।