শুক্রবার , ডিসেম্বর ২৭ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / এখন থেকে ‘নিয়ম মানবে’ ভোজ্যতেলের মিলগুলো

এখন থেকে ‘নিয়ম মানবে’ ভোজ্যতেলের মিলগুলো

নিউজ ডেস্ক:
ভোজ্যতেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে দ্বিতীয় দফার শুনানিতে এসে এখন থেকে ‘আইন মেনে পণ্য সরবরাহের’ প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এ খাতের শীর্ষ ব্যবসায়ী গ্রুপগুলোর প্রতিনিধিরা।

বুধবার কারওয়ান বাজারে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কার্যালয়ে শুনানির পর ভোজ্যতেল পরিশোধনকারী কারখানাগুলোতে নিয়মিত অভিযান চালানোসহ বাজারে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথাও জানান ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক এএইচএম সফিকুজ্জামান।

এমন সিদ্ধান্তের একটি হল-ডিলার প্রথার উপর নির্ভরশীলতা কমাতে এখন থেকে যেকোনো ব্যক্তি দুই বা পাঁচ ট্রাক তেল সরাসরি কারখানা থেকে এসও (সরবরাহ আদেশ) সংগ্রহ করে নিতে পারবেন।

মহাপরিচালক জানিয়েছেন কারখানাগুলোর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিল সেগুলোর প্রতিটিই তারা সংশোধন করেছে। অপরদিকে কারখানার প্রতিনিধিরা শুনানিতে আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি দেন।

এদিনের শুনানিতে সিটি, মেঘনা, এসআলম, টিকে ও বসুন্ধরা গ্রুপ, গ্লোব এডিবল অয়েল ও রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের বাংলাদেশ এডিবল অয়েল কোম্পানির প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

এর আগে গত বুধবারও চারটি কোম্পানির নীতি নির্ধারকদের তলব করেছিল ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। ভ্যাট কমানোর পর কোন কোম্পানি কী পরিমাণ তেল আমদানি করেছে সে হিসাবও ওইদিন দিতে বলা হয়েছিল। সেদিনের শুনানিতে সন্তুষ্ট না হয়ে এক সপ্তাহের সময় দিয়ে আবার ডাকা হয় মিল মালিকদের।

গত মার্চের শুরুতে পাইকারি ও খুচরা বাজারে ভোজ্যতেলের সঙ্কটের কথা তুলে ধরে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বাড়ার অজুহাতে ব্যবসায়ীরা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে লিটারে অন্তত ৪০ টাকা করে দাম বাড়িয়ে দেন।

ওই সময় কোথাও কোথাও চাহিদা অনুযায়ী ক্রেতারা তেলও পাচ্ছিলেন বলে খবর বেরোয়। বাজারে অস্থিতিশীলতা তৈরি হলে এক পর্যায়ে সরকারি সংস্থাগুলো তৎপর হয়। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ভোজ্যতেলের অতিরিক্ত মজুদও চিহ্নিত করা হয়। অভিযানে জরিমানার মুখেও পড়তে হয় অনেককে।

সেসময় পাইকারি বিক্রেতা ও ডিলারদের পক্ষ থেকে মিল মালিকদের বিরুদ্ধে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ায় বাজার অস্থির হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়েছিল ভোক্তা সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বৈঠকে।

পরে অধিদপ্তর সরাসরি বসুন্ধরা, এস আলম, টিকে ও সিটি গ্রুপসহ বিভিন্ন তেল পরিশোধনতকারী মিলে অভিযান শুরু করে। ফেব্রুয়ারির তুলনায় মার্চে কারখানাগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযানে উঠে আসে।

বুধবারের শুনানিতে মিল মালিকদের কাছে তেলের সরবরাহ কমিয়ে দেওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলেও তারা কোনো উত্তর না দিয়ে চুপ থাকেন।

পরে অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান বলেন, কারখানাগুলোতে অভিযান চালিয়ে বেশ কিছু তথ্য উপাত্ত খুঁজে পেয়েছেন তারা। এরপর দ্বিতীয় দফায় অভিযান চালানো হয়।

“ফাইন্ডিংসগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছি। গত সপ্তাহে তাদের তলব করেছিলাম। আজকে আরেক দফায় শুনানির জন্য ডেকেছি।“

তিনি বলেন, “তাদের কথা শুনে যেটা আশ্বস্ত হয়েছি সেটা হচ্ছে- তারা উৎপাদন অব্যাহত রাখবে। আমরা যে দাম নির্ধারণ করে দিয়েছি। এক লিটারের বোতল ১৬০ টাকা, ৫ লিটার ৭৬০ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৩৬ টাকা, পাম তেল ১৩০ টাকা নির্ধারণ করেছি; সে অনুযায়ী তারা সাপ্লাই দিচ্ছে ও দেবে।”

অভিযানে পাওয়া অনিয়মগুলোর বিষয়ে আইনগত কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না জানতে চাইলে মহাপরিচালক বলেন, “আমরা চেয়েছি বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক। আশা করি সেটা এসেছে এবং এর সুফল সবাই পেতে শুরু করেছে।

“তবে কেউ যদি বার বার একই অপরাধ করে থাকে তাহলে আইনে শাস্তিও বাড়িয়ে দেওয়ার কথা বলা আছে।“

ভেঙে দেওয়া হল ডিলার প্রথা

সাম্প্রতিক অভিযানের পর বাজারে দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীলতা আনতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কথা জানান ভোক্তা অধিকারের মহাপরিচালক।

তিনি বলেন, তারা (কারখানা) আগে এসও বা সাপ্লাই আদেশে ইউনিট মূল্য লিখত না। ২০১১ সালের পরিবেশক আইন অনুযায়ী এটা লেখার কথা। এখন থেকে তারা এসওর ওপর ইউনিট প্রাইস লিখবে এবং সেটা লেখা শুরু হয়েছে। এসওগুলো ১৫ দিনের মধ্যে সাপ্লাই দেওয়া হত না। আজকে তারা নিশ্চিত করেছে তা করবে।

“৫/৬টা রিফাইনারি তাদের ডিলার ছাড়া অন্য কারও কাছে এসও বিক্রি করত না। মৌলভীবাজার ও খাতুনগঞ্জে তাদের অধিকাংশ ডিলার। তাদের মধ্যেও একটা আন্ডারস্ট্যান্ডিং রয়েছে। এখন ডিলারদের ওপর পাইকারি বাজারের নির্ভরতা আমরা কমিয়ে এনেছি। যে কোনো ব্যক্তি দুই বা পাঁচ ট্রাক তেল সরাসরি এখন থেকে মিল থেকে এসও সংগ্রহ করেও নিতে পারবেন।“

ভোজ্যতেলে ‘অনিয়ম’: ৪ গ্রুপের বক্তব্যে সন্তুষ্ট নয় ভোক্তা অধিদপ্তর

ভ্যাট ছাড়ে আসা তেলের হিসাবও দিতে হবে  

কারখানা থেকে সরবরাহের পর সেটা নিয়ে আবার ডিলাররা ‘অনিয়ম’ করে জানিয়ে সফিকুজ্জামান বলেন, “এ ধরনের চক্রের প্রভাব খর্ব করা হয়েছে। খুচরা থেকে মিল পর্যায় পর্যন্ত উৎপাদন, বিপণন, প্রাইস, এসও সমস্যাসহ অন্যান্য সমস্যার সমাধান তারা করেছে।

“প্রতিটি মিলের ডিলার- ডিস্ট্রিবিউটরদের তালিকা নিয়ে জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। তারা এটা মনিটর করবেন। পাশাপাশি ভোজ্যতেলের মিলগুলোতে নিয়মিত অভিযান চলবে। তাদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিল তার প্রতিটিই তারা সংশোধন করেছেন।”

আইন মেনে চলার প্রতিশ্রুতি

শুনানিতে সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, “আমরা সরকারি মূল্যে মালগুলো ডেলিভারি দিয়ে যাব। নির্দেশনা অনুযায়ী এসও নেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যেই ডেলিভারি দেব।“

টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাফিউল আতহার তাসলিম সরবরাহ ঠিক থাকার দাবি করে বলেন, “আমরা পুরাতন কোনো এসও এর সাপ্লাই আর দিচ্ছি না। আমরা নিয়মিত দিচ্ছি। দেশব্যাপী আমাদের ডিলার দেওয়া আছে। “যথাসম্ভব শতভাগ মাল সরকার নির্ধারিত মূল্য আমরা সরবরাহ দিচ্ছি। কেউ যদি পণ্য না পায়, আমাদেরকে জানালে আমরা সরাসরি ব্যবস্থা করব।“

আগে সংকট না থাকায় এসওতে অনেক তথ্য দেওয়া হত না মন্তব্য করে মেঘনা গ্রুপের ডেপুটি অ্যাডভাইজার শফিউর রহমান বলেন, এখন কিছু সংশোধন আসছে এবং সেগুলো পুরোপুরি ফলো করা হচ্ছে। ইউনিট প্রাইস বসানো হয়েছে; প্রতিটি এসও ১৫ দিনের মধ্যে দেওয়া হচ্ছে। ডিলারদের তালিকা সরকারের কাছে সরবরাহ করা হয়েছে যাতে প্রয়োজন মতো তদারকি করা যায়।

রূপচাঁদা ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি বলেন, আশা করছি রমজান মাসের মধ্যে সরবরাহের কোনো সমস্যা হবে না। আমরা সরকারের সব নির্দেশনা মেনে কাজ করে যাচ্ছি।

এস আলম গ্রুপের সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার কাজী সালাউদ্দিন আহমেদও আগে থেকে চালু থাকা এসও ব্যবস্থার বদলে ভোক্তা অধিকারের নতুন নির্দেশনা মেনে চলার কথা জানান। পুরাতন এসও এর পণ্য সরবরাহ বন্ধ রেখে নতুন এসও অনুযায়ী সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে বলে শুনানিতে জানান।

তিনি বলেন, “যেভাবে ডেলিভারি চলছে তাতে রমজানের মধ্যে সমস্যা হবে না। কিন্তু ঈদের পরে যে মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে।“

বসুন্ধরা গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক রেদওয়ানুর রহমান বলেন, “ভোক্তা অধিকার, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সুযোগ্য ব্যবস্থাপনায় বাজারগুলোতে যে একটা… সৃষ্টি হয়েছিল সেটা অনেকখানি কমে গিয়েছে। এই অভিযান বা তদারকিতে অ্যাকশন নিলে অনেক বড় কিছু হতে পারত।“

নতুন করে এসও কেনার সুযোগ সবার জন্য উন্মুক্ত করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে তিনি বলেন, কোম্পানিগুলো ডিলার থেকে বিকেন্দ্রীকরণ হওয়ার ফলে সব জেলায় সুষমভাবে তেল সরবরাহ হবে। কোথাও তেল পুঞ্জিভূত হওয়ার আশঙ্কা থাকবে না।

ভোজ্যতেল: এবার তলব করা হল বসুন্ধরা গ্রুপকে

রূপচাঁদা, এস আলম, টিকে গ্রুপকে ভোক্তা অধিদপ্তরে তলব  

অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার গত মার্চে বৈঠক শুরুর এ ধারা আগামিতে বহাল থাকার কথা জানান। এ তদারকি প্রতি মাসেই চলতে থাকবে জানিয়ে তিনি বলেন, “সুশাসন নিশ্চিত করার জন্য আমরা ফাইন্ডিংসগুলো বের করেছি। কতভাবে আইনের ব্যত্যয় ঘটছে সেটাই আমরা বের করতে চেয়েছে এবং পেরেছি। ১৫ দিনের মধ্যে এসও ডেলিভারি ও ইউনিট প্রাইস উল্লেখ করার মাধ্যমে আমরা কিছুটা সুশাসন নিশ্চিত করতে পারব বলে আশা করছি।

“আমরা চাই একটা সুষম বাজার ব্যবস্থাপনা। সেই উদ্দেশ্যেই আমাদের কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে। দ্বিতীয় দফায় তদারকিতে গুটি কয়েক মিলে ব্যতয় পেয়েছি। কিন্তু এখন সবাই আইনের আওতায় থেকেই ব্যবসা করছেন।”

আরও দেখুন

বাগাতিপাড়ায় আগুনে পোড়া তিন পরিবার পেল সহায়তা

নিজস্ব প্রতিবেদক বাগাতিপাড়া,,,,,,,,,,,,,নাটোরের বাগাতিপাড়ায় আগুনে পুড়ে যাওয়া ৩টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মাঝে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে …