নিউজ ডেস্ক:
বিদেশে বাংলাদেশের বিভিন্ন দূতাবাসে করা পাসপোর্টের পেন্ডিং (নিষ্পত্তি না হওয়া) আবেদনগুলো এক সপ্তাহের মধ্যে নিষ্পত্তি করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান আশ্বাস দিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ আগস্ট) এমআরপি/এমআরভি সিস্টেমে এফিস সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
আঙ্গুলের ছাপ শনাক্ত করার এফিস সফটওয়্যার আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেমটি পুরোপুরিভাবে কখনো বন্ধ হয়নি, গতি কমেছিল। পাসপোর্ট প্রদান বন্ধ আছে বলে কিছু কিছু বৈদেশিক মিশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশিদের মধ্যে এবং মিডিয়ায় এ বিষয়টি নিয়ে অতিরঞ্জিত করে প্রকাশ করা হয়েছে বলেও বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়েছে।
এতে বলা হয়, ই-পাসপোর্ট চালুর লক্ষ্যে ২০১৯ সালের জুলাই মাসে জার্মানির প্রতিষ্ঠান ভেরিডোস জিএমবিএইচ’র সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তি অনুযায়ী দেশে অবস্থিত ৭২টি অফিস এবং বিদেশে ৮০টি বাংলাদেশ মিশন থেকে ই-পাসপোর্ট ১৮ মাসের মধ্যে চালুর লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল।
দেশে অবস্থিত ৭২টি অফিসে ই-পাসপোর্ট চালু করা সম্ভব হলেও বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ মহামারির কারণে বিদেশে ৮০টি বাংলাদেশ মিশনের কোনোটিতেই এখন পর্যন্ত ই-পাসপোর্ট চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে মিশনগুলো থেকে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট দিতে হচ্ছে।
‘মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি) চালু করা হয় ২০১০ সালের এপ্রিলে। ফলে স্থাপিত যন্ত্রপাতি ও সিস্টেমগুলো ১১ বছরের অধিক পুরোনো। যন্ত্রপাতির ওয়ারেন্টি পিরিয়ড বা ব্যবহার উপযাগিতা অনেক আগেই পার হয়েছে। অতি পুরোনো এসব এমআরপি সিস্টেমটিকে সচল রাখতে অনেক ধরনের আপগ্রেডেশন কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে। সিস্টেমটি সচল রাখার জন্য সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন, যন্ত্রাংশ আমদানিসহ ও অনেকগুলো রক্ষণাবেক্ষণ কাজ করতে হয়েছে, যেমন ওরাকল সফটওয়্যার মেইনটেনেন্স, এমআরপি/এমআরভি সফটওয়্যার মেইনটেনেন্স, এমআরপি বুকলেট প্রিন্টিংয়ের জন্য পার্সোনালাইজেশন মেশিন মেইনটেনেন্স, ডাটাবেজ মেইনটেনেন্স, ডিজাস্টার রিকভারি মেইনটেনেন্স, নেটওয়ার্ক মেইনটেনেন্স, সার্ভার মেইনটেনেন্স, পাসপোর্ট প্রিন্টিং মেশিন মেইনটেনেন্সের স্পেয়ার পার্টস ক্রয়, পাসপোর্ট প্রিন্টিংয়ের জন্য আইপিআই ক্লিক ও কনজুম্যাবল আইটেম ক্রয় করা হয়েছে।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশনের জন্য এফিস সফটওয়্যার আপগ্রেডেশন এবং পরবর্তী সময়ে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য চুক্তি করা হয়েছে। তাছাড়া বিদেশে পাসপোর্ট প্রদানের জন্য অতিরিক্ত ৪০ লাখ এমআরপি বুকলেট সম্প্রতি আমদানি করা হয়েছে। এমআরপি সিস্টেমটি পুরোনো হয়ে যাওয়ায় মাঝে-মধ্যে যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার আপগ্রেডেশনের প্রয়োজন হয়। গত জুলাই মাসের প্রথমদিকে এফিস সফটওয়্যার সিস্টেমে কোটা পূরণ হয়ে সিস্টেমটির গতি কমতে থাকায় এ বিষয়ে জানতে চেয়ে আইরিশ করপোরেশন বেরহাদ মালয়শিয়া কোম্পানিকে চিঠি দেয়া হয়। তখন তারা জানায়, সিস্টেমটি পূর্ণ হতে সতর্ক সংকেত না দেয়ায় তারা বিষয়টি জানতে পারেনি। তাছাড়া কোভিড-১৯ মহামারিজনিত কারণে তাদের অফিস বন্ধ ছিল। তাৎক্ষণিক ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর থেকে এফিস সফটওয়্যার সিস্টেমটি আপগ্রেডেশন করার জন্য আইরিশ’র নিকট প্রস্তাব চাওয়া হয়। প্রস্তাব পাওয়ার পর সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে চুক্তি স্বাক্ষরের লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুমতি গ্রহণ করা হয়। অনুমতি পাওয়ার পর ওই দিনই আইরিশ’র অনুকূলে নোটিফিকেশন অব অ্যাওয়ার্ড ও খসড়া চুক্তিপত্র পাঠানো হয়।
‘কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এই চুক্তির সঙ্গে পূর্ববর্তী কিছু বিষয় সংশ্লিষ্ট করে এবং বিষয়গুলো সমাধান না হওয়া পর্যন্ত চুক্তি স্বাক্ষরে কিছুদিন বিলম্ব করে। অধিদফতরের সার্বক্ষণিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ ও বার বার আইরিশ’র শীর্ষ পর্যায়ের প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়েছে।’
গত ১১ আগস্ট ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর এবং আইরিশ’র সঙ্গে ভার্চুয়ালি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১২ আগস্ট প্রায় পাঁচ হাজার ও ১৩ আগস্ট ছয় হাজারের অধিক আবেদনপত্র এফিস সফটওয়্যার সিস্টেমে প্রসেস করা হয়েছে।
১৬ ও ১৭ আগস্ট ২১ হাজার ৬০টি আবেদনপত্রসহ আনুমানিক এক লাখ ৫০ হাজার আবেদনপত্রের মধ্যে ৪ দিনে সর্বমোট ৩২ হাজার ৬০টি এমআরপি আবেদনপত্র এফিস সফটওয়্যার সিস্টেমে প্রসেস করা হয়েছে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যেই সব পেন্ডিং আবেদনপত্র নিষ্পত্তি ও এ বিষয়ে আরও অগ্রগতি হবে বলে আইরিশ জানিয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় আরও জানায়, এফিস সফটওয়্যার আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেমটি পুরোপুরিভাবে কখনো বন্ধ হয়নি, গতি হ্রাস পেয়েছিল। এতে আতঙ্কিত হওয়ার মতো কিছু ছিল না। কিন্তু কিছু কিছু বৈদেশিক মিশন বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশিদের মধ্যে এবং মিডিয়ায় এ বিষয়টি নিয়ে অতিরঞ্জিত করে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে বলে প্রতিমেয়, যা অনাকাঙ্ক্ষিত।
অতি পুরোনো এমআরপি সিস্টেমের এ ধরনের সাময়িক প্রতিবন্ধকতা পূর্বে অনেকবার হয়েছে এবং তা সমাধানও করা হয়েছে। ই-পাসপোর্ট পুরোপুরি চালু না করা পর্যন্ত মাঝে মাঝে এ ধরনের সাময়িক সমস্যা হওয়া অবান্তর নয়। ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর বিষয়টি মনিটর করছে ও ভবিষ্যতেও করবে এবং তা সমাধানে সর্বক্ষণিক তৎপর রয়েছে।
প্রিন্টিং মেশিনজনিত কারণে কখনো পাসপোর্ট প্রিন্ট বন্ধ হয়নি বলেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়।