নিজস্ব প্রতিবেদক:
দেশে এখন জঙ্গিবাদ দমনের অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট এবং ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) নামে দুটি বিশেষায়িত প্রশিক্ষিত ইউনিট কাজ করছে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের এক যুগে জঙ্গিবাদের সাংগঠনিক শক্তি অনেকটাই নিঃশেষ হয়েছে। জঙ্গি তৎপরতা এখন বিচ্ছিন্ন, অসংগঠিত ও দুর্বল।
তবে এই এক যুগের দুই-তৃতীয়াংশ সময় জুড়ে দেশে জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর বিস্তার অব্যাহত ছিল। এ সময় এ সংগঠনগুলো আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক থেকে আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালায়। এরপর শেষ চারটি বছর জঙ্গিবাদ দমনে যে সাঁড়াশি অভিযান চলে, তার সুফল পাওয়া যায়।
দেশে এখন জঙ্গিবাদ দমনের অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। বাংলাদেশ পুলিশের অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট ও ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) নামে দুটি বিশেষায়িত প্রশিক্ষিত ইউনিট কাজ করছে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও নব্য জেএমবি নামক দুটি নতুন সংগঠনের তৎপরতা দেশজুড়ে উদ্বেগের জন্ম দেয়।
২০১৩ সালে ব্লগার রাজীব হায়দার হত্যাকাণ্ডের পর সারা দেশে একের পর এক পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড শুরু করে জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকায় ইতালির নাগরিক সিজার তাবেলা এবং ৩ অক্টোবর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশিও কুনিকে হত্যা করা হয়।
সবচেয়ে বড় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাজধানীর গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারি নামে একটি রেস্তোরাঁয়। এতে পুলিশসহ প্রাণ যায় ২২ জনের।
এরপরই শুরু হয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধারাবাহিক জঙ্গিবিরোধী অভিযান। বিভিন্ন সময়ের এসব অভিযানে গ্রেপ্তার অথবা মারা পড়েন জঙ্গি সংগঠনের সদস্যরা। অনেকে গ্রেপ্তার হন।
পুলিশ সদরদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, গত সাত বছরে উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ সংশ্লিষ্ট ৯৪টি মামলায় ৪৯৩ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সিটিটিসি ও অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) ৫৫টি অপারেশনের মাধ্যমে ৯২ জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করে।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহি চৌধুরী বলেন, সরকার জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা তৈরি করতে পেরেছে। এ কারণে সমাজে সবাই এখন অনেক সচেতন। এখন পাশের বাসায় সন্দেহভাজন কাউকে দেখলে মানুষ পুলিশকে খবর দিচ্ছে। ফলে সমাজের ভিতরে থেকে উগ্রবাদীরা আগের মতো লোকজনকে উদ্বুদ্ধ করতে পারছে না।
ডিএমপির সিটিটিসি ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে এখন জঙ্গিবাদ নিয়ন্ত্রণে আছে। এখন জঙ্গিদের কোনো সাংগঠনিক সক্ষমতা নেই, তারা গত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে দুর্বল। তারপরও আমরা কিন্তু বসে নেই।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘অপারেশনাল অ্যাপ্রোচের পাশাপাশি আমরা সফট অ্যাপ্রোচে জঙ্গিবাদ দমনে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কারা ঝুঁকিপূর্ণ গ্রুপ, তাদের সনাক্ত করে যাতে তারা জঙ্গিবাদের ফাঁদে পা না দেয় তার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। যারা ইতোমধ্যে রেডিক্যালাইজড হয়েছে, কিন্তু টেররিস্ট হয়নি, তাদেরকে ওই পর্যায়ে ইন্টারভেনশন করার পাশাপাশি যারা জঙ্গিবাদে লিপ্ত হয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে আইনি প্রক্রিয়ায় নিয়ে আসা হয়েছে।
‘পাশাপাশি যারা জেলখানায় আছে, জামিনে মুক্তি পেয়েছে কিংবা সাজা খেটে বেরিয়েছে, তাদেরকে ডির্যাডিক্যালাইজড করে রিহ্যাবিলিটেশন করা হচ্ছে- এসব বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিয়ে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ দমনের জন্য স্পেশালাইজড ইউনিট তৈরি করে দিয়েছে সরকার। গোয়েন্দা সক্ষমতা, গোয়েন্দা তথ্য বিশ্লেষণ করার সক্ষমতা এখন এ ইউনিটের আছে। উগ্রবাদীদের সব কর্মকাণ্ড নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারেন তারা।
হলি আর্টিজান মামলার রায়ের প্রসঙ্গ টেনে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আগে বিচারের ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা থাকলেও অ্যান্টি টেরোরিজম ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর খুব দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি হচ্ছে। জেলে থাকা জঙ্গিদের মনিটর করার জন্য কারা কর্তৃপক্ষ ও গোয়েন্দাদের সমন্বয়ে আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি।’
নিরাপত্তা বিশ্লেষক এয়ার কমোডর (অব.) ইশফাক ইলাহি চৌধুরী মনে করেন, বিশ্বব্যাপী এখন জঙ্গিদের কার্যক্রমে ভাটা চলছে। যে কারণেই হোক না কেন, বিশ্বের কোথাও জঙ্গিদের তৎপরতা এখন আর দৃশ্যমান নয়। বাংলাদেশেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারাবাাহিক অভিযানে জঙ্গিরা কোণঠাসা হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু জঙ্গিরা আর সংগঠিত হতে পারবে না, তা ভেবে আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোনো সুযোগ নেই।