নিউজ ডেস্ক:
বকেয়া ও চুক্তিসংক্রান্ত জটিলতায় প্রায় এক মাস ধরে ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত স্মার্ট আইডি কার্ড বা জাতীয় পরিচয়পত্র ছাপা বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) এ বাবদ ১০০ কোটিরও বেশি টাকা পায় নির্বাচন কমিশনের কাছে।
জাতীয় পরিচয়পত্রের ডাটাবেজকে সম্প্রসারিত করতে এবং বাংলাদেশের সব নাগরিককে ইউনিক আইডির আওতায় নিয়ে আসতে আইডিএ-২ প্রকল্প নেয় নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
২০১৬ সালে প্রথম নাগরিকদের হাতে ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত স্মার্ট আইডি কার্ড তুলে দেয় নির্বাচন কমিশন। দেশে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা ১১ কোটি ৩২ লাখ ৮৭ হাজার ১০ জন। এখন পর্যন্ত সাত কোটি স্মার্ট কার্ড ছাপানো হলেও দেশে পাঁচ কোটির মতো নাগরিকের হাতে এই কার্ড তুলে দিতে সক্ষম হয়েছে ইসি। অর্ধেকের বেশি নাগরিক এখনও স্মার্ট আইডি কার্ড পায়নি। ২০২৫ সাল নাগাদ সব নাগরিককে স্মার্ট কার্ড পৌঁছে দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির।
জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এ কে এম হুমায়ূন কবীর জানান, তিনি এসব বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না। কতদিন ধরে ছাপানো বন্ধ ছিল, সে বিষয়েও তার কোনো ধারণা নেই।
আইডিএ-২ প্রকল্প পরিচালক আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের নিউজবাংলাকে বলেন, ‘১০০ কোটি টাকার ওপরে বকেয়া আছে। তবে স্মার্ট কার্ড প্রিন্ট শুরু হয়ে গেছে। আইডিএ-১ প্রকল্প ২০১১ থেকে ২০১৬ সময়কাল পর্যন্ত ছিল। এরপর মেয়াদ বাড়লেও নো-কস্ট এক্সটেনশন ছিল। সে জন্য টাকা এখানে ছিল না। এ জন্য চুক্তি করা যায়নি। আইডিএ-২তে এখন চুক্তি হবে।’
অর্থের সংস্থান হয়েছে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন,‘এটা রাজস্ব থেকে দেওয়া হবে। কমিশনের মিটিংয়ে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে আঞ্চলিক, জেলা, উপজেলা ও থানা নির্বাচন অফিসে ৭ কোটি ১৫ লাখ স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্র পাঠানো হয়েছে। করোনার কারণে এসব নির্বাচন অফিসে প্রায় দুই কোটির মতো স্মার্ট কার্ড এখনও পড়ে আছে। তবে পর্যায়ক্রমে নির্বাচন অফিস থেকে এগুলো বিতরণ করা হচ্ছে।’
বর্তমানে হাতে আট লাখ ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ফ্রান্সের কোম্পানি ওবারথার কাছ থেকে ৯ কোটি কার্ড কেনার চুক্তি হয়। কোম্পানির কাছ থেকে ৭ কোটি ৭৩ লাখ ব্ল্যাংক কার্ড পাওয়া গেছে। ওই কোম্পানির কাছে পাওনা ১ কোটি ৩৪ লাখ কার্ড শিগগিরই আমাদের হাতে এসে পৌঁছাবে।’
‘আইডিইএ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের মাধ্যমে প্রতি বছর ৬০ লাখ করে সর্বমোট ৩ কোটি ব্ল্যাংক স্মার্ট কার্ড কেনা হবে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির কাছ থেকে। ২০২২ সালের সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী বর্তমানে দেশে মোট নিবন্ধিত ভোটারের সংখ্যা ১১ কোটি ৩২ লাখ। তিন কোটি স্মার্ট কার্ড কেনা শেষে মোট কার্ডের সংখ্যা হবে ১২ কোটি। ২০২৫ সাল নাগাদ সবার হাতে পৌঁছানো সম্ভব হবে।’
এ লক্ষ্যে বিএমটিএফে সঙ্গে সমঝোতা ও চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে কোম্পানির কাছ থেকে ব্ল্যাংক কার্ড সংগ্রহ করা হবে। ব্ল্যাংক কার্ড কেনা বাবদ ৪৮০ কোটি টাকা ডিপিপিতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’
বিশ্বব্যাংক ও জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) সহায়তায় ২০১১ সালের জুলাইয়ে ১ হাজার ৩৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম ফর এনহ্যান্সিং অ্যাকসেস টু সার্ভিস’ (আইডিইএ) প্রকল্পের আওতায় ৯ কোটি নাগরিককে স্মার্ট কার্ড দেওয়ার চুক্তি হয়। ফ্রান্সের ওবারথার সঙ্গে চুক্তি বাতিল করায় তখন ৭ কোটি ৭৩ লাখ স্মার্ট কার্ড হাতে পাওয়া যায়।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে চুক্তির শর্তগুলো পূরণ করতে না পারায় প্রকল্প শুরু করতেই প্রায় ৩০ মাস বা আড়াই বছর সময় লেগে যায়। প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১৬ সালের জুনে। সময়মতো কাজ না হওয়ায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয় সে সময়। এর মধ্যে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পর বিশ্বব্যাংক আর চুক্তির মেয়াদ বাড়ায়নি। ওবারথারের সঙ্গেও চুক্তি বাতিল করে ইসি। পরে সরকারি অর্থায়নে কয়েক দফা প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়। এর আগে ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশে প্রত্যেক নাগরিকের ছবিসহ জাতীয় পরিচয়পত্র সরবরাহ করা হয়।