শনিবার , সেপ্টেম্বর ২৮ ২০২৪
নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / বড়াইগ্রাম / একজন “হোসেন আলী’র জীবনাবসান!

একজন “হোসেন আলী’র জীবনাবসান!

নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়াইগ্রাম
ষাটের দশকের কথা, তখন পাকিস্থান শাসনামল, নাটোর জেলাধীন বড়াইগ্রাম উপজেলার ১ নং জোয়াড়ী ইউনিয়নের আওতাভুক্ত ভবানীপুর মোল্লা পাড়া গ্রাম। মোল্লা পরিবারের শেষ জমিদার বড় নবীর উদ্দিন মোল্লার বসবাস এই গ্রামে। পৌনে চার শত বিঘা সম্পদের মালিক তিনি। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ছাড়াও প্রায় ৩৫/৪০ জন কর্মচারী এ বিশাল সম্পদের দেখাশোনা করে থাকে। হঠাৎ ই একদিন শীতের সকালে গ্রামের লোকজন ১৮/২০ বছরের যুবককে গ্রামের মসজিদের সামনে তিন রাস্তার মোড়ে চোর ভেবে বেঁধে রেখে মারতে থাকে।

জমিদার নবির উদ্দিন মোল্লা জিজ্ঞাসা করলে এলাকাবাসী জানান- বিলের মধ্যে ধানের গাছ (লাড়া) গায়ে জড়িয়ে শুয়ে ছিল। জমিদার সাহেব বলেন-সে চোর না, চোর হলে পালিয়ে না গিয়ে ধানের গাছ গায়ে জড়িয়ে ঘুমিয়ে থাকবে কেন? এই বলে নিজের বাড়িতে নিজের পালিত সন্তান পরিচয় দিয়ে রেখে দেন যুবকটিকে। তৎকালীন যুবকটি তার নাম ঠিকানা কিছুই বলতে পারেনা, শুধু একটি কথাই তার মনে আছে “মা মারিচে রাগ করি চলি আইচি””। সবাই বুঝতে পারে সে কিছুটা ভারসাম্যহীন। জমিদার নবির উদ্দিন মোল্লা তার নামকরণ করেন “হোসেন আলী মোল্লা”।

শুরু হয় “হোসেন আলী’র নতুন জীবন। জমিদার নবীর উদ্দিন মোল্লার বিশাল সংসারের তিনিও একজন সদস্য, তখন থেকেই হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে থাকে ওই সংসারে। যৌবনে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেও যেকোনো কারণে বিয়ে করাতে সক্ষম হয়নি পরিবার, তার একই কথা ছিল বিয়ে করবে না। কেন? তা আজও কারো জানা নেই। জমিদার নবীর উদ্দিন মোল্লার একটি পা ভেঙে যায় ( গাছ পড়ে)। তারপর থেকে এই বিশাল সম্পদের দায়িত্ব পান নবির উদ্দিন মোল্লার বড় ছেলে বদিউজ্জামান মোল্লা (বদ্রু মেম্বার) তখনো হোসেন আলী সুঠাম দেহের অধিকারী একজন পরিশ্রমি যুবক।

কথিত আছে ৮ থেকে ১০ জনের বোঝা সে একাই মাথায় করে বইতে পারতেন। জমিদার নবীর উদ্দিন মোল্লার জীবনাবসান এর কিছু আগে ছেলেরা যখন পৃথক হয়ে যায় তখন নবির উদ্দিন মোল্লা তার পালক সন্তান “হোসেন আলী” কে জিজ্ঞাসা করে- তুমি তোমার কোন ভাইয়ের দিকে থাকবে?? হোসেন মোহাম্মদ তার পিতাকে জানায়, মাজু ভাইয়ের দিকে ( নবীর উদ্দিন মোল্লার তৃতীয় পুত্র আ: মজিদ মোল্লা (মাজু আমিন )।

সেই থেকে শুরু মজিদ মোল্লার সংসারে হোসেন আলী’র নতুন জীবন। জীবনের সম্পূর্ণ সময় কাটিয়েছেন পরিশ্রম করে। কোন কাজ যেন তাকে হার মানাতে না পারে এটাই ছিল তাঁর মনের অভিপ্রায়। অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকেনি কখনো। শুধু সংসারের কাজই নয় মজিদ মোল্লার ছেলে মেয়ে এবং নাতি-নাতনিসহদের ও কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন তিনি।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মুক্তি যুদ্ধ শুরু হলে নবীর উদ্দিন মোল্লার বাড়িতে মুক্তি যোদ্ধাদের অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন হয়, সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের খাওয়ানো-দাওয়ানোসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে তিনি অসামান্য ভূমিকা রাখেন, এবং যুদ্ধ চলা কালীন মোল্লা পরিবারের ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখাশোনার দায়িত্ব ছিল তার ওপর।

জীবনে তার কোন চাওয়া পাওয়া নেই, বিয়ে-শাদী করেননি, অর্থ বৃত্তের কোন লোভ নেই, সারাদিন হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম এবং সারারাত আপন মনে গান গেয়েই পার করেছেন তার সারাটি জীবন।

আরও দেখুন

মহানবীকে নিয়ে কটুক্তি করায় প্রতিবাদে নন্দীগ্রাম ওলমা পরিষদের বিক্ষোভ মিছিল 

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে নিয়ে ভারতের মহারাষ্ট্রে হিন্দু পুরোহিতের কটুক্তির প্রতিবাদে বগুড়ার …