শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / একক ঠিকাদারের আধিপত্য কমবে

একক ঠিকাদারের আধিপত্য কমবে


মন্ত্রিপরিষদে সংশোধনী প্রস্তাব * ১০ শতাংশের সুযোগ সীমিত হচ্ছে * ওটিএম পদ্ধতিতে সীমা নির্ধারণ হবে 

সরকারি ক্রয় আইন সংস্কার হচ্ছে। এতে আইনের ১০ শতাংশ কম বা বেশির সুযোগ সীমিত হচ্ছে। এ কারণে ক্যাসিনোকাণ্ডে গ্রেফতার সাবেক যুবলীগ নেতা জিকে শামীমের মতো এককভাবে কোনো ঠিকাদারের একাধিক কাজ পাওয়ার সুযোগ কমে আসবে। একই সঙ্গে শুধু বড় বড় ঠিকাদারের কাজ পাওয়ার দিনও ফুরিয়ে আসবে। এছাড়া আইনের ফাঁক-ফোকর বন্ধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পূরণ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সম্প্রতি পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অ্যাক্টের (পিপিএ) সংশোধনী প্রস্তাব মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে। এ নিয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ কাজ করছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, একক ঠিকাদার যাতে একাধিক কাজ না পায় সেজন্য ২০১৯ সালের এক একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। তখন থেকে নানা প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে ক্রয় আইনের সংস্কার কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদে প্রস্তাবটি আছে। বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে তিনি আরও বলেন, আইনের যেসব ফাঁক-ফোকর গলিয়ে বড় ঠিকাদাররা অনেক কাজ বাগিয়ে নেন সেগুলো বন্ধে আমরা চেষ্টা করছি।

আইন সংস্কারের কাজে সরাসরি যুক্ত সেন্ট্রাল প্রকিউরমেন্ট টেকনিক্যাল ইউনিট (সিপিটিইউ)। সংস্থাটির একাধিক সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা পেয়ে আইনটি সংশোধনের কার্যক্রম শুরু হয়। মাঝে কিছুটা বিরতি পড়ে। এখন আবার কাজ শুরু হয়েছে। ওই বছরের ৭ নভেম্বর অভ্যন্তরীণ এক বৈঠকে আইনে ১০ শতাংশের যে সুযোগ রাখা আছে সেটি বাতিলের পক্ষে সব পক্ষ একমত হয়। কিন্তু সংস্কার প্রস্তাবে এটি পুরোপুরি বাতিল না করে সীমিত করে দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বর্তমান আইনে ওটিএম (ওপেন টেন্ডার মেথড)-এর কোনো সীমা ছিল না। যে কোনো মূল্যের দরপত্র ওপেন টেন্ডারে করা যায়। প্রস্তাবিত সংস্কারে এর সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকার নিচে হলে সেটি ওটিএমে টেন্ডার করা যাবে। ওই সীমার উপরে হলে সেটি আর ওপেন টেন্ডারে করা যাবে না। তখন ওএসটিএম মেথডে অর্থাৎ ওয়ান স্টেজ টু আনভেলাপ পদ্ধতিতে টেন্ডার করতে হবে। আরও যেসব সুযোগের কারণে একক ঠিকাদার অনেক কাজ পান সেগুলো বন্ধে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংস্কার আনা হচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর যুগান্তরকে বলেন, আইনে ফাঁক-ফোকর বন্ধ করার উদ্যোগ ভালো। তবে এটি কার্যকর করতে হলে সবার আগে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। কেননা যত কঠোর আইনই হোক না কেন, কর্মকর্তারা অসৎ হলে তো সব তথ্যই পাচার হবে। এছাড়া রাজনৈতিকভাবে ঠিকাদারদের কাজ দেওয়া বন্ধ করতে হবে। দেখা যায়-গ্রামীণ এলাকার কাজ ছাত্রলীগের ছেলেরা পেয়ে যায়। তারা আবার বিক্রি করে বিএনপির লোকদের কাছে। এতে কাজের মান খারাপ হয়ে যায়। আইন সংস্কারের পাশাপাশি এ অবস্থা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।

সিপিটিইউয়ের একাধিক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, ২০১৬ সালে সরকারি ক্রয় আইনে একটি সংশোধনী আনা হয়। এতে বলা হয়-দরপত্র জমা দেওয়ার সময় ১০ শতাংশ কম বা বেশির সুযোগ রয়েছে। এটির মূল কথা হলো-উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে অভ্যন্তরীণ কার্যক্রমের ক্ষেত্রে দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্যের চেয়ে শতকরা ১০ শতাংশ মূল্যের চেয়ে বেশি বা কম হলে সেই দরপত্র প্রস্তাব বাতিল করার নিয়ম রয়েছে বর্তমান সরকারি ক্রয় আইনে। যেমন-১০০ টাকার জিনিস ৯০ টাকার কম বা ১১০ টাকার বেশি কোড করলে সেই টেন্ডার গ্রহণ করা হয় না। এ ক্ষেত্রে অভিযোগ-অভ্যন্তরীণ ও ভৌত কার্যক্রমের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে দরপত্র আহ্বান করা হলে অনেক ক্ষেত্রে যে কোনোভাবেই হোক দাপ্তরিক প্রাক্কলিত মূল্য ফাঁস হয়ে যায়। ফলে প্রতিযোগী ঠিকাদাররা যে দর প্রস্তাব করেন, সেটার সঙ্গে উল্লেখিত দরের সমতা হয়ে যায়। একাধিক ঠিকাদারের ক্ষেত্রে এটা হয়ে থাকে। আইনে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে লটারির বিধান নেই। বর্তমান পাবলিক প্রকিউরমেন্ট রুল (পিপিআর) অনুযায়ী দরদাতার অতীত রেকর্ড, এক বছরে কাজের মাত্রা, অভিজ্ঞতা বা প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সামর্থ্য ইত্যাদি বিষয়গুলো পর্যালোচনা করা হয়। এক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা ও অন্য সব যোগ্যতার কারণে বড় ঠিকাদাররাই নির্বাচিত হয়। অনেক সময় একই ঠিকাদার বারবার নির্বাচিত হয়। পরে সেই কাজ কমিশনের মাধ্যমে অন্য কারও কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। এতে একদিকে যেমন ছোট বা নতুন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কোনো কাজ পায় না, অন্যদিকে কমিশন নিয়ে অযোগ্য ঠিকাদারকে কাজ দেওয়ায় কাজের মান ঠিক থাকে না। এসব বিষয়ে কিভাবে সংশোধনী আনা যায় সেসব নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে সিপিটিইউ।

এ প্রসঙ্গে আইএমইডির সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা মেনে কিভাবে আইনগত পদ্ধতিতে একক ঠিকাদারের একাধিক কাজ পাওয়া কমানো যায় সেটি নিয়ে কাজ করা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য যা যা করা দরকার সবই করা হচ্ছে। মন্ত্রিপরিষদে আইনের খসড়া থাকায় বেশি কিছু বলার সুযোগ নেই। বুধবার যুগান্তরকে তিনি বলেন, ১০ শতাংশ সুযোগ একেবারেই হয়তো বাতিল নাও হতে পারে।

সূত্র জানায়, ক্যাসিনোকাণ্ডে সাবেক যুবলীগ নেতা জি কে শামীম গ্রেফতার হওয়ার সময় তার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিকে বিল্ডার্সের হাতে ১৭টির মতো প্রকল্পের কাজ ছিল। এসব প্রকল্পের ব্যয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার বেশি। এছাড়া যৌথভাবেও ছিল অনেক কাজ। গ্রেফতার হওয়ার পর অনেক প্রকল্পের কাজ স্থগিত হয়ে যায়। এরপর টনক নড়ে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে। ওই সময় অনুষ্ঠিত একটি একনেক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তোলেন, একজন ঠিকাদার এত কাজ পায় কিভাবে? এরপর থেকে সরকারি ক্রয় আইন ও বিধিমালা সংশোধনীর বিষয়টি সামনে চলে আসে। এ বিষয়ে সিপিটিইউ তৎপর হয়। ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে পিপিএ সংশোধনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে যাতে এককভাবে কেউ একাধিক কাজ না পায় এবং এককভাবে শুধু বড় ঠিকাদার যাতে কাজ না পায় সেজন্য এ সংশোধনের নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি।

আরও দেখুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জ ………..চাঁপাইনবাবগঞ্জে রক্তদান সামাজিক সেবামূলক সংগঠন ‘রক্তের খোঁজে আমরা’র ২য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়েছে। শুক্রবার …