নিউজ ডেস্ক:
আগামীতে এককভাবে কোনো বিদেশী সংস্থা সরকারি কোনো প্রকল্পে কাজ করতে পারবে না। এই কাজ করতে হলে তাকে অবশ্যই দেশীয় কোনো কোম্পানিকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শুধু তাই নয়, সম্ভব হলে এসব কাজ এককভাবে দেশীয় কোম্পানি দিয়ে করানো হবে।
এ লক্ষ্যে ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬’ এবং ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮’-এ প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হচ্ছে।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনার আলোকে বিষয়টি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রস্তাবনা তৈরি করেছে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ‘বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ’ (আইএমইডি)। বর্তমানে এটি ‘সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমইডির প্রস্তাবে ১১ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এসব সুপারিশের তিনটি বিপরীতে নিজস্ব অভিমত বা পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।
আইএমইডির ১১ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- দেশীয় সরবরাহকারী ও ঠিকাদারদের কাছ থেকে পণ্য ও কার্য সংগ্রহ করা সম্ভব হলে আন্তর্জাতিক দরপত্র পরিহার করা এবং একই সাথে অভ্যন্তরীণ কার্য ক্রয়ের দরপত্রে অংশগ্রহণের সুযোগটি শুধু দেশীয় দরপত্রদাতাদের মধ্যে সীমিত রাখা। কার্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হলে আন্তর্জাতিক দরপত্রদাতাকে বাধ্যতামূলকভাবে দেশীয় দরপত্রদাতাদের সাথে যৌথ-উদ্যোগের অংশীদার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা।
কার্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে দেশীয় দরপত্রদাতাদের অংশগ্রহণ ও সক্ষমতা বাড়াতে প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের ২০ শতাংশ মূল্যসীমা পর্যন্ত ক্রয় কাজ সহঠিকাদারের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা এবং অভ্যন্তরীণ কার্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে দরপত্র আহ্বানের সময় দাফতরিক ব্যয় প্রাক্কলন প্রকাশ করা। তবে এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী দ্বিমত পোষণ করেছেন। তার মতামত হচ্ছে- ‘সব ধরনের ক্রয়ের ক্ষেত্রে দাফতরিক প্রাক্কলিত ব্যয় প্রকাশ করা হলে প্রকৃত অর্থে দরপত্রে কোন আর্থিক প্রতিযোগিতা থাকবে কি না- এটি বিবেচনায় নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে কাজ পাওয়ার জন্য সব দরদাতাই প্রাক্কলিত ব্যয়ের নিম্নসীমার সাথে মিল রেখে দর প্রস্তাব পেশ করবে।’
পাশাপাশি ৫ শতাংশ কম-বেশির মতো এত সংকুচিত মূল্যসীমা বেঁধে দেয়া হলে আর্থিক প্রতিযোগিতার সুফল থেকে সরকার বঞ্চিত হওয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে।
আইএমইডির সুপারিশে আরো বলা হয়েছে- ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন ২০০৬’-এ ‘উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতি’ এবং ‘এক ধাপ দুই খাম’ দরপত্র পদ্ধতিতে কার্য ক্রয়ের দরপত্র দাখিলের ক্ষেত্রে মূল্যসীমা ৫ শতাংশ কম-বেশির বিধান সংযোজন করা যেতে পারে। তবে এ বিষয়ে ভিন্নমত দিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। তিনি বলেছেন, এ পদ্ধতিতে সাধারণত উচ্চ মূল্যের ক্রয় কাজ প্রক্রিয়া করা হয়। এ ধরনের কাজে পুরোপুরি সঠিক ব্যয় প্রাক্কলন করা সরকারি সংস্থাগুলোর ক্ষেত্রে সব সময় সম্ভব না-ও হতে পারে। ফলে এ প্রক্রিয়ায় মূল্যসীমা বেঁধে দেয়া হলে দরদাতারা স্বাধীনভাবে দর প্রস্তাবে নিরুৎসাহিত হবে। এতে সরকারের সম্ভাব্য আর্থিক সাশ্রয়ের সুযোগ হাতছাড়া হতে পারে।
সুপারিশে বলা হয়, ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে অভ্যন্তরীণ কার্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে আবশ্যিকভাবে ‘এক ধাপ দুই খাম’ পদ্ধতি প্রয়োগের বিধান করা এবং এ ক্ষেত্রে দরপত্রের কারিগরি ও আর্থিক প্রস্তাব মূল্যায়নে স্কোরিং পদ্ধতি প্রয়োগ, কারিগরি প্রস্তাবে ৮০ শতাংশ ও আর্থিক প্রস্তাবে ২০ শতাংশ নম্বর রাখা, কারিগরি মূল্যায়নে পদ্ধতি, স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, পরিবেশ ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রস্তাব, গুণগত মানসম্পন্ন ব্যবস্থাপনা এবং আন্তর্জাতিক দরপত্রের ক্ষেত্রে দেশীয় দরপত্রদাতা প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করা ইত্যাদি একাধিক নির্ণায়কসহ কাজের আয়ুষ্কালভিত্তিক নির্ণায়কগুলো অন্তর্ভুক্ত করা আইএমইডির ‘সিপিটিইউ’ দরপত্র মূল্যায়নের সাধারণ নির্ণায়কগুলো নির্ধারণ করবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রীর অভিমত হচ্ছে- ৫০ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে কাজ ‘এক ধাপ দুই খাম’ পদ্ধতিতে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে দরপত্র দলিলে কারিগরি মূল্যায়নের ক্রাইটেরিয়াগুলো সঠিকভাবে নির্ধারণ করা দেশের সব পর্যায়ের অফিসগুলোর জন্য সম্ভব না-ও হতে পারে। এ ছাড়া এ ধরনের মূল্যায়নে মূল্যায়ন কমিটির প্রদত্ত নম্বর নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হতে পারে।
সুপারিশে উল্লেখ করা হয়- ‘ফ্রন্ট লোডিং’ সংক্রান্ত ‘পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা ২০০৮’-এর বিদ্যমান বিধি বাতিল করা; কোনো দরপত্র মূল্যায়নে প্রারম্ভিক আইটেমের উদ্ধৃত দর উল্লেখিত আইটেমগুলোর দাফতরিক প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১৫ শতাংশ বেশি হলে দরপত্রটি ‘ফ্রন্ট লোডেড’ হিসাবে গণ্য করা এবং সেটি বাতিল হিসেবে বিবেচনা করা।
‘উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে অভ্যন্তরীণ কার্য ক্রয়ের দরপত্র মূল্যায়নে সর্বনিম্ন দর সমান হয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে দরদাতা প্রতিষ্ঠানের ‘পাস্ট পারফরম্যান্স ইভ্যালুয়েশন ম্যাট্রিক্সে’র নম্বরগুলো পুনর্বিন্যাস করা। এ ক্ষেত্রে শুধু দাফতরিক প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৭৫ শতাংশ থেকে ১৭৫ শতাংশ সমমূল্যের চুক্তির মূল্য বিবেচনা করা এবং এ ক্ষেত্রে ৩০০ নম্বরের (যথাক্রমে ১৪০, ১০০ ও ৬০) বিদ্যমান শ্রেণীবিন্যাস পরিবর্তন করে ২০০ নম্বরের ম্যাট্রিক্স নির্ধারণ করা। প্রস্তাবিত ম্যাট্রিক্সে বাস্তবায়িত কাজের সংখ্যা ও মূল্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা।
দরপত্র সক্ষমতার বর্তমান গুণকটি ১.৫০-এর পরিবর্তে ১.২৫ নির্ধারণ করা। সম্পূর্ণ সরকারি অর্থায়নে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সেবা ক্রয়ের ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলকভাবে অভ্যন্তরীণ দরপত্র আহ্বান করা এবং বিশেষ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা অপরিহার্য হলে সে ক্ষেত্রে ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র নীতিগত অনুমোদন নিতে হবে এবং যৌথ উদ্যোগ হিসেবে দেশীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে যুক্ত করতে হবে।
নির্ধারিত সময় ও মাননিশ্চিত করে চুক্তি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার/সরবরাহকারীর বিরুদ্ধে ‘পিপিআর ২০০৮’-এর ১২৭ ধারা মোতাবেক বারিতকরণসহ চুক্তির আওতায় নির্ধারিত অন্যান্য ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।