নিউজ ডেস্ক:
দেশে একইসাথে মুসলিমদের ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা ও বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্যাপিত হয়েছে। সাম্প্রদায়িক অস্থিরতার কয়েক দিন পর বুধবার ধর্মীয় উৎসবগুলো উদ্যাপিত হলো।
বাংলাদেশে আজ ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে হাজার হাজার মুসলিম আন্তঃধর্মীয় ঐক্য বজায় রাখার শপথ নিয়েছে।
মাইজভান্ডারি দরবার শরীফ আয়োজিত ধর্মীয় সমাবেশে অংশ গ্রহণকারীরা হাত তুলে বলেন, ‘আমরা ধর্মীয় উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতাকে মেনে নেব না।’
সমাবেশে আলেম ও সুফিদের পাশাপাশি মন্ত্রী, রাজনীতিবিদ, বিদেশি কূটনীতিক ও সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।
দরবার শরীফের বর্তমান নেতা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ সমাবেশে শপথবাক্য পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন, এ বছর মিলাদুন্নবী কোরআনের নির্দেশনা ও নবী সা. এর শিক্ষার সাথে সংগতি রেখে আন্তঃধর্মীয় ঐক্যকে সমুন্নত রাখার এক অসাধারণ সুযোগ নিয়ে এসেছে।
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম-মহাসচিব ড. হাছান মাহমুদ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী এ কে এম মোজাম্মেল হক, কল্যাণ পার্টির সভাপতি অব. মেজর জেনারেল সৈয়দ মোহাম্মদ ইব্রাহিম সভায় বক্তব্য রাখেন। ইন্দোনেশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতিনিধিরাও সমাবেশে যোগ দেন।
সমাবেশে ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ ফরিদুল হক খান পীরগঞ্জ থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণ থেকে সমাবেশটি রাজপথে একটি বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। এতে অংশগ্রহণকারীদের হাতে মহানবী সা. এর সর্বজনীন শান্তি ও ঐক্যের বাণী সংবলিত প্ল্যাকার্ড বহন করে।
আহমেদ বলেন, কোরআন ও মহানবী সা. এর অনুসারী মুসলিমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে বাধ্য। অন্য ধর্মের উপাসনালয়ে হামলা করা মুসলিমদের জন্য হারাম।
তিনি নতুন করে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়িয়ে যেতে পারে এমন কোন মন্তব্য না করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে- (যা ইসলামে স্পষ্টত হারাম) যারা সাম্প্রতিক সহিংসতার সাথে জড়িত, সে সব দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
দেশব্যাপী মুসলিমরা ঐতিহ্যগতভাবে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. এর জীবনী, ভূমিকা তাঁর আধ্যাত্মিক শিক্ষা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী উদ্যাপন করেন।
হিন্দুরা বার্ষিক কোজাগরী লক্ষ্মীপূজা উদ্যাপন করেছেন। পূজাটি তাদের নিজ গৃহে প্রতি দিনের প্রার্থনার মতোই করা হয়। বৌদ্ধরা বুদ্ধের অহিংস শিক্ষার বাণী আলোচনার মাধ্যমে বার্ষিক প্রবারণা পূর্ণিমা উদ্যাপন করেছেন।
হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা কাজল দেবনাথ বাসসকে বলেন, ‘একই দিনে একই স্থানে তিন ধর্মের ধর্মীয় উৎসব উদ্যাপন একটি কাকতালীয় ব্যাপার। কিন্তু আমি এটিকে আন্তঃধর্মীয় ঐক্যকে সমুন্নত রাখার ইঙ্গিত হিসেবে দেখি। কারণ আমরা সবাই একই স্রষ্টার সৃষ্টি। তিনিই আমাদের সবার প্রভু।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা এই কাকতালীয় ঘটনা থেকে শান্তিপূর্ণ সহ-অবস্থানের চেতনায় অনুপ্রাণিত হতে চাই।’
৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে সৌদি আরবের মক্কা নগরীতে মানবজাতির জন্য শান্তির বারতা নিয়ে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা. জন্মগ্রহণ করেন। এ উপলক্ষেই মিলাদুন্নবী উদ্যাপন করা হয়।
প্রতি বছর হিন্দুদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার পর লক্ষ্মীপূজা উদ্যাপন করা হয়। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র অনুযায়ী বিষ্ণুর স্ত্রী লক্ষ্মী সৌন্দর্য ও ধনের দেবী।
বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রবারণা পূর্ণিমাও উৎসবমুখর পরিবেশে উদ্যাপিত হয়। এই উৎসবের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা তাদের তিন মাসব্যাপী নির্জনবাসের পরিসমাপ্তি ঘটান।