বুধবার , এপ্রিল ২৪ ২০২৪
নীড় পাতা / ফিচার / এই সরকার তাড়ানোর কি দরকার?

এই সরকার তাড়ানোর কি দরকার?


সুনিল সরকার:
এই সরকার তাড়ানোর দরকার যাতে ছেলে-মেয়েরা বিনা মূল্যে বই না পায়? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে মেট্রো রেল না হয়? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে আর কোন নদীর নীচ দিয়ে কর্ণফুলী টানেলের মত আর কোন টানেল তৈরী না হয়? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে বিধবা ভাতা বন্ধ হয়? যাতে বয়স্ক ভাতা বন্ধ হয়? এই সরকার তাড়ানোর দরকার যাতে বৃটেনের মত প্রস্তাবিত সার্বজনীন পেনশন স্কীম চালু না হয়? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে শরীয়ত পুর এবং মাদারী বিশাল এলাকা জুড়ে প্রাস্তাবিত বিশ্বমানের বিমান বন্দর তৈরী না হয়? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে মেয়েদের উপবৃত্তির টাকা বন্ধ হয়? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে মুক্তি যোদ্ধা ভাতা বন্ধ হয়? এই সরকার বস্তির মানুষকে ফ্ল্যাট বানিয়ে দেবার পরিকল্পনা নিয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের আগেই এই সরকারকে তাড়াতে না পারলে আর তাড়ানো যাবে না? এই সরকারকে তাড়াতে হবে কারণ প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী গ্রাম গুলোকে শহরে পরিণত করার প্রকল্প দ্রূত গতিতে বাস্তবায়িত হচ্ছে? এই প্রকল্প পুরোপুরি বাস্তাবায়িত হওয়ার আগেই এই সরকারকে তাডাতে হবে? এবার বাড়ি গিয়ে দেখলাম ঘরের টিন, কাঠ, গ্যাস সিলিন্ডার, পাইপ, সার, তৈরী পোশাক-পত্র গ্রামেই পাওয়া যায়।

আমাদের অজ পাড়া-গ্রামে বিলের পাশ দিয়ে প্রায় প্রত্যেক গ্রামে ওষুধের দোকান আছে এবং রেস্টুরেন্ট ব্যবসা জমে উঠেছে। এই সরকারকে তাড়াতে হবে কারণ এই সরকারের ব্যাপক আর্থসামাজিক ঊন্নয়নের ফলে গ্রামের এবং শহরের অসহায় নারী-পুরুষদের বিপুল কর্মসংস্হান হয়েছে। এই সরকারকে তাড়াতে হবে কারণ আগের মত বলাচলে শধুমাত্র ভাত কাপড়ের বিনিময়ে এবং নামমাত্র বেতন দিয়ে অসহায় মানুষগুলোকে দিন-রাত্রি আর খাটানো যায় না। এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে মাত্র দশটাকা দিয়ে একজন কৃষক ব্যাংক একাউন্ট আর খুলতে না পারে? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতেসেই গাইবান্ধাতে সারের লাইনে দাঁডিয়ে ধস্তাধস্তি করার সময় পুলিশের গুলিতে আবার তেরো জন কৃষকের প্রাণ যায়? মনে আছে? মনে নেই? এত সহজে সব ভুলে গেলে চলবে কি করে? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে সার কৃষককে আর খুঁজে না বেড়ায়? আবার যাতে আমরা সারের রেশনে ফিরে যাই? কারণ এত সুবিধা আমাদের বধহজম হচ্ছে।

এই সরকারকে তাড়ানোর দরকার কারণ এই সরকার যান্ত্রিক চাষাবাদ পদ্ধতি চালু করেছে। এখন আর কৃষকদের গরু দিয়ে ফসল মারাই করতে হয় না। এই সরকারকে তাড়ানোর দরকার কারণ এই সরকারের আমলে বাংলাদেশ ধান উৎপাদনে বিশ্বে চতুর্থ এবং মাছ চাষে বিশ্বে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। এই সরকার তাড়ানো দরকার কারণ তৈরী পোশাক শিল্পে এই সরকারের আমলে বাংলাদেশ ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকাকে পেছনে ফেলে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থান দখল করে নিয়েছে। এই সরকার তাড়ানোর দরকার কারণ এই সরকারের ব্যাপক উৎপাদনমুখী এবং রপ্তানীমুখী বাণিজ্য নীতির ফলে বাংলাদেশ ৪০ বিলিয়ন US dollar আয় করে যা পাকিস্তানের রপ্তানী আয়ের দ্বিগুণ। এটি পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের নিজের মুখের কথা।

আমার কথা নয়। প্রমান চাইলে পাক ইউটিউব চ্যানেলে গিয়ে দেখে নিতে পারেন। এ প্রসঙ্গে প্রথম প্রশ্ন হলো বাংলাদেশ কি পাক প্রধানমন্ত্রীকে ঘুষ দিয়েছে এই কথাগুলো বলার জন্য? দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো পাক উজীর -ই- আযম যদি এই বাংলাদেশের এই উন্নয়ন দেখতে পান তা’ হলে বাংলাদেশের এক শ্রেণীর বুদ্ধিজীবি, রাজনীতিক এবং বিশিষ্টজনরা দেখেন না কেন? রূপপুর প্রকল্প, মেট্রোরেল, ফ্লাইওভারগুলো, ছয় লেনের রাস্তা, কর্ণফুলি টানেল এবং পদ্মা সেতুর মত প্রতিনিয়তদৃশ্যমান বৃহৎ প্রকল্পগুলো এই নিন্দুকরা কি খালি চোখে দেখতে পান না? অণুবীক্ষণ যন্ত্র দরকার? না, বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা? সমালোচনা ভালো কিন্তু হিংসাত্মক সমালোচনা ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনে সবার জন্য। সাময়িক ভাবে বুঝা না গেলেও ভালভাবেই উপলব্ধি করা যায় পরিণতি।

এই সরকারকে তাড়ানোর দরকার কারণ এই সরকারের সময় বাংলাদেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্নতা অর্জন করেছে? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে আবার আমরা লোড শেডিংয়ে ফিরে যেতে পারি? মনে আছে কি একটানা ১২/১৩/ ৪৮ ঘন্টা পর্যন্ত লোড শেডিংয়ের কথা? মনে নেই কারণ এক শ্রেণীর বিশিষ্টজন এবং স্বুদ্ধিজীবিদের এসব ব্যাপারে মৃতিশক্তি ভাল কাজ করে না। এই সরকার তাড়ানো দরকার কারণ এই সরকার দেশের ৯৪% ভাগ মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় নিয়ে এসেছে যা ভারত, পাকিস্তান এবং শ্রীলংকার পক্ষে সম্ভব হয়নি। আর একটুমনে করিয়ে দেই এ সরকার ২০০৯ সালে মোটে ৪০০০ মেগাওয়াট নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল আর এখন তা ২৫০০০ মেগাওয়াটে দাঁডিয়েছে।এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতেপরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র তৈরী না হয়? রূপপুরের মত ঈশ্বরদীর একটি গ্রাম আন্তর্জাতিক মানের একটি শহরে পরিণত হয়েছে আর যেন এমন না হয়? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে আর আমরা ছয় লেনের রাস্তা না করতে পারি? কারণ অমন রাস্তা আমাদের পূর্ব পুরুষর কখনো দেখেন নাই।

সুতরাং আমরা কেন দেখবো? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মত আর কোন বড় সেতু তৈরী না করতে পারি? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে সারা দেশে শত শত মাইল পাকা রাস্তা আর না করতে পারে? আমার মনে পড়ে পরিস্কার ২০০৭ সালে বাড়ী যাওয়ার সময় বৃস্টির পর কাঁচা রাস্তার কাদার কারণে জুতা খুলে হাতে নিয়ে ট্রাউজারস্ এর পা গুটিয়ে তিন মাইল পায়ে হেঁটে বাড়ী পৌঁছেছিলাম। তারপর এই সরকার ক্ষমতায় আসার বারো বছর পর বাড়ী গেলাম ঐ একই গ্রামে একই বাড়ীতে কিন্তু এবার গেলাম গাড়ী নিয়ে এবং গাড়ী থামলো আমার ঘড়ের বারান্দার সাথে।

এই সরকারকে তাড়ানো খুবই দরকার কেননা এই সরকারের কারণে এখন ছয়টি পৃথক পাকা রাস্তা দিয়ে শুধু জেলা শহর থেকে আমার গ্রামে যাওয়া যায়। এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে একের পর গভীর সমুদ্র বন্দর আর তৈরী না করতে পারে? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে একের পর এক ফ্লাই ওভার দবানিয়ে যানজট সমস্যার সমাধান করতে না পারে? এই সরকার তাড়ানো দরকার কারণ এক সময় মীরপুর থেকে এয়ারপোর্ট যেতে সময় লাগতো তিন চার ঘন্টা। কিন্তু এ সরকার কচুক্ষেতের উপর দিয়ে ফ্লাই ওভার করে দেওয়াতে এখন সময় লাগে শুধু ৩৫ মিনিট। এই ফ্লাই ওভার করে এবং এমন আরও অনেক ফ্লাই ওভার করে এই সরকার ভাল কাজ করে নাই। কারণ এই সমস্ত রাস্তা এবং সেতু কালভার্টের উপর দিয়ে শুধু আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীরা যাতায়াত করে তাই এই সরকার তাড়ানো খুব দরকার? এছাডাও সব সমস্যার সমাধান হয়ে গেল সুশীল সুজনদের জন্য সরকারের সমালোচনার করার আর কোন ইস্যু থাকবেনা। ফলে তাঁদের এন জি ওর অনুদান বন্ধ হয়ে যাবে।

এই সরকার তাড়ানো দরকার দেশের মানুষের মঙ্গলের জন্য নয় যাতে একটি ভবন তৈরী ক’রে লুটপাটের রাজ্যে ফিরে যেতে পারি? এই সরকার তাড়ানো দরকার যাতে প্রধানমন্ত্রী হওয়া পরে কালো টাকা সাদা করতে পারি? এই সরকার তাড়ানো দরকার কারণ পানামা পেপারস্ এবং উইকিলিক্স এর মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অর্থ আত্মসাৎ এবং পাচারের যে তালিকা তৈরী করেছে তাতে মানননীয় প্রধানমন্ত্রী সহ তার মন্ত্রী পরিষদের কারো নাম নেই। তাহলে কি এই সরকার তাদেরকে ঘুষ দিয়ে নাম কাটিয়ে নিয়েছে? এই সরকার তাড়ানো দরকার কারণ এই সরকার টরেটক্কার বাংলাদেশকে ডিজিটালকরণ করেছে। এখন প্রত্যান্ত গ্রামের মাঠে ব’সে ওয়াই ফাই সংযোগ পাওয়া যায়। এই সরকার তাড়ানো দরকার কারণ এই সরকারের সাহসী পদক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল বাংলাদেশ এবং সে কারণে কৃষক আজ জমিতে বসেই ল্যাপটপ চালিয়ে জেনে নিতে পারেন কোন ফসলে কোন সার কতটা দরকার এবং কোন্ কীট নাশক দরকার।

এই সরকার তাড়ানো দরকার কারণ ২০১৯ সালে এই সরকারের নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশের ICT sector আয় করেছে রপ্তানী খেকে US $1 billion. একুশ সালে আরও বেড়েছে। এই সরকারকে তাড়ানোর দরকার কারণ এই সরকারের উদ্যোগে বাংলাদেশ মহাকাশে নিজস্ব স্যাটেলাইটের গৌরব অর্জন করেছে। এই সরকারকে তাড়ানোর দরকার কারণ এই সরকারের আমলে শিশু মৃত্যুর হার ২০০৯ সালের ৫০.৪৮ থেকে কমে বর্তমানে ২২,৬১৪ এ দাঁডিয়েছে।

এই সরকার তাড়ানো দরকার কারণ গ্রাম এলাকায় দেশ ব্যাপী চৌদ্দ হাজার (২০১৯ সালের তথ্য) প্রাইমারী স্বাস্হ্য কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা ক’রে মানুষকে স্বাস্থ্য সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এই সরকারকে তাড়ানো দরকার কারণ এই সরকারের আমলে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় মানুষের গড় আয়ূ বেড়ে ৭২,৮৭ এ। এই সরকারকে তাড়ানোর দরকার কারণ এই সরকার ঊন্নত দেশগুলোর মত ৯৯৯ কল ব্যবস্থা চালু করেছে? যাইহোক, তারপরও কথা হলো যারে দেখতে নারি তার চলন বাঁকা। সুতরাং এ সরকারকে তাড়াতে হবে কারণ দেশে গণতন্ত্র নেই? স্বাধীনভাবে জ্বালাও পোড়াও করা যাচ্ছে না? মানুষের ব্যক্তিগত সম্পদ ধ্বংস করা, মানুষ পুডিয়ে মারাই কি গণতন্ত্র? সন্ত্রাসীদের শক্ত হাতে দমন করাই কি অগণতন্ত্র বা ফ্যাসিবাদ? এখন কথা হলো গণতন্ত্রের হুক্কাহুয়া করার আগে চীন এবং মালয়েশিয়ায় চোখ মেলে দেখতে হবে সেখানে কি ধরণের গণতন্ত্র আছে এবং সে গণতন্ত্র কি ভাবে সে দেশগুলোকে তড়িৎ গতিতে ঊন্নতির চরম শিখরে নিয়ে গিয়েছে এবং কি ভাবে মানুষের ভাগ্যের উন্নতি সাধন করেছে। সেখানে গণতন্ত্র আছে কিন্তু জালাও পোড়াও আর লুটপাটের গণতন্ত্র নেই। কেউ তা করতে গেলে সেটাকে শক্ত হাতে দমন ক’রে সাধারণ শান্তিপ্রিয় নাগরিকদের সুরক্ষা দেওয়া হয়। তাই চাইনিজ জনসাধারণ এবং মালয়েশিয়ার জনসাধারণ সরকার তাডাতে চান না তাঁদের উন্নয়নের ধারাহাহিকতা ধ’রে রাখার জন্যে। আর না তাড়ানোর সুফলও তারা ভোগ করছেন।

যেমন মালয়েশিয়া ইউরোপকে টেক্কা দিচ্ছে। আর চীন আমেরিকাকে পেছনে ফেলে ১২৪ ট্রিলিয়ন US dollar এর সম্পদ নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। কারণ সেখানে বহুদলীয় গণতন্ত্রের হুক্কাহুয়া নেই। চীনের মানুষ তাঁর অবদানে খুশী হয়ে তাঁকে আজীবন মানে অবসরে যাওয়া অবধি প্রেসিডন্ট পদে আসীন দেখতে চান।

আরও দেখুন

আগামী বর্ষাকে সামনে রেখে রাজশাহী মহানগরীর ওয়ার্ড ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের সকল ড্রেন পরিস্কার কার্যক্রমের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত

নিউজ ডেস্ক: আগামী বর্ষাকে সামনে রেখে ভবিষ্যৎ জলাবদ্ধতা নিরসনে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক রাজশাহী মহানগরীর …