বৃহস্পতিবার , নভেম্বর ২১ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / উপড়ে ফেলার মতো চুল কই আমার?

উপড়ে ফেলার মতো চুল কই আমার?

আমি সাহিত্যিক নই, শিক্ষার্থী। কিন্তু কখনো কখনো কোনো ঘটনা বিবেককে এত নাড়া দিয়ে যায় যে মনে পড়ে যায়,”আমার হাত নিশপিশ করছে মাথার চুল ছেঁড়ার জন্য, কিন্ত হায়! মাথার চুল কোথায়!” সত্যিই তো! পুরুষতান্ত্রিক এ সমাজ ব্যবস্থায় আমার উপড়ে ফেলার মত চুল কোথায়! বরং সে পর্যন্ত পৌঁছাবার আগেই তো আমি সমেত আমার নিশপিশে হাতকে গুঁড়িয়ে দেয়া হবে।

যদি আমি শহুরে মেয়ে হই তবে,“মেয়ের পোশাক দ্যাখো,এই মেয়ে আজকালকার যুগে একা চলার সাহস করে কিভাবে! ঠিকই আছে আধুনিক হলে তো এমন হবেই!” যদি গ্রামে থাকি তবে,”মেয়ের পরিবারকে টাকা দিতে হবে, মেয়ে সামলে রাখতে পারো না? নয়তো মেয়ের মাথা মুড়ো করে গ্রামে ঘোরাব!” আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এখনো ধর্ষিতাকে “নষ্ট মেয়ে“তকমা দেয়া হয়। একুশ শতকে এসেও একটা মেয়েকে কেন শুধু তার শারীরিক একটা অঙ্গ দিয়ে বিচার করা হবে? তার যোগ্যতাকে কেন এর মাঝে সীমাবদ্ধ করে রাখা হবে? বেশিরভাগ মেয়েই তাই মানসম্মান, বিয়ে, সমাজ এসব ভেবে চুপ করতে শিখে যান।

শিশুকালে আদরের ছলে স্পর্শকাতর স্পর্শ, রাস্তাঘাটে চলতে ফিরতে একটু-আধটু ছুঁয়ে দেওয়ার ‘দুষ্টুমি’, মেলা বা লোক সমাগম পূর্ণ স্থানে ‘ওই একটু আধটু হয় ই‘, বাড়িতে বা প্রতিবেশীদের দ্বারা ‘তেমন কিছু না তো’-এসব নিয়েই মেয়েদের চলতে হয়। কেউ কেউ মেনে নিতে পারে না বলে হয়তো প্রতিবাদ করেন, কখনো সুবিচার পান যার হার খুবই নগণ্য। আর কখনো,”জানিস অমুক মেয়ের এই হইছে”।

বলাই বাহুল্য অমুক মেয়ের কাহিনী আড়ালে অপরাধী পুরুষটি এমন ভাবে চলতে পারেন, তার কিছু হয় না কারণ পুরুষ মানেই শক্তিশালী, অবলা নারী তার কি করার আছে? প্রভাবশালী বলে কখনো বিচারের বাইরে থাকেন। মুখে আলাদা কাপড় বেঁধে লুকিয়ে চলতে হয় সেই অমুক মেয়েটিকে।

আচ্ছা, দিনাজপুরে পাঁচ বছর বয়সী শিশুর যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে বড় করে যখন তাকে ধর্ষণ করা হয়, শিশুটির কি দোষ ছিল?তার দোষটা কি এই পৃথিবীতে মেয়ে হয়ে জন্ম নেয়া? তিন বছর বয়সী শিশুটি যখন প্রতিবেশী কর্তৃক ধর্ষিত হয়ে তো রক্তক্ষরণে হাসপাতালে ভর্তি হয়, একবার ও কি আমরা অনুভব করেছি তার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ? সে তো শিশু, হয়তো আধো আধো বোলে বাংলা বলে ঠিক মতো কথাই শিখেনি। বাকি জীবনে সে কি আর কোন পুরুষ কে শ্রদ্ধা করতে পারবে? কিংবা পড়াশোনার উদ্দেশ্যে শহরগামী কোন মেয়ে দীর্ঘদিন পর বাড়িতে ফিরবে। মাকে হয়তো ফোন দিয়ে তার পছন্দের খাবার রাঁধতে বলেছে। ছোট ভাই বোনদের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছে উপহার।

ভেবে দেখুন তো, চলন্ত বাসে তাকে যদি ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়, তার জায়গায় আপনার বা আমার বোনক কল্পনা করা হয়, অন্তরাত্মা কিভাবে কেঁপে উঠবে? তবুও আমরা এসব এড়িয়ে চলতে শিখেছি।

দুইদিন পর পর কোন খবর আমাদের চোখে পড়ল, যে যার মত শেয়ার করলাম আলোচনা চললো। নতুন কোন ‘হট ইস্যু’ আসলে আমরা আগের টাকে ছুঁড়ে ফেলি। কেনই বা ফেলবো না, আমাদের সাথে তো আর হয়নি, একটু আধটু ওসব হয়ই।এসব তো আইন-আদালত দেখবে? আসলেই কি সম্ভব? একবার সেই মেয়ে বা তার পরিবারের সদস্য হিসেবে কল্পনা করে দেখুন তো আদৌ কি চুপ থাকা যায়? কবে সুদিন আসবে? মানুষের মনুষ্যত্ববোধ লোপ পাবে না। শান্তির পৃথিবীতে আমরা প্রাণভরে শ্বাস নিতে পারব?

লেখক: নাফিসা তাসনিম বিনতে খলিল, এইচএসসি পরীক্ষার্থী, কাদিরাবাদ ক্যান্টনমেন্ট স্যাপার কলেজ, বাগাতিপাড়া নাটোর।

আরও দেখুন

সিংড়ায় পাবলিক টয়লেট সংস্কার করলেন ইউএনও 

নিজস্ব প্রতিবেদক সিংড়া…………নাটোরের সিংড়ায় যাত্রী ও জনসাধারণের সুবিধার্থে পাবলিক টয়লেট সংস্কার করলেন ইউএনও মাজহারুল ইসলাম। …