নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনার টিকা বাজারে এলে দেশের সবার জন্য তা সংগ্রহ করতে চায় সরকার। ধারণা করা হচ্ছে, সবার জন্য টিকা সংগ্রহে ১৭ হাজার কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। এই অর্থ সংগ্রহে উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ইতোমধ্যে জাপান সরকারের কাছে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। চলতি সপ্তাহেই এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং এরপর বিশ্বব্যাংক ও অন্য সহযোগীদের কাছে অর্থ সহায়তা চেয়ে চিঠি দেওয়া হবে। অনুদান কিংবা ঋণ- যে কোনো উপায়ে এই সহযোগিতা পেতে চায় সরকার।
ধারণা করা হচ্ছে, জনপ্রতি দুই ডোজ টিকার প্রয়োজন হতে পারে। এর দাম পড়তে পারে ১০ থেকে ১২ ডলার বা কমবেশি এক হাজার টাকা। পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৫০ লাখ। সে হিসাবে মোট ১৭ হাজার ২০০ কোটি টাকার প্রয়োজন হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রাথমিক এই হিসাব করা হয়েছে বলে ইআরডি সূত্র জানিয়েছে। এই অর্থের চাহিদা মাথায় রেখেই উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা চাওয়া হচ্ছে।
টিকা সংগ্রহে বিশাল ব্যয়ের জোগান কীভাবে এই বিষয়ে একটি বৈঠক করেছে ইআরডি। ওই বৈঠকে সম্ভাব্য উন্নয়ন অংশীদারদের একটি তালিকা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় সব উন্নয়ন সহযোগীর কাছেই অর্থ সহায়তা চেয়ে সরকার আবেদন করেছে।
সূত্র জানায়, করোনার টিকা সংগ্রহের অংশ হিসেবে জাপান সরকারের কাছে ৫০ কোটি ডলারের (প্রায় ৪২৫০ কোটি টাকা) অর্থ সহায়তা চাওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) গত শনিবার এক চিঠিতে এই সহযোগিতা চেয়েছে। ঢাকায় দেশটির দূতাবাসের মাধ্যমে জাপান সরকারের কাছে এই চিঠি পাঠানো হয়।
এতে বলা হয়, করোনাভাইরাস পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আসছে শীতে দ্বিতীয় দফা সংক্রমণ বৃদ্ধির আশঙ্কা কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ফলে করোনার টিকা সংগ্রহ করার বিষয়টিকে খুব গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে টিকা সংগ্রহে বাংলাদেশ সরকার জাপান সরকারের কাছে ৫০ কোটি ডলার অর্থ সহায়তা চায়।
সূত্রমতে, বড় উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বিশ্বব্যাংকের কাছে ১০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা চাওয়া হবে। ৩৫ কোটি ডলারের সহযোগিতা চেয়ে এডিবির কাছে চিঠি দেওয়া হবে চলতি সপ্তাহেই।
এডিবির ঢাকা অফিস সূত্রে জানা গেছে, করোনা থেকে সুরক্ষায় জরুরি ওষুধ সংগ্রহ করতে আপাতত ৩০ লাখ ডলারের অনুদান দিচ্ছে এডিবি। সম্প্রতি এই বিষয়ে সরকারের সঙ্গে একটি চুক্তি সই হয়েছে। এই অর্থের সঙ্গে করোনার টিকা কেনার কথা বলা হয়নি। তবে সরকার জরুরি প্রয়োজন মনে করলে টিকা কেনার জন্যও এই অর্থ ব্যয় করতে পারবে। টিকা সংগ্রহে বাংলাদেশকে সহযোগিতার বিষয়ে এডিবির অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে সংস্থার ঢাকা অফিসের বর্হিসম্পর্ক বিভাগের টিম লিডার গোবিন্দ বাড় গতকাল সমকালকে বলেন, করোনার টিকা সংগ্রহে অনেক বড় অর্থের প্রয়োজন। এটা মাথায় রেখে বিশ্বব্যাপী কোন দেশে কী ধরনের অর্থ সহায়তা দেওয়া হবে, সে বিষয়ে এডিবির শীর্ষ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীনসহ কয়েকটি দেশ করোনাভাইরাসের টিকা আবিস্কারের শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এ বছরের শেষ নাগাদ কিংবা আগামী বছরের শুরুতে বাণিজ্যিকভাবে বাজারে টিকা আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।