সোমবার , ডিসেম্বর ২৩ ২০২৪
নীড় পাতা / উন্নয়ন বার্তা / উন্নয়নে মেলবে ডানা

উন্নয়নে মেলবে ডানা

নিজস্ব প্রতিবেদক:
সৈয়দপুরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ভারতের বিভিন্ন রাজ্য-নেপাল-ভুটান-শ্রীলংকা-চীনের সঙ্গে সরাসরি আকাশ পথে সৈয়দপুরের যোগাযোগ- দেশে কর্মসংস্থান, শিল্পায়ন, পর্যটন, অর্থনৈতিক উন্নয়নে নতুন

উপনিবেশিক শাসনামল থেকেই দেশের উত্তরাঞ্চরের নীলফামারীর সৈয়দপুর ‘বাণিজ্যিক শহর’। বিভাগীয় শহর রংপুর সিটি কর্পোরেশনের চেয়েও উপজেলা শহর সৈয়দপুরে শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতিষ্ঠান বেশি। ‘আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর’ নিয়ে উর্দুভাষী ও বাংলাভাষী মানুষের এই শহরটির আবালবৃদ্ধবনিতার স্বপ্ন এখন শিখর চূড়ায়। কারখানায় রেলের বগি তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্য জমি অধিগ্রহণ চলছে। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর আন্তর্জাতিকমানে উন্নীত হলেই ভারত, নেপাল, ভুটান, চীনসহ অনেক দেশের আকাশপথে সৈয়দপুরের বাণিজ্যিক সম্পর্ক গড়ে উঠবে। স্থানীয়ভাবে তৈরি পাটের লন্ড্রি ব্যাগ, টয় (খেলনা) ব্যাগ, গেম ব্যাগ, সোলজার ব্যাগ, শপিং ব্যাগ সরাসরি ইংল্যান্ড, আমেরিকা, জার্মানী, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া যাবে। পদচারণা বাড়বে বিদেশি ব্যবসায়ী-পর্যটকদের। পাল্টে যাবে মানুষের জীবন ধারা।

দার্জিলিং থেকে ৫৮ কিমি দূরে বাগডোগরা বিমানবন্দর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরের জেলাগুলোর যাত্রীসেবা দেয়। ওই বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও গুয়াহাটি ছাড়াও ভুটানের থিম্পু ও থাইল্যান্ডের ব্যাংককে বিমানে প্রতিবছর ১০ লাখ যাত্রী চলাচল করে। অথচ ভারতের পশ্চিম দিনাজপুরের ওই বাগডোগরা বিমানবন্দরে সব প্লেন নামতে পারে না। বাগডোগরায় যে বিমান নামতে পারবে না সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে সে সুবিধা পাবে। আবহাওয়া খারাপ এবং কারিগরি সমস্যা হলে ভুটানের থিম্পু বিমানবন্দরে বিমান নামতে না পারা বিমান এখন পাঠিয়ে দেয়া হচ্ছে দিল্লি বিমানবন্দরে। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানের হলে সে বিমান অনায়াসে সৈয়দপুর বন্দর ব্যবহারের সুযোগ পাবে। প্লেন ল্যান্ড করলেই নেভিগেশন চার্জ, হ্যান্ডলিং চার্জ, পার্কিংসহ আরও অনেক চার্জ দিতে হয়। এতে বাণিজ্যিকভাবে বিমান কর্তৃপক্ষ, যাত্রী এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ সবাই লাভবান হবেন। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক মানে নির্মিত হলে উত্তরাঞ্চলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে। উত্তরাঞ্চলের মানুষের দ্রæত ভাগ্যের পরিবর্তন আনবে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যসহ নেপাল, ভুটান, শ্রীলঙ্কার সঙ্গে আকাশপথে যোগাযোগ তৈরি হবে এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর রিজিওনাল হাব হিসেবে ব্যবহৃত হবে। পাল্টে যাবে সৈয়দপুরসহ উত্তরাঞ্চলের মানুষের জীবন ধারা। এজন্য ভুটান কয়েক বছর আগেই সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করার প্রস্তাব দিয়েছে।

বাস টার্মিনালে নামার পর রিকশাওয়ালা উর্দুতে কি বললেন কানাকড়িও বুঝলাম না। পাশের একজন বললেন, রিকশাওয়ালা উর্দুভাষী। আপনি কোথায় যাবেন জিজ্ঞাস করছে। হায়রে মানুষ! লালনের গান ‘বাড়ির পাশে আরশি নগর/ সেথা এক পরশি বসত করে/ আমি একদিনও না দেখিলাম তারে’ অবস্থা আমার। রংপুরে জন্ম অথচ পাশের সৈয়দপুরে উর্দুভাষীদের সম্পর্কে ধারণা নেই! উত্তরাঞ্চলের বাণিজ্যিক শহর সৈয়দপুর। নীলফামারী জেলার এ উপজেলা শহরটি বাঙালি-বিহারী সহাবস্থানের এক বৈচিত্রময় শহর। উপনিবেশিক শাসনামল থেকেই এ শহরে প্রচার-প্রচারণায় বাংলার পাশাপাশি উর্দুতে চলে। উর্দুভাষীদের কথা শুনে যেমন অবাক হতে হয়; তেমনি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামো, বিমানবন্দর, রেলওয়েসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ও সাফল্যের দিকে তাকালে মনে হয় সত্যিই অবাক কান্ড! দেশের আর দশটা শহরের চেয়ে সৈয়দপুর ব্যাতিক্রম। সেই সৈয়দপুরের অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রুপান্তর করার খবরে যেন স্বপ্নে ভাসছে সৈয়দপুরের মানুষ। সৈয়দপুরে দীগন্ত জোড়া মাঠে তামাকের চাষ চোখে ভাসলেও ব্রিটিশ আমলে প্রতিষ্ঠিত শহরটি অন্যরকম মর্যাদা পেয়ে থাকে।
উর্দুভাষী রিকশাচালকের ব্যাটারিচালিত রিকশায় নীলফামারী জেলার সৈয়দপুর উপজেলা শহরটি এক চক্কর ঘুরে চায়ের দোকানে বসতে হলো। ‘সৈয়দপুরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হচ্ছে, আপনাদের অনুভ‚তি কেমন’ প্রশ্ন ছুঁড়ে দিতেই পাল্টে গেল চা দোকানের পরিবেশ। সবাই যেন আগুন্তকের সঙ্গে কথা বলতে চান। তাদের বক্তব্যে বোঝা গেল দারুণ খুশি সবাই। বিমানবন্দরের উন্নতি হলে কি কি সুবিধা হবে, ভারত, চীন, নেপাল, ভুটানের সঙ্গে আকাশ পথে যোগাযোগ বাড়বে, সৈয়দপুরের বাণিজ্যিক গুরুত্ব আরো বাড়বে, মানুষের কর্মসংস্থান হবে ইত্যাদি ইত্যাদি সুবিধা নেয়ার জন্য তারা মুখিয়ে রয়েছেন। পাশের টেবিলে বসা উর্দুভাষী মোহাম্মদ নাদিম মোস্তফা এগিয়ে এসে ভাঙ্গা বাংলায় বলতে শুরু করলেন, ‘এদেশের শিক্ষা, চাকরি থেকে শুরু করে সব স্থানে আমাদের সঙ্গে বৈষম্য করা হয়। এখনো কোন কিছুই হলেই বিহারীর বাচ্চা বলে গালি শুনতে হয়’। চা দোকানদার বললেন, ‘আসলে বাঙ্গালী সমাজে মিশতে না পাড়ার উর্দুভাষী বিহারীদের এমন অভিযোগ’। জমে উঠেছে গল্প, হঠাৎ ইনকিলাবের সৈয়দপুর উপজেলা সংবাদদাতা নজির হোসেন নজুর ফোন; ‘আপনি কোথায়? শহরের বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন পুলিশ বক্সের পশ্চিমে তাকান আমি লাল বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছি’। অগত্যে গল্প ভেঙে দিয়ে ব্যাগ নিয়ে এগোতে হলো।

চোখাচোখি হতেই নজুর প্রস্তাব ‘চলেন বিমানবন্দরের রানওয়ে দেখিয়ে আনি। সৈয়দপুর ক্যান্টনমেন্টেকে বায়ে ফেলে এগিয়ে চলছে বাইক। মুন্সিপাড়ার বিমানবন্দর পেরিয়ে রানওয়ের পাশ দিয়ে ইট বিছানো রাস্তায় ভুজারিপাড়া,, বানিয়াপাড়া, তেলিপাড়া ঘুরে দেখা গেল অধিকাংশ বাড়িঘর সেমিপাকা। বিমানবন্দরের রানওয়ের প্রাচীর লাগোয়া মাটির ঘরও চোখে পড়লো। অতপর নিয়ে গেলেন বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপন সুশান্ত দত্তের রুমে। তরুণ কর্মকর্তা সুশান্ত কফি দিয়ে আপ্পায়ন করলেন। জানালেন, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিদিন ১১টি বিমান সৈয়দপুরে আসা যাওয়া করে। আশপাশের মানুষ বাস, ট্রেনের বদলে বিমানে ঢাকা যাতায়াতে বেশি আগ্রহী। সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে পুরোপুরি আন্তর্জাতিকমানে পরিণত করা গেলে এই বিমানবন্দর আঞ্চলিক বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহৃত হবে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ অর্থনৈতিক উন্নয়নের একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বর্তমানে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে বিদ্যমান জমির পরিমাণ ৩৩৬ একর। এর মধ্যে রয়েছে একটি টার্মিনাল ভবন, ৬ হাজার ৮০০ ফুট রানওয়ে ও অন্যান্য অবকাঠামো। জমি অধিগ্রহণের পর রানওয়ে ১২ হাজার ফুটে উন্নীত হবে, যা হবে দেশের বৃহত্তম রানওয়ে। সৈয়দপুর অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর প্রতিবেশি দেশ নেপাল ও ভুটানকে টার্গেট করে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত করা হচ্ছে। এজন্য ৯১৩ একর জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এর মধ্যে নীলফামারীর জেলার সৈয়দপুর উপজেলার বাঙালিপুর ৫৪৯ ও দিনাজপুর জেলার পার্বতীপুরে বেলাইচন্ডি ইউনিয়ন ৩৬৪ একর জমি। এসব জমির মধ্যে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১১, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৪৯, সৈয়দপুর সেনানিবাসের ২৩ ও রেলওয়ের ১ একর রয়েছে। এসব জমি বেসামরিক বিমান চলাচল সংস্থার অনুক‚লে হস্তান্তরের প্রক্রিয়া করছে ভ‚মি মন্ত্রণালয়। কয়েক বছর আগে মুন্সিগঞ্জের আড়িয়াল বিলে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জমি অধিগ্রহণের ‘নেতিবাচক পরিস্থিতি’ অভিজ্ঞতা থেকে সৈয়দপুরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জমি অধিগ্রহণের লক্ষ্যে জনমত সৃষ্টি করা হচ্ছে। বিমানবন্দরটি আন্তর্জাতিক হলে স্থানীয়দের সুবিধার বিষয়টি তুলে ধরে প্রচারণা চলছে। বিশেষজ্ঞরা জানালেন, আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নিয়ম অনুযায়ী কোনো বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপায়ণের জন্য রানওয়ে, ড্রামপেট, অ্যাপ্রোচ লাইট, ট্যাক্সিওয়ে, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল বিল্ডিং, কার্গো টার্মিনাল বিল্ডিং, কন্ট্রোল টাওয়ার, পাওয়ার হাউজ, পাম্ম হাউজ, ফায়ার স্টেশন, রাডার স্টেশনসহ ৩৩ ধরনের স্থাপনা দরকার। বিমানবন্দরের নকশার কাজ এর মধ্যেই শেষ হয়েছে। ৯১৩ একর জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে। তবে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দর হিসেবে তৈরি করতে তিন-চার বছর সময় লাগবে।

দু’ঘন্টা ঘুরে নীলফামারীর আমদানি ও রফতানিকারণ প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার, বিভিন্ন ব্যবসায়ী এবং বিভিন্ন পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বললে তারা জানালেন, সৈয়দপুরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে উত্তরাঞ্চলের অর্থনীতির চেহারা পাল্টে যাবে। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে নেপালের স্থলসীমান্ত কাঁকরভিটার দূরত্ব ৫৪ কিলোমিটার। আর ভুটানের দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার। সৈয়দপুরে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে এটাকেই ব্যবহার করবে নেপাল ও ভুটান। ভারতের ব্যবসায়ীদের বড় অংশ ব্যবহার করবেন সৈয়দপুর বিমানবন্দর। এই বিমানবন্দরের ব্যবসায়িক প্রতিদ্ব›দ্বী হয়ে উঠবে ভারতের বাগডোগরা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। মহানন্দা নদীর পাশের বাগডোগরা বিমানবন্দর শিলিগুড়ি থেকে ১৬ কি.মি. দূরে। জলপাইগুড়ি শহর থেকে ৫০ কিলোমিটার ও দার্জিলিং শহর থেকে ৫৮ কি.মি. দূরের ওই বাগডোগরা বিমানবন্দর কার্যত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তরের জেলাগুলোর যাত্রীসেবা দেয়। বিমানের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, পশ্চিম দিনাজপুরের বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে কলকাতা, দিল্লি, মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, চেন্নাই ও গুয়াহাটি শহরে বিমান যাতায়াত করে। এছাড়া বাগডোগরা বিমানবন্দর থেকে ভুটানের থিম্পু ও থাইল্যান্ডের ব্যাংককের সঙ্গে রয়েছে বিমান যোগাযোগ। বিমানবন্দরটি থেকে প্রতি বছর গড়ে ১০ লাখের বেশি যাত্রীসেবা পাওয়া যায়। সৈয়দপুরে একজন অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞ জানান, ভারতের বাগডোগরা বিমানবন্দরে সব প্লেন নামতে পারে না। আবার রাতে বাগযোগরা বিমানবন্দর ব্যবহারে সমস্যা। সৈয়দপুর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে সে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। বাগডোগরায় যে বিমান নামতে পারবে না সেগুলো সৈয়দপুর বিমানবন্দর ব্যবহার করবে। এছাড়াও আবহাওয়া খারাপ থাকলে বা কারিগরি সমস্যা হলে ভুটানের থিম্পু বিমানবন্দরে বিমান নামতে না পারলে সেই বিমান পাঠিয়ে দেয়া হয় হাজার মাইল দূরের দিল্লি বিমানবন্দরে। এজন্য ভুটান কয়েক বছর আগেই সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক করার প্রস্তাব দেয়। সৈয়দপুর বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হিসেবে ব্যবহার শুরু হলে প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্লেন ল্যান্ড করলে এর নেভিগেশন চার্জ, হ্যান্ডলিং চার্জ, পার্কিংসহ আরও কিছু চার্জ বিমান সংস্থাগুলোকে দিতে হবে। যে বিমান সংস্থার প্লেন ল্যান্ড করবে, তারা এসব চার্জ পরিশোধ করবেন। কোনো কারণে যাত্রীদের সৈয়দপুর থাকতে হলে আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। পরিবহন ব্যবস্থা আধুনিক করতে হবে। এতে কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি হবে বিমানবন্দর ঘিরে। উপজেলায় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড বেড়ে যাবে। শুধু নেপাল ও ভুটানই উপকৃত হবে না, ভারতের কয়েকটি রাজ্যও উপকৃত হবে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গাওয়ালি ঢাকা সফর করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করে বিমানবন্দরকে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহারের প্রস্তাব দিয়েছেন। নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রদীপ কুমার গাওয়ালি জানিয়েছেন নেপালের মেঘা সিটি বিরাটনগর থেকে সৈয়দপুরের বিমানবন্দরের ফ্লাইং টাইম মাত্র ২৫ মিনিট। এই বিমানবন্দর নেপাল ব্যবহার করতে পারলে কম সময়ের মধ্যে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়বে।

বিমানবন্দরের রানওয়ের আশপাশের কয়েকটি গ্রাম ঘুরে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বিমানবন্দকে দ্রুত আন্তর্জাতিকীকরণের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। যাদের সঙ্গে কথা বলেছি সকলেই খুশি। মনে হচ্ছে বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক হওয়ার খবরে সৈয়দপুরের মানুষ স্বপ্নের মধ্যে রয়েছেন। মুখিয়ে রয়েছেন নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের উন্নয়ন আর আকাশ বিদেশি বিমান ওড়ার দৃশ্য দেখতে। কিন্তু যাদের জমি অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া চলছে তাদের কেউ কেউ বিক্ষুব্ধ। বানিয়াপাড়ার এম ওমর ফারুক জমির দাম নিয়ে বেশ বিক্ষুব্ধ। তিনি বলেন, অধিগ্রহণের জন্য সরকার জমির যে দাম ধরছে বাস্তবে দাম তার তিন থেকে চারগুণ বেশি। বাড়িঘর এক লাখ ৩০ হাজার, আবাদি জমি ৮০ হাজার, এবং দূরের ধানি জমি ৩০ হাজার টাকা শতক ধরা হয়েছে। এ জন্য ১৫শ’ পরিবার বিমানবন্দরের বিরোধিতা করছে। তার মতে ৭টি মসজিদ, ৫টি মন্দির, ৬টি শশ্মান, ২টি ঈদগা ও ২টি স্কুল সরাতে হবে। আমরা টাকা চাই না। আমাদের জমি দেয়া হোক। তবে তেলিপাড়া, ভুজারিপাড়া, বানিয়াপাড়ার লোকজন জানালেন, তারা বিমানবন্দরের অধিগ্রহণের বিপক্ষে নন। তবে জমির দাম যেন ন্যায্য দেয়া হয়। গ্রামগুলো ঘুরতে গিয়ে চোখ পড়লো অধিগ্রহণে বেশি টাকা পাওয়ার জন্য অনেকেই ধানি জমিতে নতুন ঘর তুলেছেন।

দিনভর ঘুরে বাস টার্মিনালে হাজির। স্থানীয় সংবাদিক নজু ফিরে গেছেন। কিন্তু বাসে কোনো সিট নেই। অগত্যে রিকশা নিয়ে আবার ঘোড়াঘুড়ি। এ সময় দেশের বৃহত্তম রেলওয়ে কারখানার পাশে দাঁড়িয়ে অনেকের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানান, উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র সৈয়দপুর শহরের গোড়াপত্তন হয় উপনিবেশিক শাসনামলে। অবিভক্ত ভারতের আসাম বেঙ্গল রেলওয়ের সৈয়দপুরে করা হয় ছোট্ট রেলওয়ে স্টেশন। ইংরেজরা ১৮৭০ সালে ১১০ একর জমির উপর নির্মাণ করে রেলওয়ে কারখানা। ২৪টি শপে কারখানায় বাঙালি-বিহারি ছাড়াও বৃটিশ, এ্যাংলো ইন্ডিয়ান ক্যাথলিক ও প্রোটেস্টান্ট খ্রীষ্টানরা কাজ করতেন। কারখানায় রেলের নাট-বল্টু থেকে শুরু করে রেলওয়ের ব্রডগেজ ও মিটারগেজ লাইনের বগি মেরামতসহ সকল কাজ করা হয়। পলিটেকনিক ও কারিগরী শিক্ষার্থী ছাড়াও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা সফর বা পরিদর্শন করে বাস্তবজ্ঞান অর্জন করেন। সৈয়দপুরে রয়েছে অনেক দর্শনীয় ও ইংরেজ আমলের তৈরি বেশ কিছু অবকাঠামো। যা পর্যটকদের মুগ্ধ করে। শহরের গোলাহাটে শতাব্দীর প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী চিনি মসজিদ (কারুকাজ ও মনোরম সৌন্দর্য্য) কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। রয়েছে সেনানিবাস, রেলওয়ের বিভাগীয় হাসপাতাল, দর্শনীয় গির্জা, হরেক রকম কুটির শিল্প, টায়ার জ্বালিয়ে জ্বালানি তেল তৈরির কারখানা, জুট মিল, বেনারসি পল্লী, রেলওয়ে অফিসার্স ক্লাব, শিল্প, সাহিত্য সংস্কৃতির ধারক ও বাহক শতবছরের পুরাতন শিল্প সাহিত্য সংসদ অন্যতম। সৈয়দপুর থেকে বাস ও মিনিবাসে সহজেই দেশের বৃহত্তম তিস্তা সেচ প্রকল্প, নীলফামারীর নীলসাগর, জলঢাকার রাজা হরিশচন্দ্র পাঠ, ডোমারের ধর্মপালের গড়, স্বপ্নময় স্বপ্নপুরী, আকর্ষণীয় পিকনিক স্পট ভিন্নজগত যাওয়া যায়। রিকশায় ঘুরতে ঘুরতে কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালের পাশে চোখে পড়ল বাস-ট্রাকের পরিত্যক্ত টায়ার জ্বালিয়ে জ্বালানি তেল তৈরি হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে আন্তর্জাতিক মানের নোহা প্রেসার কুকার, ননস্টিক প্যান, ওভেন ও অন্যান্য তৈজষপত্র। এগুলো দেশের চাহিদা মিটিয়ে পার্শ্ববর্তী ভারত, নেপাল ও ভুটানে রফতানি করা হচ্ছে। পরচুলা ও শহরের বাঙালিপুরে জুতার চামড়ায় নকশা হচ্ছে।

সৈয়দপুর উত্তরাঞ্চলের কার্যত বাণিজ্যিক নগরী। শহরের গোলাহাট, কাজীহাট, হাতিখানাসহ বেশ কিছু এলাকায় গড়ে ওঠেছে বেনারসি শিল্প। পাট দিয়ে তৈরি করা হয় লন্ড্রি ব্যাগ, টয় (খেলনা) ব্যাগ, গেম ব্যাগ, সোলজার ব্যাগ, শপিং ব্যাগ। এগুলো দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইংল্যান্ড, আমেরিকা, জার্মানি, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, ফিনল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড, অষ্ট্রেলিয়ায় রফতানি করা হয়। অভ্যন্তরীণ বিমানবন্দর আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে উন্নীত হলে রাজধানী ঢাকা ভায়া নয়; সৈয়দপুর থেকেই সবকিছু বিদেশে রফতানি করা সম্ভব হবে।

আরও দেখুন

পেঁয়াজের চারা পুড়ে শেষ-কৃষকের মাথায় হাত! জমিতে এখন শুধুই ঘাস!

নিজস্ব প্রতিবেদক নলডাঙ্গা,,,,,,,,,,,,,,,,,জমিতে নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের চারা দেখে নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি জমি লিজ নিয়ে …