- ভোলা-বরিশাল সেতু বাস্তবায়নের পথে
- আগামীকাল হবিগঞ্জ
- সরেজমিন
বঙ্গোপসাগর মোহনায় মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীবেষ্টিত দেশের একমাত্র সর্ববৃহৎ দ্বীপজেলা ভোলার এক সময়ে খ্যাতি ছিল ধান সুপারি আর ইলিশের ভাণ্ডার হিসেবে। কিন্তু ধান সুপারি আর ইলিশ এই তিনের মধ্যে এখন আর এই জেলার সীমাবদ্ধতা নেই। প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদে ভরপুর দেশের সর্বদক্ষিণের এই জেলা এখন বাংলাদেশের একটি সম্ভাবনাময় জেলায় পরিণত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে নতুন নতুন প্রকল্প আর উন্নয়নের জোয়ারে একদিকে যেমন এখানকার দৃশ্যপট বদলে গেছে, অন্যদিকে সৃষ্টি হচ্ছে বেকার যুবকদের কর্মস্থান। সেই উন্নয়নের ছোঁয়া শুধু শহরই নয় পৌঁছে গেছে প্রত্যন্ত গ্রাম গঞ্জেও। এমনকি এক সময়ের কাল্পনিক স্বপ্নও বাস্তবে রূপ নিয়েছে। জেলার মূল ভূ-খণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দুর্গম চরাঞ্চলেও পৌঁছে গেছে বিদ্যুত সুবিধা। এখন দিনের আলো শেষে রাতের আঁধারে বিদ্যুতের আলোতে আলোকিত হয়ে উঠে মানুষের ঘরবাড়ি। এতে করে ঘুচে গেছে শহর-গ্রামের পার্থক্য। যা ছিল এখানকার মানুষের জন্য এক অকল্পনীয় অধ্যায়। এছাড়াও জেলার সর্বদক্ষিণের সাগর মোহনার দ্বীপ চর কুকরি-মুকরি ও মনপুরার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে কাজে লাগিয়ে সরকারী নানা প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে ইতোমধ্যে সেখানে গড়ে উঠেছে পর্যটন কেন্দ্র। যা ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের কাছে নয়নাভিরাম পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিণত হয়েছে। পাশাপাশি মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গন থেকে রক্ষা পেয়েছে ভোলার ভাঙ্গন কবলিত এলাকাবাসী। এছাড়াও দ্বীপের ২০ লক্ষাধিক মানুষের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন ভোলা-বরিশাল সেতু এখন বাস্তবায়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আর এই সেতু নির্মাণ হলে শুধু ভোলাবাসীই নয় দক্ষিণাঞ্চলসহ দেশের অর্থনীতিতে বিশাল এক বিপ্লব ঘটবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
১৯৮৪ সালে মহাকুমা থেকে ভোলা জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। এখানে রয়েছে ৭টি উপজেলা, ৫টি পৌরসভা, ৭০টি ইউনয়ন, ১০টি থানা। ৩ হাজার ৪০৩.৪৮ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই দ্বীপের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে নদী ভাঙ্গন। স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় থাকলেও সুপরিকল্পিত কার্যকরী কোন পদক্ষেপ বা কাজ বাস্তবায়ন হয়নি। যা বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তিন মেয়াদে বাস্তবায়িত হয়েছে এবং অনকে প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিক সহযোগিতায় তার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের মহানায়ক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সাবেক শিল্প ও বাণিজ্যমন্ত্রী ও ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদের প্রচেষ্টায় সরকারের একের পর এক উন্নয়নে ভোলা বাংলাদেশের মধ্যে একটি শ্রেষ্ঠ জেলায় রূপান্তরিত হওয়ার পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এতে করে পাল্টে যাচ্ছে চিরচেনা দ্বীপ জেলা ভোলার সেই পুরনো চিত্র। একযুগ আগের পিছিয়ে থাকা ভোলা শহর এখন পরিণত হয়েছে আধুনিক পরিকল্পিত নগরীতে। ভোলা জেলা শহর ছাড়াও উন্নয়নের ছোঁয়া গেলেছে অন্যান্য উপজেলাতেও। ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য সাবেক বন, পরিবেশ ও জলবায়ু উপমন্ত্রী আবদুল্লা আল ইসলাম জ্যাকব, ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন এবং ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল স্ব-স্ব নির্বাচনী এলাকায় উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে আমূল পরিবর্তনের ফলে সুফল পাচ্ছে এলাকার জনগণ।
দ্বীপজেলা ভোলায় ইতোপূর্বে নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকরী তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। তাই নদী ভাঙ্গনে বহু এলাকা বিলীন হয়ে যায়। ভোলা সদরের ইলিশা জংশন এলাকায় যখন রাক্ষুসে মেঘনার ভয়াবহ ভাঙ্গনে যখন শত শত বসত ঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা, বাজার বিলীন হওয়ার দ্বারপ্রান্তে ছিল ঠিক তখন প্রধানমন্ত্রীর সহায়তায় ও তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমদের প্রচেষ্টায় প্রায় ৪ কিলোমিটার এলাকা সিসি বøক স্থাপনের মাধ্যমে ইলিশা বাজারসহ বহু সরকারী ও বেসরকারী স্থাপনা রক্ষা পায়। শুধু নদী ভাঙ্গন রোধই নয় স্বাধীনতার পরে বর্তমান ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সচিব তোফায়েল আহমেদের প্রচেষ্টায় ভোলার উন্নয়নের সূচনা হয়। দৃশ্যমান ভোলার উন্নয়ন বলতেই তোফায়েল আহমেদ। বর্তমানের তার প্রচেষ্টায় ভোলায় অসংখ্য রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, জেলা শহরে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, পৌরভবনসহ সরকারী অসংখ্য বহুতল ভবন, ভোলা খেয়াঘাটে আধুনিক টার্মিনাল, নদী বন্দর স্থাপনসহ ব্যাপক উন্নয়নে গত প্রায় এক যুগে পাল্টে গেছে ভোলার চিত্র। এমনকি তোফায়েল আহমেদ ব্যক্তি উদ্যোগে ভোলার বাংলাবাজারে স্বাধীনতা জাদুঘর ও বৃদ্ধাশ্রম নির্মাণ করেন। স্বাধীনতা জাদুঘরে ব্রিটিশ-ভারত আন্দোলন থেকে শুরু করে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জীবন ও রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অসংখ্য বইয়ের পাশাপাশি ডিজিটার প্রযুক্তির মাধ্যমে সচিত্র তথ্য প্রদর্শিত হচ্ছে। যা নতুন প্রজন্মের কাছে অজানা ইতিহাস, জ্ঞান আহরণের জন্য এখন আকর্ষণীয় দর্শনীয় স্থান হিসাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তোফায়েল আহমেদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাবাজারে নির্মাণ করেছেন আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একটি বৃদ্ধাশ্রম এবং আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর অনন্য উদাহরণ দৃষ্টিনন্দন একটি মসজিদ। তিনি বাংলাবাজার ফাতেমা খানম কলেজ, ওবায়দুল হক কলেজসহ অসংখ্য স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি নতুন নতুন ভবন নির্মাণ করেছেন। এছাড়াও ভোলার মানুষের আধুনিক চিকিৎসা সেবার জন্য তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাংলাবাজারে একটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল নির্মাণ কাজ চলছে। সংসদ সদস্য নির্বাচনে ৮ বার বিজয়ী তোফায়েল আহমেদ শুধু বর্তমান আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয় মেয়াদেই নয়, বরং ১৯৯৬ সালের আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার থাকাকালে তার প্রচেষ্টায় সড়ক পথে যানবাহন চলাচলের জন্য ভোলার ভেদুরিয়া থেকে বরিশালের লাহারহাট রুটে ফেরি চলাচল শুরু হয়।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব জানান, বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় চরফ্যাসনকে আধুনিক ও পর্যটন উপজেলায় রূপান্তরিত করার জন্য শেখ রাসেল শিশু ও বিনোদন পার্ক, জ্যাকব টাওয়ার, ফ্যাসন স্কয়ার, বেতুয়া প্রশান্তি পার্ক, চর কুকরি মুকরিতে আধুনিক রেস্ট হাউস নির্মাণ করা হয়েছে। চর কুকরিতে বঙ্গবন্ধু ইকোপার্ক নির্মাণ করা হচ্ছে। তাছাড়াও চরফ্যাসন মনপুরায় প্রায় হাজার কিলোমিটার পাকা রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। তার নির্বাচনী এলাকা চরফ্যাসন ও মনপুরাবাসীকে রক্ষা করার জন্য হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বøকবাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে। জনগণের সুবিধার জন্য জেলা শহর থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট, সহকারী জেলা ও দায়রা জজ কোর্ট, সিনিয়র সহকারী জজ কোর্ট, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট নিয়ে চরফ্যাসনে স্থাপন করা হয়েছে। প্রশাসনিক সুবিধার জন্য চরফ্যাসন উপজেলায় দক্ষিণ আইচা, শশীভূষণ ও দুলারহাট নামে পৃথক তিনটি থানা স্থাপন করা হয়েছে। সাবেক জাতীয় সংসদ সদস্য মরহুম অধ্যক্ষ মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম এর স্মৃতি জড়িত চরফ্যাসন কলেজ, মনপুরা কলেজ, চরফ্যাসন টিবি স্কুল এবং মনপুরা হাজিরহাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারী করা হয়েছে। চরফ্যাসনে শতভাগ ঘরে বিদ্যুত সংযোগ স্থাপন করা হয়েছে। এমনকি চরফ্যাসনের বিচ্ছিন্ন দ্বীপচর ইউনিয়ন মুজিবনগর ও কুকরি মুকরিতে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুতায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে। চরফ্যাসনে ১০০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন জানান, বঙ্গবন্ধু কন্যার নির্দেশে তিনি তার নির্বাচনী এলাকা লালমোহন ও তজুমদ্দিন উপজেলায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে চলেছেন। লালমোহন ও তজুমদ্দিনে মেঘনার ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় প্রায় হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি বøক স্থাপন করা হয়েছে। অসংখ্য রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্ট, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উপজেলা পরিষদ কমপ্লেক্স, থানা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের অধীনে নতুন ৩শ’ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণসহ বিভিন্ন রাস্তার সংস্কার, লালমোহন ও তজুমদ্দিন থানা ভবন, দুটি উপজেলা পরিষদ ভবন ও অডিটরিয়াম নির্মাণসহ ১৬৭টি নতুন স্কুল ভবন নির্মাণ করা হয়। এছাড়া নিজ উদ্যোগে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করেছেন এমপি শাওন। তজুমদ্দিন কলেজ সরকারীকরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি লালমোহনের মানুষের চিত্ত বিনোদনের জন্য অত্যাধুনিক ডিজিটাল সজীব ওয়াজেদ জয় পার্ক নির্মাণ করা হয়। লালমোহন ও তজুমদ্দিনে ঘুরলে বর্তমান সরকারের অসংখ্য জনবান্ধবমুখী উন্নয়ন পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে।
ভোলা-২ আসনের সংসদ সদস্য আলী আজম মুকুল জানান, প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিক সহযোগিতায় দৌলতখান ও বোরহানউদ্দিনে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বর্তমানে তার উদ্যোগে দৌলতখান-বোরহানউদ্দিন উপজেলার মেঘনা নদীর ২.৮৪ কিলোমিটার এলাকা ৫২২ কোটি টাকা ব্যয়ে নদীর সিসি বøক ও জিও ব্যাগ দিয়ে নদীর তীর সংরক্ষণ প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন করেছেন। আগামী ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দৌলতখান উপজেলার হাসপাতাল, থানা, উপজেলা কমপ্লেক্স, দৌলতখান বাজার, বোরহানউদ্দিন হাকিমউদ্দিন বাজার রক্ষা পাবে। তিনি আরও বলেন, তার নির্বাচনী এলাকা বোরহানউদ্দিন হেলিপ্যাডে পর্যটক ও ভ্রমণপিপাসু মানুষের জন্য অত্যাধুনিক দৃষ্টিনন্দন পার্ক স্থাপনের কাজ শুরু করা হয়েছে। দৌলতখান পৌরসভায়ও একইভাবে একটি দৃষ্টিনন্দন পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে বোরহানউদ্দিন ও দৌলতখানে দুটি কলেজ এবং একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকারী করা হয়েছে। দুর্গম চরাঞ্চলে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুত সুবিধা পৌঁছে দেয়া হয়েছে চরবাসীকে। বোরহানউদ্দিন উপজেলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে উত্তোলিত গ্যাস ব্যবহার করে প্রায় ৫শ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করে ভোলার চাহিদা মিটিয়ে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছে। এছাড়াও ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় আবিষ্কৃত গ্যাস ভোলা, বোরহানউদ্দিন, দৌলতখান, লালমোহন, চরফ্যাসনসহ ৫টি পৌরসভায় ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত হয়েছে বলেও জানিয়েছেন এমপি মুকুল। তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রীর সার্বিক সহযোগিতায় এলাকায় রাস্তাঘাট, পুল-কালভার্টসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
ভোলা পৌর সভার টানা তৃতীয় মেয়াদের নির্বাচিত পৌর মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, গত ১০ বছরে ভোলা পৌরসভায় ৯টি ওয়ার্ডে প্রায় ৮৪ কিমি রাস্তা মেরামত ও পাকা রাস্তা নির্মাণ, ৩৮ কিমি ড্রেন, ৭টি ব্রিজ, ৬.৬৫ কিমি খাল খনন, ৩ কিমি তীর সংরক্ষণ ও ৩.৭৮৫ কিমি ওয়ার্কওয়ে, পৌরবাসীর চিত্ত বিনোদনের জন্য ভোলা সরকারী স্কুলের মাঠ উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ফোয়ারাসহ শিশুদের খেলাধুলার জন্য বিভিন্ন রাইড স্থাপন, ১০.৫০ কিমি ফুটপাথ ও ড্রেন, ৩৯ কিমি পানি সরবরাহ লাইন স্থাপন, বস্তি উন্নয়ন, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য ফোয়ারাসহ বিভিন্ন রাইড স্থাপন, দর্শনার্থীদের জন্য জেলা পরিষদ পুকুর ও ফোয়ারাসহ প্রায় ২শ’ ৮৮ কোটি টাকা ব্যয়ে অসংখ্য উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের ভোলা পৌর এলাকার দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। নান্দনিক সাজে শোভা পাচ্ছে পৌর এলাকার দৃশ্যমান উন্নয়ন প্রকল্প। এছাড়াও বর্তমানে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। শুধু ভোলা পৌরসভাই নয়, জেলার দৌলতখান, বোরহানউদ্দিন, লালমোহন ও চরফ্যাসন পৌরসভাতেও ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে বৃদ্ধি পেয়েছে নাগরিক সুবিধা।
ভোলার সমস্যা নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে উন্নয়ন ॥ ভোলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী বাবুল আখতার জানান, ভোলার ইলিশা রাজাপুর এলাকায় ৩.৯৫ কিলোমিটার এলাকা ৩৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে সিসি বøকের মাধ্যমে নদী ভাঙ্গন থেকে রক্ষা করা হয়েছে। এছাড়াও ভোলা জেলায় প্রায় ২ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নদী তীর সংরক্ষণসহ বেড়িবাঁধ নির্মাণ করা হয়। ভোলা জেলার ৭ উপজেলায় ২০১২ সাল থেকে ২০২০ পর্যন্ত ৩২.৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ৪৬.৮০ কিলোমিটার নদীর তীর সংরক্ষণ (রিভার ব্যাংক প্রটেকশন), ৩৫.৫৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ঢালু সংরক্ষণ (¯েøাপ প্রটেকশন) কাজে প্রায় ২ হাজার ৬শ’ ৯০ কোটি টাকা ব্যয় হয়। অপরদিকে চরফ্যাসন উপজেলার কলমি ইউনিয়নের বকশী বাজার লঞ্চঘাট থেকে বাবুর হাট লঞ্চঘাট পর্যন্ত তেঁতুলিয়া নদীর ভাঙ্গন রোধে ও চর কুকরি মুকরিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণে প্রায় সোয়া ৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, নদীর তীর সংরক্ষণ ও ¯েøাপ প্রটেকশন কাজ ও লালমোহন উপজেলার লডহার্ডিঞ্জ থেকে ধলিগৌর নগর ইউনিয়ন পর্যন্ত মেঘনা নদী ভাঙ্গন রোধে প্রায় সোয়া ৮ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, নদীর তীর সংরক্ষণ ও ¯েøাপ প্রটেকশন কাজ চলছে।
ভোলার প্রাকৃতিক খনিজ সম্পদ ॥ রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাপেক্স ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বোরহানগঞ্জ ইউনিয়নে শাহাবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্রটি আবিষ্কার করলেও তার কোন ব্যবহার ছিল না। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভোলার গ্যাসের উৎপাদন ও ব্যবহার শুরু হয়। ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগ উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক মন্ত্রী ভোলা-১ আসনের সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমেদ ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর শহরের যুগীরঘোল এলাকায় জৈনপুরের পীর হজরত মাওলানা হাসনাইন আহমেদ সিদ্দিক (রহ.)-এর খানকা শরিফে স্থাপিত গ্যাসের চুলায় আগুন জ্বালিয়ে ভোলায় গ্যাসের আবাসিক সংযোগের উদ্বোধন করেন। এর পরই গ্যাসভিত্তিক ভোলায় বিভিন্ন শিল্পকলকারখানা স্থাপন শুরু হয়।
বিদ্যুতের উন্নয়ন ॥ এক সময় ভোলায় বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের কারণে অতিষ্ঠ ছিল ভোলাবাসী। পটুয়াখালী থেকে নদী তলদেশ দিয়ে জাতীয় গ্রিডলাইন থেকে বিদ্যুত আসত ভোলায়। কিন্তু সেই লাইনে ত্রæটি থাকায় ও লোডশেডিংয়ের কারণে ভোলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত দেয়া সম্ভব হতো না। কিন্তু বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ভোলার বোরহানউদ্দিনে গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত প্লান্ট স্থাপনের কাজ শুরু হয়। বোরহানউদ্দিনে বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ২২৫ মেগাওয়াট গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত প্লান্ট স্থাপন করা হয়। পিডিবির তত্ত¡াবধায়ক প্রকৌশলী আনিসুজ্জামান আরও জানান বোরহানউদ্দিনে নতুন বিদ্যুত বাংলাদেশ পাওয়ার প্লান্ট ২২৫ মেগাওয়াট ও এগ্রিকো ৯৫ মেগাওয়াট গ্যাস ভিত্তিক বিদ্যুত প্লান্ট স্থাপন করা হয়। এই তিনটি প্লান্ট থেকে প্রায় ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন হয়। এর মধ্যে ৪৫ মেগাওয়াট বিদ্যুত ভোলার বিভিন্ন উপজেলায় ব্যবহার হচ্ছে। বাকি বিদ্যুত ভোলা থেকে জাতীয় গ্রিডলাইনে দেয়া হয়। এছাড়াও ভোলা সদরের গ্যাস ভিত্তিক ৩৪ মেগাওয়াট রেন্টাল বিদ্যুত প্লান্ট থেকেও ভোলায় বিদ্যুত সরবরাহ করা হয়।
এদিকে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর তোফায়েল আহমেদের প্রচেষ্টায় ভোলার বাংলাবাজারে পল্লী বিদ্যুত সমিতির কার্যক্রম শুরু হয়। বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ ঘরে ঘরে বিদ্যুত প্রকল্পের মাধ্যমে দ্বীপজেলা ভোলার মূল ভূখণ্ডে পল্লী বিদ্যুত সমিতি শতভাগ বিদ্যুতায়ন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
গণপূর্ত বিভাগের উন্নয়ন ॥ মহকুমা থেকে ১৯৮৪ সালে ভোলা জেলা হওয়ার পর সরকারী বড় যেসব স্থাপনা হয়েছে তার মধ্যে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলেই দৃশ্যমান সর্বাধিক বড় বহুতল ভবন স্থাপন করা হয়। যার ফলে ভোলা শহর থেকে শুরু করে গ্রামের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সরকারী সেবা পৌঁছে যায়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের শাসন আমলে বাংলাবাজারে টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার, চরফ্যাসন, মনপুরা, চর শশীভূষণ, বোরহানউদ্দিন, দক্ষিণ আইচাসহ মোট ৫টি সাব রেজিস্ট্রার অফিস, ঢাল চর ও চর কুকরি মুকরিতে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্র, চরফ্যাসনের কুকরি মুকরিতে কোস্টাল ফরেস্ট ডেভেলপমেন্ট সেন্টার ও অত্যাধুনিক রেস্টহাউস, ৭ তলা বিশিষ্ট ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতাল, অত্যাধুনিক থানা ভবন, চরফ্যাসন ও মনপুরা উপজেলায় আদালত ভবন, সরকারী কর্মকর্তাদের বাস ভবন, সরকারী শিশু পরিবারের হোস্টেল নির্মাণ করা হয়। এছাড়া ভোলা কোস্টগার্ডের দক্ষিণ জোনের অফিস ভবন, ভোলা সদরে পুলিশের ৩ তলা বিশিষ্ট অফিসার্স মেস, দৌলতখান, মনপুরা, তজুমদ্দিনসহ বিভিন্ন উপজেলায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন, ৭টি উপজেলায় ১টি করে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমপ্লেক্স ভবন, ভোলা সদরের ব্যাংকের হাটে ভোলা টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট, ভোলা জেলায় ১২টি ভূমি অফিস, ভোলা সদরের ব্যাংকের হাটে মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হয়।
ভোলা সদরে ৮তলা বিশিষ্ট চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ভবন, ভোলা সদরে জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদফতর, লালমোহন, তজুমদ্দিন, কৃষকদের ট্রেনিং সেন্টার ভবন, দৌলতখানে কৃষি সেবা কেন্দ্র ভবনসহ ৭ উপজেলায় মডেল মসজিদ নির্মাণ কাজ চলছে। এসব উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় হচ্ছে ৬৫৫ কোটি টাকা।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল দফতরের উন্নয়ন ॥ দ্বীপবাসীকে ঝড় জলোচ্ছ¡াস থেকে রক্ষার জন্য ভোলা জেলার ৭ উপজেলায় ৫২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ৯৭টি সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ করা হচ্ছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের (এলজিইডি) বাস্তবায়নে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে আশ্রয় কেন্দ্রগুলোর ৪০ ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ‘বহুমুখী দুর্যোগ আশ্রয় প্রকল্প’র মাধ্যমে গত বছরের মার্চ মাসে এর কাজ শুরু হয়। ১০ হাজার ৫০০ স্কয়ার ফিট জমির উপর তিনতলা বিশিষ্ট প্রতিটি স্কুল কাম সাইক্লোন সেল্টার নির্মাণ আগামী বছরের মার্চের মধ্যে শেষ করা হবে। ১০তলা ফাউন্ডেশনের এসব আশ্রয় কেন্দ্রে পরবর্তিতে আরো সম্প্রসারণ করা যাবে। দুর্যোগকালীন সময়ে প্রতিটি কেন্দ্রে ২ হাজার মানুষ অবস্থান নিতে পারবে। ব্যবস্থা রাখা হয়েছে পর্যাপ্ত গবাদি পশু রাখারও। এতে করে প্রাকৃতিক দুর্যোগে এসব আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় দুই লাখ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে বলে জানান ভোলা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ ইব্রাহীম খলিল। এলজিইডির এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, বর্তমান সরকারের আমলে ভোলা সদরের বাগমারায় ৪৪০ মিটার পিসি গার্ডার ব্রিজ, ইলিশা মালের হাট সড়কে ৯৫ মিটার ব্রিজ, ভোলা সদরে শান্তির হাটে ৯৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে গার্ডার ব্রিজ, ভোলা সদরের ইলিশা আর এ্যান্ড এইচ ওয়াপদা ক্লোজার বাজারে ৮৫ মিটার গার্ডর ব্রিজ, তজুমদ্দিন উপজেলার বড় মলংচুড়ায় ১১৫ মিটার দৈর্ঘ্যরে আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, ভোলার চরফ্যাসনে দুলার হাট শশীভূষণ আঞ্জুর হাট সড়কে মায়া নদীর ওপর ৩৭৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে ব্রিজ, চরফ্যাসন আবু বকর পুরে ৯৯ মিটার আরসিসি গার্ডার ব্রিজ, চরফ্যাসন দুলার হাটে ৩৫০ মিটার পিসি গার্ডার, লালমোহনের নাজিরপুরে ২০২ মিটার পিসি এবং আর সিসি গার্ডার ব্রিজ, চরফ্যাসনের সওজ কালিয়া কান্দিতে ৯৯ মিটার আরসিসি গার্ডারসহ মোট ১০টি ১৯৫৮ মিটার দৈর্ঘের ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয়ে প্রায় ১৬ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। তিনি আরও জানান, ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এলজিইডির অধীনে ভোলা জেলায় ১৭০২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ, ৩৭৭১ মিটার ব্রিজ কালভার্ট, ৪০টি গ্রথ সেন্টার ও হাট বাজার, ৪টি উপজেলা কমপ্লেক্স ভবন, ২২টি ইউনিয়ন পরিষদ কমপ্লেক্স ভবন, ৬টি ঘাট নির্মাণ, ৫৪টি সাইক্লোন সেন্টার নির্মাণ, ৯৪টি সাইক্লোন সেল্টার পুনর্বাসন, ৮.১০ কিলোমিটার খাল খনন, ৬১৮টি বিদ্যালয় নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ, ১টি পিটিআই ভবন নির্মাণ, ৬টি বাজার উন্নয়ন, ১৩টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস, ৫টি উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হয়। এতে ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ৪শ’ ৭৩ কোটি টাকা। এছাড়াও ২০১৯-২০ ও ২০২০-২১ অর্থবছরে ৩শ’ ৬০ কোটি টাকার রাস্তা পুল, কালভার্ট, স্কুল সাইক্লোন সেল্টারসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ হচ্ছে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন ॥ স্বাধীনতার পর তোফায়েল আহমদের প্রচেষ্টায় ভোলা সদর থেকে চরফ্যাসন পর্যন্ত ৬টি উপজেলার একমাত্র সংযোগ ও প্রধান সড়কের প্রথম উন্নয়ন কাজ শুরু হয়। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ভোলা-চরফ্যাসন সড়কের ঝুঁকিপূর্ণ ৩৪টি বাঁক সরলীকরণ করা হয়। ডাওরী ও লালমোহন পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্ত করা হয়। গত প্রায় দশ বছরে ১৭৬ কিলোমিটার সড়ক উন্নয়নের কাজ সম্পন্ন করা হয়েছে। এছাড়াও নির্মাণ করা হয় ২টি পিসি গার্ডার ব্রিজ। ভোলা সদরের পরানগঞ্জ হতে চরফ্যাসন উপজেলার বাবুর হাট পর্যন্ত ৩৩ মিটার প্রস্থ ৯৪ কিলোমিটার পর্যন্ত সাড়ে ৮শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এই সঙ্গে এই সড়কের ওপর ঝুঁকিপূর্ণ ৪টি বেইলি ব্রিজ ভেঙ্গে নতুন ৪টি পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ করা হবে। এছাড়াও ভোলার ভেদুরিয়া হতে ইলিশা ফেরিঘাট পর্যন্ত সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ চলছে।
স্বপ্নের ভোলা-বরিশাল সেতু ॥ দেশের বৃহত্তর দ্বীপজেলা ভোলার মানুষের দুঃখ মূল ভূখণ্ড থেকে এই জেলাটি বিচ্ছিন্ন। রাত হলে ইচ্ছে হলেই বা জরুরী প্রয়োজনে মানুষ এ জেলা থেকে অন্যত্র যেতে পারে না। বিশেষ করে কোন মানুষ রাতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে গিয়ে চরম বিপাকে পড়ে। যেতে না পেরে অনেক সময় মুমূর্ষু রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। দ্বীপ জেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণে। কিন্তু এটা ছিল এক স্বপ্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই স্বপ্ন বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা শুরু করেন আওয়ামী লীগের বর্ষীয়ান নেতা তোফায়েল আহমেদ। ২০১৮ সালে ৮ ফেব্রæয়ারি বরিশালে বঙ্গবন্ধু উদ্যানে জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ করার ঘোষণা দেন। তার পরই দ্রæতগতিতে ভোলা-বরিশাল সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কার্যক্রম চলতে থাকে। ইতোমধ্যেই সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাই কাজ হয়েছে। প্রকাশিত এক রিপোর্টে সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) প্রধান প্রকৌশলী কাজী মোঃ ফেরদৌসের বরাত দিয়ে উল্লেখ করা হয়, ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সেতু প্রকল্পের আওতায় দুটি নদীর ওপর সেতু নির্মাণ করা হবে। দুই নদীর মাঝে জেগে ওঠা চরের ওপর চার কিলোমিটার ভায়াডাক্ট তৈরি করা হবে। সেতু নির্মাণে আনুমানিক ১২ হাজার ৯১৬ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
উন্নয়নের ছোঁয়া ভোলার পর্যটনে ॥ এক সময়ের অবহেলিত এই দ্বীপে প্রায় এমন কোন সেক্টর নেই যে উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। ভোলার প্রাকৃতিক সম্পদককে কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছে দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন এলাকা। ভোলার চরফ্যাসনের কুকরি মুকরির ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল যেন এক মিনি সুন্দরবনে পরিণত হয়েছে। সেখানে এক সঙ্গে সাগরের ঢেউ, সূর্যদয়, বিশাল সমুদ্রের জলরাশি আর সমুদ্য সৈকত, লাল কাঁকড়া, বনের হরিণ, নানা পশু পাখির সমারোহ ভ্রমণপিপাসুদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। পর্যটকদের জন্য আকর্ষণীয় করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ভোলা-৪ আসনের সংসদ সদস্য, সাবেক উপমন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলামের প্রচেষ্টায় এই জনপদে ইতোমধ্যে গড়ে উঠেছে অত্যাধুনিক রেস্টহাউসসহ রাস্তাঘাট। নির্মাণ হচ্ছে ইকোপার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এতে করে বেসরকারী উদ্যোক্তারা সেখানে ইতোমধ্যে বিনিয়োগ করতে শুরু করেছে। চরফ্যাসনের প্রাকৃতিক নৈর্সগিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য পর্যটকদের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বাংলাদেশ ও উপমহাদেশের মধ্যে সবচাইতে উঁচু জ্যাকব টাওয়ার।
ভোলার ইলিশ সম্পদ ॥ জেলায় গত ৬ বছরে (২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১) ইলিশের উৎপাদন প্রায় ৭৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এর মধ্যে গেল অর্থবছরে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৯০ টন। যা দেশের মোট ইলিশ উৎপাদনের মধ্যে ৩৩ ভাগ। আর চলতি অর্থবছর ১ লাখ ৭৭ হাজার ৩৯০ টন ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়েছে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ। জেলা মৎস্য অফিস জানায়, জেলায় ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন হয়েছে ৯৮ হাজার ৪০৪ টন। ২০১৬-১৭ বছরে ১ লাখ ২৯ হাজার ৫৫৮ টন। ১৭-১৮ অর্থবছরে ১ লাখ ৩১ হাজার ৭৩৯ টন। ১৮-১৯ বছরে ১ লাখ ৩০ হাজার ৮৯২ টন। ১৯-২০ অর্থবছরে ১ লাখ ৭১ হাজার ২৬৮ টন ও ২০-২১ বছরে উৎপাদন দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৯০ টনে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এসএম আজাহারুল ইসলাম জানান, ভোলায় কয়েক বছর ধরে ইলিশের উৎপাদন বেড়ে চলছে। মূলত মা ইলিশ ও জাটকা ইলিশ সংরক্ষণ, ইলিশ অভায়শ্রম সংরক্ষণ, বিশেষ কম্বিং অপারেশন ও ৬৫ দিন সমুদ্রে অভিযান সফলভাবে বাস্তবায়নের প্রভাব পড়েছে ইলিশ উৎপাদনে।
ভোলা জেলা পরিষদ : ভোলায় গত ১০ বছরে জেলা পরিষদের অধীনে ৭ উপজেলায় বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হয়েছে। জেলা পরিষদ সূত্র জানিয়েছে, জেলা পরিষদের মাধ্যমে ৫টি ডাকবাংলো, চরফ্যাসন ও লালমোহনে ২টি পার্ক, ৪টি শহীদ মিনার, ৯টি কলেজ, ভোলায় ঈদগাহ, অডিটোরিয়াম, শতাধিক ঘাটলা, কবরস্থান, শ্মশান, হাই স্কুল নির্মাণ করা হয়। এছাড়া চরফ্যাসনের সাড়ে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে খাস মহল মসজিদ নির্মাণাধীন রয়েছে। জেলায় বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান উন্নয়নসহ প্রায় শত কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে বলে জানা গেছে।