নিউজ ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কোনো উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে পরিবেশ ও প্রতিবেশ রক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘যে কোনো প্রকল্প গ্রহণ করলে সেখানে পরিবেশটা যাতে গুরুত্ব পায়, সেদিকে সবার দৃষ্টি দিতে হবে। জলাধার সংরক্ষণ, পর্যাপ্ত সবুজ এলাকা রাখা এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা রেখেই প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে।’ প্রধানমন্ত্রী বুধবার সকালে গণভবনে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউকের কয়েকটি নির্মাণ প্রকল্পের নকশার উপস্থাপনা পর্যবেক্ষণকালে এ কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইংয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ কথা জানানো হয়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং রাজউক প্রস্তাবিত ঢাকার শেরেবাংলা নগরে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণ, পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তের শিবচরে শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ, কনজারভেশন অব ফ্লাড ফ্লো জোন অ্যাট তুরাগ রিভার অ্যান্ড কম্প্যাক্ট টাউনশিপ ডেভেলপমেন্ট এবং কেরানীগঞ্জ ওয়াটার ফ্রন্ট স্মার্ট সিটি নির্মাণ প্রকল্পগুলোর স্থাপত্য-নকশার উপস্থাপনা পর্যবেক্ষণ করেন। যত্রতত্র শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠতে যাতে না পারে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রতিটি এলাকায় নির্দিষ্ট শিল্প জোনে হবে। যেখানে-সেখানে অপরিকল্পিত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা যাবে না। এ বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে।
শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ডাইভারসিটি বাড়ানোর ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অ্যাগ্রো প্রসেসিং এবং আইটি ডিভাইসসংক্রান্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।
এ সময় চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, গৃহায়ন ও গণপূর্ত সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
সিভিএফ সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সিভিএফ বাংলাদেশের সভাপতিত্বে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য একটি যথার্থ কণ্ঠস্বর হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। তিনি বলেন, আমি আশা করছি এটি প্যারিস চুক্তির অধীনে উন্নত দেশগুলোকে তাদের প্রতিশ্রুতিগুলো পূরণ করতে চাপ অব্যাহত রাখতে পারবে। আন্তর্জাতিক জলবায়ু পরিমণ্ডলে এখন সিভিএফ-এর একটি উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি রয়েছে। এটি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য বৈধ কণ্ঠস্বর হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। বাংলাদেশের সভাপতিত্বে সিভিএফ-এর সদস্যপদ বৃদ্ধিই তার প্রমাণ। প্রধানমন্ত্রী বুধবার সন্ধ্যায় বাংলাদেশ থেকে ঘানার কাছে সিভিএফ সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তর অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি এ অনুষ্ঠানে যুক্ত হন।
শেখ হাসিনা বলেন, আমি বিশ্বাস করি, আমাদের সভাপতিত্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায় হবে ঝুঁকিপূর্ণ সমস্যাকে জলবায়ু দুর্বলতা থেকে স্থিতিস্থাপকতা এবং সমৃদ্ধিতে রূপান্তর করা। বাংলাদেশে আমরা আমাদের ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা’ তৈরি করছি। আমরা বিশ্বাস করি এটি অন্য ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য তাদের নিজস্ব প্রেক্ষাপটে একটি দিকনির্দেশনা প্রদান করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ঘানার কাছে সিভিএফ প্রেসিডেন্সি হস্তান্তর করতে পেরে অত্যন্ত আনন্দিত। এই অনুষ্ঠানে সদয় উপস্থিতির জন্য আমি রাষ্ট্রপতি নানা আকুফো-আদ্দোকে ধন্যবাদ জানাই। আমি ঘানার প্রেসিডেন্সির সার্বিক সাফল্য কামনা করি।
ঘানার প্রেসিডেন্ট নানা আকুফো-আদ্দো, বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন; পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন; ঘানার পররাষ্ট্রমন্ত্রী শার্লি আয়োর্কোর বোচওয়ে, গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশন বান-কি মুনও ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
সিভিএফ-এর থিমেটিক অ্যাম্বাসেডর ও বাংলাদেশের ন্যাশনাল অ্যাডভাইজরি কমিটি ফর অটিজম অ্যান্ড নিউরোডেভেলপমেন্ট ডিজঅর্ডার্সের চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ অনুষ্ঠানে একটি ভিডিও বার্তা প্রদান করেন। প্রধানমন্ত্রীর সিভিএফ প্রায়োরিটিজ বিষয়ক বিশেষ দূত আবুল কালাম আজাদ পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে সিভিএফ প্রেসিডেন্সি রিপোর্ট উপস্থাপন করেন।
আজ ডেল্টা কনফারেন্স উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী : আজ প্রথমবার অনুষ্ঠিত হচ্ছে দুদিনব্যাপী ডেল্ডা ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসাবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছয়টি সেশন ও একটি গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সেখানে আলোচনা হবে সেক্টোরাল অগ্রগতি ও চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা নিয়ে। উন্নয়ন সহযোগীদের সামনে উপস্থাপন হচ্ছে শতবর্ষের বদ্বীপ পরিকল্পনা (ডেল্টা প্ল্যান)। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এটি তৈরি করেছে সরকার। ২১০০ সাল পর্যন্ত নেওয়া এই পরিকল্পনার প্রথম ধাপে ২৭টি কর্মসূচির আওতায় বাস্তবায়িত হচ্ছে ৮০টি প্রকল্প। যার অধিকাংশ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়।