নিউজ ডেস্ক:
দেশের উন্নয়ন চাইলে আবারও নৌকায় ভোট দেওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহবান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, বিএনপি-জামায়াত দেশের উন্নয়ন করে না, ধ্বংস করে।
গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর কাওলায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
গত ৭ অক্টোবর এই সভা হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে পিছিয়ে গতকাল করা হয়।
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘জানি না বিএনপি নির্বাচনে আসবে কি না। কারণ তাদের নেতা কে? তারা নির্বাচন বানচাল করার ষড়যন্ত্র করবে। দেশবাসীকে সজাগ থাকতে হবে।
উন্নয়ন করতে চাইলে নৌকায় ভোট দিন। কেউ কি বিএনপির কথায় নাচবে? তাদের কথায় চলবে? তারা তো উন্নয়ন করে না। তারা ধ্বংস করে।’
তিনি বলেন, এ দেশে যেকোনো মূল্যে যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং জনগণ নির্বিঘ্নে স্বাধীনভাবে ভোট দেবে।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা দেশের উন্নতি সহ্য করে না। এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে জিয়া বা খালেদা জিয়ার কোনো অবদান নেই। বরং তারা ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের উন্নতি হয়, এটা আজ আমরা প্রমাণ করেছি। গত ২৯ বছরে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা দেশের মানুষের জন্য কী করেছে? কিছুই করেনি।
যা করেছে আওয়ামী লীগই করেছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজ দেখি, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য বিএনপি নেতারা অনশন করে। আমি জিজ্ঞেস করি, তারা কয়টা থেকে অনশন শুরু করেছিল? বাসায় কী দিয়ে নাশতা করে এসেছে? বাড়িতে কী দিয়ে ভাত খাবে? কয় ঘণ্টার অনশন? নাটক করারও একটা সীমা থাকে। তারা এই নাটকই করে যাচ্ছে।’
বিএনপির প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘তারা নাকি আমাদের উত্খাত করে দেবে। সময় দিয়েছিল ১০ ডিসেম্বর। বিজয়ের মাসে আওয়ামী লীগ সরকারকে উত্খাত করবে? যে সরকার জনগণের রায় নিয়ে বারবার নির্বাচিত হয়েছে। দেশের মানুষ এটা মেনে নিতে পারে না।’
আলোচিত এক-এগারোর সময়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেই সময় মুচলেকা দিয়ে খালেদা জিয়ার ছেলে বিদেশে পালিয়ে যায়। যে নাকি জীবনে আর রাজনীতি করবে না। কিন্তু যে টাকা সে পাচার করেছে, সেই মামলায় এফবিআই সাক্ষ্য দিয়ে গিয়েছিল। সে ওই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত। তাদের ব্যবসা ছিল অস্ত্র চোরাকারবার, অর্থ পাচার।’
লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার মা তো অসুস্থ। আপনারা (বিএনপির নেতারা) অনশন করেন। তাহলে ছেলে কেন মাকে দেখতে আসে না? এটা কেমন ছেলে, সেটা আমার প্রশ্ন। মা তো অসুস্থ, মরে মরে। সে নাকি যখন-তখন মরে যাবে।… হ্যাঁ, বয়সও হয়েছে, অসুস্থ তো বটে। মাকে দেখতে আসে না কেন? আমি তো বলব, মাকে দেখতে আসুক।’
২০০১ সালের জাতীয় নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, ‘গ্যাস বিক্রির প্রস্তাব আমার কাছেও এসেছিল। বলেছিলাম, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে, দেশের স্বার্থ কখনো বেচি না। ক্ষমতার লোভ আমার নেই। খালেদা জিয়া এসে গ্যাস তো দিতেই পারেনি, উল্টো বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছে। আর বিদেশ থেকে টাকা এসেছিল এতিমখানার জন্য, এতিম একটা টাকাও পায়নি, সব টাকা মেরে দিয়েছে নিজে।’
তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়ার নাইকো দুর্নীতি মামলার বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিতে কানাডার পুলিশ এবং আমেরিকা থেকে গোয়েন্দা সংস্থার লোক আসার জন্য তৈরি। যখনই তারা আসবে বলে, তখনই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘নির্বাচনী ব্যবস্থার উন্নতি করেছি। বিএনপি ২০০১-০৬ সালে ক্ষমতায় থাকতে এক কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোটার লিস্ট করেছিল, সেটি সরিয়ে দিয়ে ছবিসহ ভোটার তালিকা করা হয়েছে। নির্বাচন পরিচালনার জন্য আইন করে নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি, যাতে নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ক্ষমতায় থাকতে সে বলেছিল, আওয়ামী লীগ ১০০ বছরেও ক্ষমতায় আসতে পারবে না। বলেছিল, শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী দূরে থাক, বিরোধীদলীয় নেতাও হতে পারবে না। আল্লাহর মাইর দুনিয়ার…এখন তিনি না প্রধানমন্ত্রী, না বিরোধীদলীয় নেত্রী, কিছু হতে পারেননি। কিন্তু দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি।’
খালেদা জিয়ার বাসায় চিকিৎসার প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তার বড় বোন, বোনের জামাই, ভাই আমার সঙ্গে গণভবনে দেখা করতে আসে। কান্নাকাটি করে। সরকারপ্রধান হিসেবে আমি যতটুকু ক্ষমতা…যদিও ক্ষমতায় থাকতে আমাকে হত্যার জন্য গ্রেনেড হামলা, কোটালিপাড়ায় বোমা পুঁতে রাখা, বারবার হামলা করেছিল। যখন সে এক-একটা বত্তৃদ্ধতা দিয়েছে, তার পরেই হামলা হয়েছে। আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছেন। নেতাকর্মীরা জীবন দিয়ে রক্ষা করেছে। আমি তাকে বাসায় থেকে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
ঢাকায় আরো এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকার যানজট নিরসন করতে আমরা ভবিষ্যতে পুরো ঢাকা ঘিরে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করে দেব। এই প্রকল্পে কারো জমি অধিগ্রহণ করা হবে না। নৌকা মার্কাই উন্নয়ন দিয়েছে, পানির সমস্যার সমাধান করেছে। ওরা যেন দেশকে ধ্বংস করতে না পারে। একমাত্র নৌকা মার্কাই পারে দেশকে এগিয়ে নিতে।’
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান। বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক, শাজাহান খান ও জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ ও আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম, যুবলীগের চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস পরশ, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মান্নান কচি প্রমুখ।