শনিবার , নভেম্বর ১৬ ২০২৪
নীড় পাতা / জাতীয় / উদ্বোধন হচ্ছে আরও ৫০ মডেল মসজিদ

উদ্বোধন হচ্ছে আরও ৫০ মডেল মসজিদ

নিউজ ডেস্ক:
নিজস্ব অর্থায়নে এত মসজিদ নির্মাণ করেনি বিশ্বের কোনো সরকার ♦ সব মিলিয়ে পঞ্চম ধাপে উদ্বোধন ২৫০ ♦ এ বছরই উদ্বোধন হবে ৫৬৪ মসজিদ

পঞ্চম ধাপে ৩০ জুলাই সারা দেশে আরও নতুন ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে নির্মিত এ নিয়ে এখন পর্যন্ত মোট ২৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধন করা হচ্ছে। সারা দেশে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫৬৪টি মডেল মসজিদ নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই এসব কাজ শেষ হওয়ার কথা। প্রকল্পসংশ্লিষ্টরা বলছেন, এর আগে কোনো মুসলিম শাসক বা সরকারপ্রধান একসঙ্গে এত মসজিদ নির্মাণ করেননি। ফলে শুধু বাংলাদেশই নয়, বিশ্বের মধ্যে এটিকে একটি অনন্য এবং যুগান্তকারী ঘটনা হিসেবেই দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন করে উদ্বোধন হতে যাওয়া মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হচ্ছে গাজীপুরের শ্রীপুর, কিশোরগঞ্জের হোসেনপুর, মানিকগঞ্জের হরিরামপুর, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর, শরীয়তপুরের ডামুড্যা, বগুড়ার আদমদীঘি ও সোনাতলা, নওগাঁর রানীনগর ও বদলগাছী, নাটোরের সিংড়া, পাবনার বেড়া, ঈশ্বরদী ও সদর, রাজশাহীর পুঠিয়া ও দুর্গাপুর, গাইবান্ধার পলাশবাড়ী ও নাগেশ্বরী, দিনাজপুরের বিরামপুর, লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা, নেত্রকোনার মোহনগঞ্জ, খালিয়াজুড়ী ও সদর, জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ, ময়মনসিংহের ত্রিশাল ও সরাইল, চাঁদপুরের হাইমচর ও সদর, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট ও সদর, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, ফেনীর ছাগলনাইয়া, রাঙামাটির নানিয়ারচর ও রাজস্থলী, খুলনার ফুলতলা, পাইকগাছা ও সদর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা মসজিদ, ভোলার দৌলতখান, ঝালকাঠির নলছিটি, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া, সিলেটের গোলাপগঞ্জসহ মোট ৫০টি।

মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মো. নজিবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ৩০ জুলাই সারা দেশে নতুন করে আরও ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করা হবে। নজিবুর রহমান বলেন, ‘এটি গতানুগতিক কোনো মসজিদ নয়। এটি আরব বিশ্বের মসজিদ-কাম-ইসলামিক কালচারাল সেন্টারের আদলে করা। এ মসজিদ ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে থাকছে নারী ও পুরুষের পৃথক অজু ও নামাজ আদায়ের সুবিধা, লাইব্রেরি, গবেষণা ও দীনি দাওয়াত কার্যক্রম, পবিত্র কোরআন হেফজ ও শিশুশিক্ষাসেবা, অতিথিশালা, বিদেশি পর্যটকদের আবাসন, লাশ গোসলের ব্যবস্থা, হজযাত্রীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইমামদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র এবং ইমাম-মুয়াজ্জিনের আবাসনসহ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য অফিসের ব্যবস্থা।’ জানা গেছে, জেলা-উপজেলা পর্যায়ে ৪০ শতক জায়গায় অপার বিস্ময়ের এ মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। জেলা পর্যায়ে ও উপকূলীয় এলাকায় দৃষ্টিনন্দন চার তলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং উপজেলার জন্য তিন তলা মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ৫৬৪টি মডেল মসজিদে সারা দেশে প্রতিদিন ৪ লাখ ৯৪ হাজার ২০০ পুরুষ ও ৩১ হাজার ৪০০ নারী একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন।

ইসলামী চিন্তাবিদ ও আলেম সমাজের প্রতিনিধিরা বলছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে ইসলামের খেদমতে সর্বপ্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করেন। ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জন্য তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে যান। টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমার জন্য সুবিশাল প্রান্তর বরাদ্দ করেন বঙ্গবন্ধুই। আজকের বাংলাদেশের মুসলমানদের তাবলিগ জামাতের যে মূল কেন্দ্র কাকরাইল মসজিদ, সেটিও জাতির পিতার অবদান। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর প্রকৃত ইসলামী মূল্যবোধ থেকে সরে গিয়ে এ দেশের মাথার ওপর উগ্রবাদ জেঁকে বসে। ২১ বছর পর বঙ্গবন্ধুতনয়া শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। এরপর নানামুখী ষড়যন্ত্র তাঁকে কিছু সময়ের জন্য দেশসেবা থেকে দূরে রাখলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে তিনি পুনরায় সরকার গঠন করেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে গত সাড়ে চৌদ্দ বছরে বাংলাদেশের অভূতপূর্ব অগ্রগতি হয়েছে। পৃথিবীর অনেক শক্তিশালী দেশের চেয়েও এখন বাংলাদেশের জিডিপি ও এসডিজির অগ্রগতি ভালো। বিভিন্ন অবকাঠামো ও রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের পাশাপাশি দেশরত্ন শেখ হাসিনা ধর্মীয় ও নৈতিক উন্নয়নের দিকেও নজর দিয়েছেন। পিতার দেখানো পথ ধরে তিনি জাতিগত সংস্কার ও আধুনিকায়নের উদ্যোগ নিয়েছেন। আর এজন্যই দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ জনগোষ্ঠীর ইবাদতের জায়গা নির্মাণ শুধু নয়, সেটিকে মডেল হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। জানা গেছে, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ইসলামের প্রচার ও প্রসার এবং মসজিদকে জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলায় একটি করে মোট ৫৬৪টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মাণ করছে বর্তমান সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২১ সালের ১০ জুন প্রথম ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন। দ্বিতীয় ধাপে ২০২২ সালের ১৬ জানুয়ারি ৫০টি, গত বছর ১৬ মার্চ তৃতীয় ধাপে ৫০টি মডেল মসজিদ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। চার ধাপে এখন পর্যন্ত মোট ২০০ মডেল মসজিদের উদ্বোধন করেছেন শেখ হাসিনা। ৩০ জুলাই ৫০টি মডেল মসজিদ ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র উদ্বোধনের ফলে মোট উদ্বোধনের সংখ্যা হবে ২৫০টি। চলতি বছর ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশে ৫৬৪টি মসজিদের উদ্বোধন করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। ২০১৭ সালে এ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন এ প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্প হাতে নেওয়ার সময় এর অনুমিত খরচ ছিল ৯ হাজার ৬২ কোটি ৪১ লাখ টাকা। এ খরচের ৯০ শতাংশ অনুদান হিসেবে সৌদি আরব থেকে আসার কথা ছিল। কিন্তু এক বছরের বেশি সময় অপেক্ষা করেও সেই সহায়তা পাওয়া যায়নি। বিদেশি সহায়তা না মিললেও এ প্রকল্প থেকে সরে যায়নি সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় সরকারের নিজস্ব তহবিলের মাধ্যমে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। ২০১৮ সালের ২৬ জুন প্রকল্পের খরচ ৩৪০ কোটি টাকা কমিয়ে ৮ হাজার ৭২২ কোটি করা হয় এবং বাস্তবায়নের সময়সীমা ২০১৯ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ভূমি অধিগ্রহণে দেরি হওয়া, করোনার আঘাত, নির্মাণসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধির কারণে প্রকল্পের ব্যয়ও বেড়ে যায়। প্রকল্পটির নতুন মেয়াদকাল ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত এবং এর জন্য মোট খরচ হবে ৯ হাজার ৪৩৫ কোটি টাকা। ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ৬৪টি জেলা শহরে এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬৯টি চার তলাবিশিষ্ট মডেল মসজিদ নির্মিত হচ্ছে। এ মসজিদগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৩৬০ দশমিক ০৯ বর্গমিটার। ‘বি’ ক্যাটাগরিতে উপজেলা পর্যায়ে ৪৭৫টি মডেল মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ১ হাজার ৬৮০ দশমিক ১৪ বর্গমিটার। ‘সি’ ক্যাটাগরিতে উপকূলীয় এলাকায় ১৬টি মসজিদ নির্মাণ করা হচ্ছে। এগুলোর প্রতি ফ্লোরের আয়তন ২ হাজার ৫২ দশমিক ১২ বর্গমিটার। উপকূলীয় এলাকার মসজিদগুলোয় আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে এর নিচতলা ফাঁকা থাকবে। একেকটি মসজিদ নির্মাণ করতে ব্যয় হচ্ছে জেলা শহর ও সিটি করপোরেশন এলাকায় ১৫ কোটি ৬১ লাখ ৮১ হাজার, উপজেলা পর্যায়ে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ৮০ হাজার এবং উপকূলীয় এলাকায় ১৩ কোটি ৬০ লাখ ৮২ হাজার টাকা। জেলা সদর ও সিটি করপোরেশন এলাকার মডেল মসজিদগুলোয় একসঙ্গে ১ হাজার ২০০ মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। উপজেলা ও উপকূলীয় এলাকার মডেল মসজিদগুলোয় একসঙ্গে ৯০০ মুসল্লির নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা থাকছে।

আরও দেখুন

নন্দীগ্রামে রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুত 

নিজস্ব প্রতিবেদক নন্দীগ্রাম ,,,,,,,,,,বগুড়ার নন্দীগ্রামে রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হয়েছে। এখন হেমন্তকাল। মাঠ …