বুধবার , ডিসেম্বর ২৫ ২০২৪
নীড় পাতা / জেলা জুড়ে / উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড ব্যবহারের অভিযোগ বড়াইগ্রাম হাসপাতালের উপ সহকারীর বিরুদ্ধে!

উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড ব্যবহারের অভিযোগ বড়াইগ্রাম হাসপাতালের উপ সহকারীর বিরুদ্ধে!


নিজস্ব প্রতিবেদক, বড়াইগ্রাম:
নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ম অমান্য করে মেডিকেল অফিসারের পরিবর্তে শিশু রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন শাহাবউদ্দিন আহমেদ নামে একজন উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো)। স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার উপস্থিত থাকলেও তিনি প্রভাব খাটিয়ে জরুরী বিভাগে নিয়মিত রোগী দেখেন এবং প্রেসক্রিপশন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

নিয়মানুযায়ী তার প্রেসক্রিপশন করার কথা না থাকলেও তাতো করছেনই, উল্টো উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধও লিখে দিচ্ছেন-যা শিশু স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্বক ক্ষতিকর। একই সঙ্গে কমিশন বাণিজ্য করতে অপ্রয়োজনে প্রায় সব শিশুকে একাধিক টেস্ট দেয়ারও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এসব ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা বরাবর একাধিক অভিযোগ করলেও অজ্ঞাত কারণে তিনি শুধু সতর্কীকরণ নোটিশ দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেছেন বলে জানা গেছে।

জানা যায় প্রায় ৩ বছর যাবৎ হাসপাতালে শিশু রোগী দেখছেন মাত্র ১৫ দিনের আইএমসিআই প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত একজন মেডিকেল উপ-সহকারী শাহাব উদ্দিন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়ম অমান্য করে প্রতিটি ব্যবস্থাপত্রে উচ্চ মাত্রার ডাবল স্টেন্থ এন্টিবায়োটিক ঔষধ লিখেন, লিখেন স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধও। সেই সাথে সেফটিএক্সোন ইনজেকশন এর ব্যবহার তো আছেই। এছাড়া তিনি কোন প্রকার প্যাথলজিক্যাল টেষ্ট লেখার নিয়ম না থাকলেও শুধুমাত্র কমিশন পাওয়ার লোভে প্রায় প্রতিটি রোগীকে সর্বোচ্চ ৮ টি পর্যন্ত টেস্ট করতে দিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কোনো রোগী টেস্ট করাতে না চাইলে বা হাসপাতালের অন্য চিকিৎসকের কাছে যেতে চাইলে শাহাবউদ্দিন তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকেরা।

এসব উচ্চ মাত্রার এন্টাবায়োটিক ও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবন করে শিশুদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়াসহ ঘন ঘন রোগাক্রান্ত হওয়ার ঘটনা ঘটছে। একই সঙ্গে অপ্রয়োজনীয় টেস্ট করাতে গিয়ে রোগীরাও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন। তিনি প্রতিদিন বিকালে একাধিক স্থানে নিজেকে শিশু বিশেষজ্ঞ পরিচয় দিয়ে শিশু রোগী দেখেন। এসব ব্যাপারে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, বড়াইগ্রাম এলাকার সাব্বির আহমেদ নামে এক বছর বয়সের একজন রোগীকে তিনি ব্লাড গ্রুপ, সিবিসি, আরবিএস, ইউরিনসহ মোট আটটি প্যাথলজিক্যাল টেস্ট দিয়েছেন। লক্ষীকোল এলাকার সুরভী নামে অপর এক রোগীকে ৬টি টেস্ট দিয়েছেন তিনি।

এ ব্যাপারে উপলশহর এলাকার অভিভাবক আব্দুর রহমান জানান, হাসপাতালে শাহাবউদ্দিনের কাছে চিকিৎসা নেয়ার পর আমার বাচ্চা উল্টো রোগাটে হয়ে যায়। পরে আমি বাচ্চাকে নিয়ে একজন শিশু বিশেষজ্ঞের স্মরণাপন্ন হলে তিনি শাহাবউদ্দিনের প্রেসক্রিপশন দেখে জানান যে, এই ব্যবস্থা পত্রের ঔষধ খাওয়ানোর কারণেই বাচ্চার স্বাভাবিক বৃদ্ধি থেমে গেছে এবং রোগাটে হয়ে গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক মেডিকেল অফিসার ক্ষোভের সঙ্গে জানান, তিনি হাসপাতালে মেডিকেল অফিসার (শিশু) নেমপ্লেট লাগানো একটি কক্ষে বসে নিয়মিত শিশুদের চিকিৎসা দেন, আমরা হাসপাতালে থাকলেও তিনিই রোগী দেখেন। রোগীর অভিভাবকরাও তাকে শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার হিসাবেই জানে। যা একজন মেডিকেল অফিসার হিসাবে আমাদের জন্য রীতিমত অপমানজনক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি জানান, যেখানে স্বাস্থ্য বিভাগ এন্টিবায়োটিক ব্যবহারকে নিরুৎসাহিত করছে সেখানে সরকারী হাসপাতালে এভাবে উচ্চ মাত্রার এন্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ লিখে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে নীরবে ধংস করে দেয়া হচ্ছে। তারা অবিলম্বে শিশুদের চিকিৎসার জন্য একজন মেডিকেল অফিসারকে দায়িত্ব দেয়ার দাবী জানান।

এ ব্যাপারে মেডিকেল উপ-সহকারী শাহাবউদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, রোগীদের সুস্থ করার জন্যই এন্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ লিখি, টেষ্ট করাতে বলি। তবে তিনি নিয়মানুযায়ী প্রেসক্রিপশন করা এবং টেষ্ট করানোর নির্দেশ দিতে পারেন কিনা জানতে চাইলে কোন উত্তর দিতে পারেননি।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. পরিতোষ কুমার রায় বলেন- শিশু বিভাগের জন্য কোন মেডিকেল অফিসার বরাদ্দ না থাকায় উপ-সহকারীকে দিয়ে দায়িত্ব পালন করাতে হচ্ছে। তবে তার ব্যাপারে আমিও কিছু অভিযোগ পেয়ে তাকে সতর্কীকরণ নোটিশ দিয়েছি। এছাড়া সেখানে একজন মেডিকেল অফিসার বসানোর চেষ্টা করবো।

আরও দেখুন

চাঁপাইনবাবগঞ্জে অসহায় শীতার্ত মানুষের মাঝে আনসার-ভিডিপির কম্বল বিতরণ

নিজস্ব প্রতিবেদক চাঁপাইনবাবগঞ্জে,,,,,,,,,,,,,, দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের অসহায় মানুষের শীতের কষ্ট লাঘবের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন বাংলাদেশ …