নিজস্ব প্রতিবেদক, ঈশ্বরদী:
আবহাওয়া অনুকূল, উর্বর মাটির কারণে পাবনা জেলার ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষিতে বেশ সমৃদ্ধ। ঈশ্বরদী উপজেলাতে প্রচুর ফসল উৎপাদিত হয় বলে কৃষি, বীজ উৎপাদন কেন্দ্র, গবেষণা কেন্দ্র সংরক্ষণাগার এই উপজেলা অবস্থিত। এছাড়া লিচু উৎপাদনের জন্য প্রসিদ্ধ লাভ করার জন্য এই উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের অর্ধশত গ্রামের মানুষ লিচু চাষের দিকে ঝুঁকেছে। বোম্বাই জাতের লিচুর রাজধানী এবং লিচু আবাদের অন্যতম প্রসিদ্ধ এলাকা বলে খ্যাত ঈশ্বরদীর লিচুবাগানে এবারে ৮০ ভাগ গাছে লিচুর মুকুল এসেছে।
সরজমিনে ঘুরে দেখা ও জানা যায়, বাগানগুলোতে লিচুর মুকুল আসার আগে থেকে লিচু চাষিরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। মুকুল আসার পরে অনেকটাই ব্যস্ত পরিচর্যা করতে। বৈরী আবহাওয়া সৃষ্টি না হলে লিচুর ফলন ভালো হবে। মুকুল এসে যেন ঝরে না পড়ে সে কারণে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত কৃষকেরা।
চাষীরা লিচুর ফলন ধরে রাখার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করছেন। কৃষকরা জানান, বেশীরভাগ গাছে লিচুর মুকুল আসায় এবারে ফলন অনেক ভালো হবে বলে ধারণা করছি। পরিবেশ অনুকূলে থাকায় লিচু বাগানের উপর নির্ভরশীল বাগান মালিক ও লিচুচাষির এখন পর্যন্ত আর্থিক বিপর্যয়ের আশংকা করছেন না। যে ২০ ভাগ গাছে মুকুল আসেনি, সেসব গাছে গতবছর ভালো ফলন হয়েছে। প্রকৃতিগত কারণে একবার যে গাছে লিচুর ফলন ভালো হয়, পরের বার মুকুল আসেনা বা কম আসে।
জানা যায়, ফলন্ত প্রতিটি গাছে ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত লিচু ধরে। গত বছরের চেয়ে এবারে লিচুর আবাদ বেড়েছে। ঈশ্বরদীতে ৩,৪০০ হেক্টর জমিতে এবছর লিচুর আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে অতিরিক্ত প্রায় ৮০০ হেক্টর জমি লিচু চাষের আওতায় এসেছে। প্রতিবছর এখানে ২০ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিকটন লিচু উৎপাদন হয়। টাকার হিসেবে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকারও বেশী লিচু ঈশ্বরদীতে বিক্রি হয়। মাঘ মাসের শেষ থেকে ফাল্গুনের মাঝামাঝি সময়ে লিচুর মুকুল আসতে শুরু হয়। ফাল্গুনের শেষে লিচুর সোনারঙা মুকুলে কুঁড়ি আসতে থাকে। চৈত্রের শুরুতে কুঁড়িতে ধারণ করে। বৈশাখ জুড়ে গাছে গাছে টকটকে লাল লিচুর দেখা মিলবে।
ঈশ্বরদীর কোলেরকান্দি গ্রামের বাগান মালিক আব্দুল বাতেন বলেন, আমার দশ বিঘা জমিতে লিচু বাগান রয়েছে। গত বছর ফলন ভালো না হলেও এবারে বেশীরভাগ গাছেই মুকুল এসেছে।
চরমিরকামারী পূর্বপাড়া গ্রামের আহমাদুল্লাহ মিলন বলেন, এবছর মুকুলে মুকুলে ছেয়ে গেছে বাগান। প্রকৃতিগত কারণে কিছু গাছে মুকুল আসেনি। যেটা প্রতিবছরই হয়ে থাকে। তবে গতবারের মতো বিপর্যয়ের শঙকা নেই এবং বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা বলে জানান তিনি।
লিচু চাষে জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক কিতাব বিশ্বাস বলেন, ঈশ্বরদীর গ্রামাঞ্চলের কৃষকরা বেশীরভাগই লিচু চাষের উপর নির্ভরশীল। আর্থিক বিবেচনায় ঈশ্বরদীর গ্রামাঞ্চলের ফসলী জমিতে এখন অনেকেই লিচু বাগান করেছেন। আর লিচু বাগানের আয় থেকেই এসব কৃষকদের সারা বছরের ভরণ-পোষণ নির্ভর করে। এইবছর লিচুচাষীরা লাভবান হবে বলে মনে করছেন তিনি।
ঈশ্বরদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, লিচু ঈশ্বরদীর প্রধান অর্থকরী ফসল। লিচু গাছে মুকুল আসার আগে ও পরে কিছু পরিচর্যা রয়েছে এ বছরে আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়েছি রোগবালাই-পরিচর্যা সম্পর্কে। এছাড়া ঈশ্বরদী উপজেলায় বিভিন্ন কৃষকদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সচেতন করা ও বিভিন্ন সমস্যার সমাধান কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রেখেছি। জলবায়ু ও প্রাকৃতিক পরিবেশ এবারে লিচু চাষের জন্য এখন পর্যন্ত অনুকূলে। সাধারণত: জানুয়ারী মাসের শেষে এবং ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথমে বোম্বাই লিচুর গাছে মুকুল আসে। কিন্তু জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন দেরীতে মুকুল আসছে। শীতের প্রকোপ কমে যাওয়ায় ২০ ভাগ গাছে মুকুল কম অঙ্কুরিত এবং বেশী পরিমাণ কচি পাতা গজিয়েছে। তবে মোজাফ্ফর জাতের লিচুর মুকুল জানুয়ারীর প্রথম দিকে আসায় এই জাতে কোন সমস্যা হয়নি। ঈশ্বরদীতে বোম্বাই লিচুর চাষই সবচেয়ে বেশী। লিচুর মুকুলে রোগ ব্যাধি কম, সামনের মাসটিতে আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লিচুর বাম্পার ফলন হবে বলে জানান তিনি।
উল্লেখ্য যে, গত বছরে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ঈশ্বরদীতে লিচুর ফলনে চরম বিপর্যয় ঘটেছিল। মুকুল না আসায় বিশেষ করে বোম্বাই জাতের লিচুর ফলন ৫০ ভাগ কমে যাওয়ায় সেসময় হওয়ায় লিচু চাষের সাথে জড়িত কৃষকরা চরম আর্থিক দু:রবস্থার শিকারে পড়েন। লিচু চাষী ও কৃষি বিভাগের সাথে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
আরও দেখুন
পেঁয়াজের চারা পুড়ে শেষ-কৃষকের মাথায় হাত! জমিতে এখন শুধুই ঘাস!
নিজস্ব প্রতিবেদক নলডাঙ্গা,,,,,,,,,,,,,,,,,জমিতে নষ্ট হওয়া পেঁয়াজের চারা দেখে নিজেদের ধরে রাখতে পারেননি জমি লিজ নিয়ে …