নিজস্ব প্রতিবেদক, ঈশ্বরদী:
লিচুর রাজধানী খ্যাত ঈশ্বরদীতে লিচুর প্রচার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ও ঈশ্বরদীতে লিচু গবেষণাগার, ফল ও সবজি সংরক্ষণাগারের দাবিতে আগামী ২ জুন থেকে দু’দিনের লিচু মেলা অনুষ্ঠিত হবে। লিচু মেলাকে কেন্দ্র করে সাজ সাজ রব ঈশ্বরদীতে। বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত এই মেলার এখন চলছে সাজ-সজ্জ্বা, মঞ্চ ও স্টল নির্মাণের কাজ। প্রায় অর্ধশত কারিগর কাজ করছে কয়েকটি ধাপে। বাঁশ-কাঠ ও রং এ সজ্জিত হচ্ছে বিদ্যালয়ের মাঠ। গত কয়েকদিন ধরেই চলছে মেলার বর্ণিল সাজের প্রস্তুতি।
সরজমিনে দেখা যায়, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিদ্যালয়েল বিশাল মাঠজুড়ে করা হচ্ছে ৩০টি স্টল। স্টলের পাশে চলছে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুসহ বিভিন্ন ডিসপ্লে তৈরির কাজ। মাঝে বিশাল মঞ্চ। অতিথিদের প্রবেশপথে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির লিচু ও ফলের বরণডালা। অতিথিদের বরণ করতে মূলসড়কে নির্মাণ করা হচ্ছে বেশ কয়েকটি তোরণ। থাকবে আধুনিক প্রযুক্তির কৃষি যন্ত্রাংশ।
বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির আয়োজনে ২ ও ৩ জুন অনুষ্ঠিত মেলার সভাপতিত্ব করবেন পাবনা-৪ আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ নুরুজ্জামান বিশ্বাস। ২ জুন বুধবার মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে কৃষিমন্ত্রী কৃষিবিদ আব্দুর রাজ্জাক এমপি এবং ৩ জুন বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল-আলম হানিফ এমপি উপস্থিত থাকবেন বলে বাংলাদেশ কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সূত্রে জানা গেছে।
খোরশেদ বলেন, ১২ জনের একটি টিম গত ছয়দিন ধরে প্রস্তুত করছে ৬০/২০ ফিটের মঞ্চ। এছাড়া স্টল নির্মাণে ৮-১০ জন, প্রবেশপথে ৮-৯ জন এবং মূলসড়কে গেট নির্মার্ণে কাজ করছে ৯-১০ জন কারিগর। লিচু মেলায় লিচু চাষীদের সাথে যুক্ত লিচু ব্যবসায়ী, ভোক্তা ও কৃষি বিভাগের সাথে সম্পর্ক স্থাপন হবে। এছাড়াও নানা ধরণের যুগপোযোগী প্রযুক্তিজ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি কীটনাশক ব্যবহারের উপকারিতা ও অপকারিতাসহ সব ধরণের তথ্য সংগ্রহ করতে পারবেন। মানুষকে উৎসাহিত করা, সচেতন করা, এর মাধ্যমে লিচু চাষ আরো আধুনিক ও সম্প্রসারিত হবে বলে মনে করছেন লিচু মেলার আয়োজকরা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মিতা সরকার জানান, লিচু ঈশ্বরদীর প্রধান অর্থকরী ফসল। দীর্ঘদিন ধরে ঈশ্বরদী অঞ্চলে লিচুর চাষ হয়ে আসছে। এখানকার বাগানে বোম্বে, মোজাফফর, দেশি জাতসহ বিভিন্ন জাতের লিচুর চাষ করা হয়। ফলন্ত প্রতিটি গাছে ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার পর্যন্ত লিচু ধরে। গত বছরের চেয়ে এবারে লিচুর আবাদ বেড়েছে। ঈশ্বরদীতে ৩,৪০০ হেক্টর জমিতে এবারে লিচুর আবাদ হয়েছে। গত বছরের চেয়ে অতিরিক্ত প্রায় ৮০০ হেক্টর জমি লিচু চাষের আওতায় এসেছে। প্রকৃতিগত কারণে একবার লিচুর ফলন ভালো হলে পরের বার মুকুল আসেনা। যেকারণে প্রায় ২০ গাছে মুকুল আসেনি।
তিনি আরও জানান, প্রতিবছর এখানে ২০ থেকে ২৫ হাজার মেট্রিকটন লিচু উৎপাদন হয়। টাকার হিসেবে প্রতি বছর প্রায় ৫০০ কোটি টাকারও বেশী লিচু ঈশ্বরদীতে বিক্রি হয়। কৃষক উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি ময়েজ উদ্দীন জানান, ঈশ্বরদীত ঐহিত্য লিচু। তবে এই বছর মানহীন কীটনাশকের কারণে কিছু চাষীরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ মেলাকে ঘিরে অনেক নতুন নতুন ক্রেতা সৃষ্টি হবে।
তিনি আরও বলেন, ঈশ্বরদী ১১ হাজার ২৫৮ বাগানে ৩ লাখ ৪১ হাজার ২শ লিচু গাছ রয়েছে। আর সলিমপুর, সাঁহাপুর ইউনিয়নে বাড়ির আঙিনা ও উঠান জুড়ে লিচু গাছ নেই-এমন বাড়ি কম। ঈশ্বরদীতে প্রায় ৮ হাজার কৃষক লিচু আবাদে রয়েছেন। তাদের পরিবারের একটি বড় অবদান রাখে লিচু। সুতরাং ঈশ্বরদীতে লিচু মেলাটি হওয়া প্রয়োজন ছিল। সেই সাথে লিচু গবেষণাগারটি প্রয়োজন। এই মেলার মাধ্যমে লিচুচাষীদের ভাগ্যোন্নয়ন ঘটবে বলে আশা রাখি।
স্থানীয় সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্জ্ব নুরুজ্জামান বিশ্বাস বলেন, কৃষিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান ঈশ্বরদীর। সারাদেশে উৎপাদিত লিচুর বেশিরভাগ অংশ উৎপাদিত হয় ঈশ্বরদীতে। এই উপজেলাতে রয়েছে ১৪-১৫ জন জাতীয় পদকপ্রাপ্ত কৃষক। কিন্তু এখানে কৃষি পণ্য ও ফল সংরক্ষণের কোন ব্যবস্থা নেই। লিচু সংরক্ষণাগার করা হলে এলাকার লিচুচাষীরা ন্যায্য মূল্য পাবে এবং দীর্ঘদিন লিচু বাজারজাত করতে ও খেতে পারবে। ঈশ্বরদীতে লিচু গবেষণাগার, ফল ও কৃষিপণ্য সংরক্ষণাগারের দাবি দীর্ঘদিনের। আমি আশা করি মন্ত্রী মহোদয় ঈশ্বরদীবাসীর দাবি পূরণ করবে।
আরও দেখুন
নন্দীগ্রামে অবৈধভাবে পুকুর খনন করার অপরাধে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা
নিজস্ব প্রতিবেদক নন্দীগ্রাম,,,,,,,,,,,,, বগুড়ার নন্দীগ্রামে অবৈধভাবে পুকুর খনন করার অপরাধে একজনকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা …