নিজস্ব প্রতিবেদক:
ঈদের আগে চাল পেল না দুঃস্থ অসহায় মানুষ। যে চাল বরাদ্দ হয়েছিল ঈদের আগে দুঃস্থ অসহায় মানুষের দুর্দশা কিছুটা লাঘবের জন্য। ঘটনাটি ঘটেছে নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল ইউনিয়নে। পবিত্র ঈদুল আযহা উপলক্ষে জেলার সকল ইউনিয়ন এবং পৌরসভার দুঃস্থ ও অসহায় মানুষদের মাঝে চাল বিতরণ সম্পন্ন হলেও ব্যতিক্রম ঘটেছে এই ইউনিয়ন পরিষদে।
এই ইউনিয়নে দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ এর জন্য ২০ টন ৩৯০ কেজি চাল বরাদ্দ করা হয়েছিল। কিন্তু ৫৬ বস্তা চাল অর্থাৎ ৩ হাজার ৩ শ ৬০ কেজি চাল রেখে দেয়া হয়।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন এই চাল ঈদের আগের দিন রাত্রিতে ইউনিয়ন পরিষদের গুদাম থেকে অন্যত্র সরানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু স্থানীয়রা সারারাত ধরে এই চাল পাহারা দেন যাতে কেউ সরাতে না পারে।
স্থানীয় এক যুবক সোহেল রানা জানান, রাত্রিতে এই চাল সরানোর চেষ্টা করা হলে তারা থানা উপজেলা নির্বাহি অফিসার, বড়াইগ্রাম থানা এবং র্যাব সিপিসি-২ কে জানানো হয়। কিন্তু কেউই এগিয়ে আসেনি এই জাল রক্ষা করতে। অবশেষে তারা নিজেরাই এই চাল পাহারা দেন।
স্থানীয় আরেক যুবক রানা জানান ইউনিয়ন পরিষদের সচিব সঞ্জয় চাকী রাত ১২ টা থেকে ৩ টা পর্যন্ত পড়াশোনা করানোর জন্য। এদিকে যে চাল বিতরণ করা হয়েছে তাও ১০ কেজির কম করে দেয়া হয়েছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান। উপকারভোগী একজন মিনারা বেগম জানান তাকে জ্বাল দেয়ার পরে এক দোকানে এসে সেই চাল নেটে ৬ কেজি ৪শ গ্রাম পান।
তিনি কেন এর প্রতিবাদ করলেন না এমন প্রশ্নের উত্তরে মিনারা বেগম জানান, প্রতিবাদ করলে পরে হয়তো আর চালই দিবে না।
আরেক উপকারভোগী মনোয়ারা বেগম জানান, তাকে ৭ কেজি চাল দেয়া হয়েছে। এমনি করে অনেকেই এসে এই প্রতিবেদকের কাছে অভিযোগ করে জানান তাদের সবাইকেই চাল কম দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে জোনাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেন জানান, কাউকেই চাল গম দেয়া হয়নি। আমার একটি বিরোধীপক্ষ আছে তারা এটা নিয়ে অপপ্রচার চালাচ্ছে। আপনি সত্ত্বর বস্তা চাল কেন বিতরণ না করে গোডাউনে রেখেছেন এমন প্রশ্ন করা হলে চেয়ারম্যান জানান আমার মা ভীষণ অসুস্থ তাই আমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছিলাম এ কারণে চাল বিতরণ সম্ভব হয়নি।
সেক্ষেত্রে আপনার সচিব তো বিতরণ করতে পারতেন, এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সচিব আমার সাথেই হাসপাতালে গিয়েছিলেন। আপনার প্যানেল চেয়ারম্যান এবং অন্যান্য সদস্য চৌকিদার তারা তো ছিলেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি।
এদিকে চাল পাচার হয়ে যেতে পারে এমন আশঙ্কা করে এলাকার ফোন পাওয়ার কথা স্বীকার করে বড়াইগ্রাম থানার এসআই আনোয়ার হোসেন জানান, আমরা ব্যস্ত থাকার কারণে সেখানে যেতে পারিনি তাদের পাহারা দিয়ে রাখতে বলেছিলাম।
উপজেলা নির্বাহি অফিসার জাহাঙ্গীর আলম জানান মঙ্গলবার রাত বারোটার দিকে চেয়ারম্যান সাহেব আমাকে ফোনে জানিয়েছিলেন যে, চাল বিতরণ করা সম্ভব হয়নি পরে বিতরণ করা হবে। এমনিতে আমার কাছে কোন লিখিত অনুমতি তিনি চাননি। তবে চাল কম করে দেয়া এবং অন্য কাউকে দিয়ে চাল বিতরণ কেন করাননি সেই বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে।
এ বিষয়ে সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারে পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা কে জানানো হলে তিনি জানান, যদি উপজেলা নির্বাহি অফিসার অবিতরণকৃত চাল জব্দ করার বিষয়ে আমাদের সহায়তা চান, তাহলে আমরা দ্রুত আমাদের পুলিশ পাঠিয়ে চাল জব্দ করার ব্যবস্থা করব।
এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ কে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, যদি এই ধরনের কোন কিছু ঘটে থাকে তাহলে, আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব। আপাতত উপকারভোগীদের মাঝে অবিতরণকৃত চাল বৃহস্পতিবার সকালে বিতরণের ব্যবস্থা করা হবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলের দুঃস্থদের মাঝে ঈদের আগে বিতরণ করা চাল দুঃস্থদের মাঝে না পৌঁছানো এটি কোন অপরাধ কিনা এর উত্তরে তিনি জানান, এটি অবশ্যই একটি অপরাধ বিষয়টি আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
এর আগেও ১০ টাকা কেজি চাল উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ না করে বাইরে বিক্রি করে দেয়ার অভিযোগ ছিল জোনাইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হোসেন এর বিরুদ্ধে। এনিয়ে টেলিভিশন এবং পত্রিকায় বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল। সেইবারে তার কোন অসুবিধার না হলেও ডিলার গোপাল চন্দ্রের ডিলার শিপ বাতিল করা হয়েছিল।