প্রায় অচল হয়ে যাওয়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন। প্রায় এক লাখ ১০ হাজার ইভিএম মেরামত করা হবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরিচালিত বাংলাদেশ মেশিন টুলস লিমিটেড থেকে এই সেবা নেয়া হবে।
অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির আজকের (বুধবার) বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব নীতিগত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হতে পারে বলে জানা গেছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে।
সূত্র জানায়, নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের আওতাধীন ‘নির্বাচন ব্যবস্থায় তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের লক্ষ্যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৮ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। প্রকল্পটির মেয়াদ ২০১৮ সালের ১ জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের ডিপিপির একটি প্যাকেজের আওতায় প্রতিটি ইভিএম সেট দুই লাখ ৩৪ হাজার ৩৭৩ টাকা দরে মোট এক লাখ ৫০ হাজার ইভিএম সেট (কন্ট্রোল ইউনিট, ব্যালট ইউনিট ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি) পাবলিক প্রকিউরমেন্ট আইন, ২০০৬ এবং পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা, ২০০৮-এ বর্ণিত অর্পিত ক্রয় অনুসরণ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সাথে চুক্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি (বিএমটিএফ) থেকে কেনা হয়।
জানা গেছে, এসব ইভিএম দিয়ে ২০১৮ সাল থেকে এ পর্যন্ত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সংসদীয় উপনির্বাচনসহ স্থানীয় সিটি করপোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদ পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনসহ সর্বমোট এক হাজার ১৫৫টি অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব নির্বাচনে ইভিএমগুলো বার বার ব্যবহার করার ফলে অধিকাংশ ইভিএমের রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামত জরুরি হয়ে পড়েছে। নির্বাচনের পর বিভিন্ন সময়ে ফেরত পাওয়া ইভিএমগুলো পরীক্ষা করে প্রাথমিকভাবে পর্যবেক্ষণের আলোকে বিএমটিএফ জানিয়েছে, ৩০ হাজার ইভিএম সহজে রিফারবিশ করে আবার ব্যবহার করা যাবে। ৮০ হাজার ইভিএম সেট ব্যবহার উপযোগী করার জন্য বড় ধরনের রিফারবিশমেন্ট প্রয়োজন হবে। এই কাজ শেষ করার জন্য ছয় মাস সময় এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এক হাজার ২৫৯ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রয়োজন হবে বলে বিএমটিএফ থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়াও প্রকল্পের চাহিদা অনুযায়ী বিএমটিএফ কর্তৃক বিভিন্ন সময় আরো প্রায় ৭০ হাজার ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
নির্বাচন কমিশনও বিএমপিএফ থেকে এই সেবা নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করে জানিয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অধিক সংখ্যক আসনে ইভিএম ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আগে কেনা মেশিনগুলো কমবেশি এক লাখ ১০ হাজারটি ইভিএমের রিফারবিশমেন্ট করা সংক্রান্ত যাবতীয় সেবা সরাসরি বিএমটিএফ থেকে কেনা সমীচীন হবে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের ডিপিপি অনুসারে ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাদ্দ করা ১০০ কোটি টাকার মধ্যে ইতোমধ্যে ৪০ কোটি টাকা এ বাবদ ব্যয় হয়েছে এবং বর্তমানে ৬০ কোটি টাকা এ খাতে সংস্থান রয়েছে। সে অনুযায়ী প্রকল্প পরিচালকের দফতর থেকে ইভিএম রক্ষণাবেক্ষণের জন্য একটি প্রাক্কলন সচিবালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে।
ইভিএম প্রকল্পের অনুমোদিত বার্ষিক ক্রয় পরিকল্পনা ২০২২-২৩ এ ইভিএম/ মেশিনারি ও যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ ক্রয় প্যাকেজ অন্তর্ভুক্ত আছে এবং প্রকল্পের ডিপিপিতে বরাদ্দকৃত অর্থ দিয়ে মেরামত সংক্রান্ত বকেয়া পরিশোধসহ অল্প সংখ্যক ইভিএম মেরামত করা যাবে বলে সূত্র জানায়।