নিউজ ডেস্ক:
দেশে-বিদেশে খ্যাতি রয়েছে রাজশাহীর আমের। প্রতি বছর রাজশাহীর আম সরকারি-বেসকারি উদ্যোগে ইউরোপসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়। এবারো তার ব্যতিক্রম হচ্ছে না। রাজশাহীর আম এবারো যাচ্ছে ইউরোপের চারটি দেশে। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সহকারী উপপরিচালক তৌফিকুর রহমান সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, এবার জার্মানি, ফ্রান্স, ইতালি ও সুইজারল্যান্ডে যাবে রাজশাহীর আম। রাজশাহীর ক্ষীরশাপাত, ল্যাংড়া, আমরুপালি ও তোতাপুরি আম যাবে ইউরোপে। তবে সরকারিভাবে নয়, বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন আম রফতানি করবে।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০১৯ সালে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রাজশাহীর প্রায় ৩৫.৭৫ মেট্রিকটন আম রফতানি হয়েছিল। এর মধ্যে গোপালভোগ, ল্যাংড়া, ক্ষীরশাপাত, আমরুপালি ও হিমসাগর ছিল। করোনাভাইরাসের কারণে ২০২০ সালে রাজশাহী থেকে কোনো আম সরকারিভাবে রফতানি হয়নি। তবে বাঘা থেকে ব্যক্তিগতভাবে বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন বেসরকারি ৯ মেট্রিকটন এবং অন্যান্য উপজেলা থেকে ১২ মেট্রিকটন আম রফতানি করে।
বাংলাদেশ ফ্রুটস ভেজিটেবলস অ্যান্ড অ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে ২০১৪ সাল থেকে বিদেশে আম রফতানি করছেন বাঘা উপজেলার আম ব্যবসায়ী শফিকুল ইসলাম ছানা। তিনি বলেন, ‘বহির্বিশ্বে রাজশাহীর আমের প্রচুর চাহিদা ও সুনাম রয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে রাজশাহীর আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে এবার ৩৩৩ মেট্রিকটন আম রফতানির টার্গেট নেয়া রয়েছে। রফতানি ক্ষেত্রে ভালো সুবিধা পেলে আরো বেশি রফতানি করা হবে।
ইউরোপে আম রফতানির বিষয়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের একটি সূত্র জানায়, এবার বাঘাসহ আশপাশের উপজেলা থেকে ইউরোপের চারটি দেশে বেসরকারি আম রফতানি হবে। দেশের সম্মান বিদেশে যেন খর্ব না হয় সেটি মাথায় রেখে উপজেলা পর্যায়ে মনিটরিং টিম কাজ করছে। আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হবে বলেও সূত্রটি জানিয়েছে।
আম রফতানি সম্পর্কে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কর্মকর্তা তৌফিকুর রহমান জানান, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের মাধ্যমে স্থানীয় আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের নিয়ে বিদেশে রফতানিযোগ্য আম কিভাবে উৎপাদন, সংগ্রহ ও সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা করা যায় সে বিষয়ে তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। এতে করে চাষিরা গুণগত ও মানসম্পন্ন আম রফতানি করতে পারবেন।
সাতক্ষীরার হিম সাগর যাচ্ছে ইতালিতে
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরার ব্র্যান্ড বিখ্যাত হিমসাগর আম রফতানি হচ্ছে ইতালির রোমে। মেসার্স ইসলাম ট্রেডার্সের মাধ্যমে এ জাতের ৫ টন আম বিদেশে যাচ্ছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাধবকাটি বলাডাঙ্গা গ্রামের হাফিজুর রহমানের বাগান থেকে এই আম সংগ্রহ করা হয়। ১৪টি বায়ার কোম্পানি জেলার প্রান্তিক পর্যায় থেকে এসব আম সংগ্রহ করছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রফতানিকৃত আমের জন্য ৩৫০ চাষিকে আলাদা প্রশিক্ষণ দিয়েছে।
শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল উপস্থিত থেকে রফতানি কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন এবং বাগান পরিদর্শন করে আমের গুণগত মান দেখেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নূরুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, জেলা বিপণন কর্মকর্তা সালেহ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম, উত্তরণ পরিচালক শহিদুল ইসলাম, সফল প্রকল্পের ম্যানেজার ইকবাল হোসেন, সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়ার প্রোগ্রাম অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান ও সাতক্ষীরা জেলা আম চাষি সমিতির সভাপতি আলহাজ লিয়াকত আলী প্রমুখ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এবার জেলায় চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ৪০ হাজার মেট্রিক টন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ টন বিভিন্ন জাতের আম বিদেশে রফতানির কথা রয়েছে।
আম চাষি এসএম লিয়াকত হোসেন, রফতানিকারকের প্রতিনিধি শাওন হোসেন ও আম প্রস্তুতকারক শ্রমিকরা জানান, এবার মৌসুমী বর্ষা না হওয়ায় আমের সাইজ একটু ছোট হয়েছে। তার পরও কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হওয়ায় চাষিরা ক্ষতির মুখে পড়েননি। গত বছর ২০ মে আমফানের কারণে জেলার আম চাষিরা দারুণভাবে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে। মৌসুম শেষ হওয়া পর্যন্ত যদি কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দেয় তাহলে জেলার চাষিরা এবার হয়তো গত বছরের ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নিতে পারবে।
সাতক্ষীরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক নুরুল ইসলাম জানায়, প্রথম দিনেই এনএইচবি করপোরেশন ও তাশফিক ইন্টারন্যাশনালের মাধ্যমে ৫ টন হিমসাগর আম ইতালির রোমে যাচ্ছে। পর্যায়ক্রমে ল্যাংড়া ও আম্রপালি আমও রফতানি হবে।
রফতানিকারকরা নায্যমূল্যে আম ক্রয় করে সব প্রস্তুতি শেষে বিদেশে পাঠাচ্ছেন। ফলে চাষি ব্যবসায়ী উভয় লাভবান হওয়ার পাশাপাশি দেশে বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। স্বাদে গুণে ও মানে সেরা হওয়ায় এ জেলার আম ব্র্যান্ড হিসেবে বিদেশে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকবে বলে জানালেন জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল।
এর আগে গত ৯ মে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও এফএওর যৌথ কারিগরি সহায়তায় জার্মানিতে রফতানির উদ্দেশে সাতক্ষীরা ছাড়ে এক হাজার কেজি গোবিন্দভোগ জাতের আম।
প্রসঙ্গত, চলতি মৌসুমে সাতক্ষীরার মুম্বাই, গোবিন্দভোগ, গোপালভোগসহ আগামজাত আম ১ মে, হিমসাগর আম ২১ মে ও ল্যাংড়া আম ১ জুন থেকে হার্ভেস্টিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের চেয়ে অন্তত ১৫ দিন আগে হার্ভেস্টিংয়ের সুবিধা থাকায় সাতক্ষীরার আম রফতানিতে বিশেষ গুরুত্ব পায়।