বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম খাত হচ্ছে এই দেশের পোশাক খাত। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তৈরি পোশাক শিল্পের ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশীয় কর্মসংস্থানের প্রায় ৬৫% ও বৈদেশিক আয়ের প্রায় ৮১% অর্জিত হয় এই শিল্পের মাধ্যমে। তৈরি পোশাক শিল্পের কারণে কর্মসংস্থান হয়েছে প্রায় ৫০ লক্ষাধিক মানুষের, যার মাঝে ৮০% রয়েছেন নারীরা। বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তৈরী পোশাক শিল্পের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি বেড়েই চলেছে। সদ্য সমাপ্ত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে তৈরি পোশাকের প্রচলিত বাজার ইউরোপ ও আমেরিকার বাইরে উদীয়মান নতুন বাজারে রপ্তানিতে বড়ো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে নতুন বাজারে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫৬৮ কোটি ৭১ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ। এর আগের অর্থবছরে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৬৭ কোটি ডলারের। অর্থাত্, নতুন বাজারে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ বা ১০২ কোটি ডলারের। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকারও বেশি। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি বেড়েছে সাড়ে ১১ শতাংশ। নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়াতে সরকারের দেওয়া প্রণোদনা এবং কিছু বাজারে শুল্কমুক্ত রপ্তানি সুবিধা রপ্তানি বৃদ্ধিতে বড়ো অবদান রেখেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, প্রায় এক যুগ আগে নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়াতে সরকার নগদ সহায়তা দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়ার পর এসব বাজারে রপ্তানি বাড়ছে। এর মধ্যে কোনো কোনো বাজারে রপ্তানি ১ বিলিয়ন ডলারও ছাড়িয়েছে। ভবিষ্যতে আরো কিছু বাজারে গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি বিলিয়ন ডলার ছাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি মূলত ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকানির্ভর। রপ্তানির ৮২ শতাংশই যায় এ দুটি বাজারে। প্রধান এই দুটি বাজারের বাইরেও নতুন বাজার তৈরী করার জন্য রপ্তানি বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেয়। এর অংশ হিসেবে এসব বাজারে রপ্তানির ওপর নগদ সহায়তা দিতে শুরু করে। বর্তমানে নতুন বাজারে রপ্তানির ক্ষেত্রে ৪ শতাংশ নগদ সহায়তা দেওয়া হয়। ফলে নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়তে শুরু করেছে। এক দশক আগে নতুন বাজারে মোট গার্মেন্টস পণ্যের ১০ শতাংশ রপ্তানি হলেও ধীরে ধীরে এই হার বাড়ছে। সর্বশেষ অর্থবছরে তা প্রায় ১৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। নতুন বাজারের তালিকায় রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল, চীন, জাপান, ভারত, চিলি, দক্ষিণ কোরিয়া, মেক্সিকো, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আরো কয়েকটি দেশ। নতুন বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গার্মেন্টস পণ্য রপ্তানি হয়েছে জাপানে। গত অর্থবছরে দেশটিতে ২৯ শতাংশ বেড়ে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১০৯ কোটি ডলারের। অন্যদিকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে রপ্তানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি হারে, ৭৯ শতাংশ। এছাড়া অস্ট্রেলিয়ায় ৭২ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি সাড়ে ১৩ শতাংশ; চীনে ৫১ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ২৯ শতাংশ, ভারতে ৫০ কোটি ডলার; কোরিয়ায় ২৮ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ৪৫ শতাংশ; ব্রাজিলে ১৬ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধি ১ দশমিক ৩৪ শতাংশ।
দেশের পোশাক খাতের প্রধান দুই বাজার ইউরোপ আমেরিকায় প্রবৃদ্ধির পাশাপাশি নতুন বাজার সমূহেও পোশাক শিল্প রপ্তানি প্রবৃদ্ধি দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক দিক। এর ফলে দেশের পোশাক শিল্প আরও সম্প্রসারিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, বাড়বে মানুষের কর্মসংস্থান।