নিজস্ব প্রতিবেদক:
করোনাকালে বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম গন্তব্য ইউরোপের দেশগুলোতে রপ্তানি সম্ভাবনা বাড়ছে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলো চীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ায় এই সম্ভাবনা দেখছেন বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা। তারা মনে করেন চীন নিয়ে উন্নত বিশ্বের নতুন চিন্তা-ভাবনার কারণেই বাংলাদেশের রপ্তানি বহুগুণে বাড়বে। আগামী বছরের গোড়ায় ইউরোপের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তখন পণ্যের চাহিদাও বাড়বে। এই সম্ভাবনা কাজে লাগাতে অবকাঠামো সংকট, শুল্কায়ন ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূরীকরণের তাগিদ দিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। এ প্রসঙ্গ নিয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিন কথা বলে দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে। আলাপে ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন-এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন এমপি বলেন- করোনাকালে ইউরোপের বাজারে যে রপ্তানি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, তা কাজে লাগাতে সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। আমাদের ব্যবসা সহজীকরণ ও খরচ কমানো এবং শুল্কায়নে গতিশীলতা আনতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমাতে হবে। বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডাকে শক্তিশালী করতে হবে। এগুলো করতে পারলেই ইউরোপের বাজারের ব্যাপক রপ্তানি সম্ভাবনা কাজে লাগাতে পারবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিজিএমইএ’র সাবেক সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম বলেন- আগামী বছর ইউরোপের বাজারে ব্যাপক রপ্তানি সম্ভাবনা দেখছি। তখন পণ্যের সংকটও তৈরি হতে পারে। আবার নতুন উদ্যমে বাড়বে রপ্তানি। এ জন্য আমাদের এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে। বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি- বিকেএমইএ’র সাবেক প্রথম সহসভাপতি এ এইচ আসলাম সানী বলেন- আভাস পাওয়া যাচ্ছে আগামী জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম রপ্তানি বাজার ইউরোপের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াবে। ফলে ইউরোপের বাজারে আমাদের ব্যাপক রপ্তানি সম্ভাবনা আছে। কিন্তু বাংলাদেশের অবকাঠামোগত সংকট সে রপ্তানি সম্ভাবনাকে বাধাগ্রস্ত করবে। করোনাকালে তাদেরই বাণিজ্য হয়েছে, যারা ভালো পণ্য সরবরাহ দিতে পেরেছে। এক্ষেত্রে আমাদের ভালো কারখানা ও দক্ষ শ্রম ব্যবস্থাপনা ও অভিজ্ঞতা ক্রেতাদের কাছে বিবেচ্য হবে বলেও মনে করেন বিকেএমইএ’র এই উপদেষ্টা। জানা গেছে, বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানির সবচেয়ে বড় বাজার ইউরোপের দেশগুলো। এখানকার অনেক দেশেই রপ্তানি আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে ইউরোপে সরকার নতুন বাজার খুঁজতে কাজ শুরু করেছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানির ৩০ ভাগেরই গন্তব্য জার্মানি। যা প্রায় ৫০৯ কোটি মার্কিন ডলার। বাংলাদেশের একমাত্র সুবিধা সস্তা শ্রম এবং পণ্যের কম দাম। যদিও অবকাঠামোগত সংকট আছে ব্যাপক। এই সংকট কমাতে পারলে বাংলাদেশ থেকে বিপুল পরিমাণে তৈরি পোশাক রপ্তানির সম্ভাবনা আছে ইউরোপে। বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, চীন থেকে জাপান ও ইউরোপের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া নতুন সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। সবাই চায় সস্তা শ্রম, উন্নত যোগাযোগ এবং ব্যবসা ও বিনিয়োগবান্ধব শুল্ক-করনীতি। এসব দিতে পারলে সামনে বাংলাদেশের রপ্তানি যেমন বাড়বে, তেমনি আসবে বিদেশি বিনিয়োগ। জানা গেছে, ইউরোপে বাংলাদেশি পণ্যের অন্যতম বড় ক্রেতা দেশ সুইডেনের প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোন করে তাদের রপ্তানি আদেশ অব্যাহত রাখার আশ্বাস দিয়েছেন।
একইভাবে ডেনমার্কও করোনা-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের পাশে থাকার কথা জানিয়েছে।