নিউজ ডেস্ক:
কৃষির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইউরিয়া সার। ফসলের উৎপদন বাড়াতে এই সারের রয়েছে ব্যাপক ভূমিকা। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই ইউরিয়া সারের উৎপাদনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। স্থাপন করা হচ্ছে ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ (ইউএফ-৮৫) আধুনিক প্ল্যান্ট। এজন্য ‘ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ (ইউএফ-৮৫) প্ল্যান্ট স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৭২৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। তবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে প্রতিবছর ইউএফ-৮৫ আমদানি বাবদ ব্যয় হওয়া প্রায় ১১৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে সিলেট জেলার ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় দৈনিক ৮০ মেট্রিক টন ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ কারখানা স্থাপন করা হবে। ফলে ইউরিয়া সারের কোটিং ম্যাটেরিয়াল হিসাবে ইউএফ-৮৫ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন এবং আমদানিনির্ভরতা হ্রাসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ প্রকল্পের মাধ্যমে ইউরিয়া সারের কোটিং ম্যাটেরিয়াল হিসাবে ইউএফ-৮৫ উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করে আমদানি নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে। দেশে প্রয়োজনীয় মিথানল ও ফরমালাডিহাইড জাতীয় ইন্টারমেডিয়েট প্রডাক্টের আংশিক চাহিদা পূরণ হবে। এছাড়া কৃষি উৎপাদনে গ্রানুলার ইউরিয়া সারের ব্যবহার বৃদ্ধি হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিরা।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তারা যুগান্তরকে জানান, শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট অনুষ্ঠিত হয় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা। ওই সভায় দেওয়া সুপারিশগুলো প্রতিপালন করায় প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) আগামী বৈঠকে উপস্থাপনের সুপারিশ করা হয়েছে। অনুমোদন পেলে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে এটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম হচ্ছে-ফ্যাক্টরির জন্য প্রয়োজনীয় মেশিন ও যন্ত্রপাতি ক্রয়, জেনারেল কনট্রাক্টর নির্মাণ সেবা, ফ্যাক্টরির মেশিন ও যন্ত্রপাতি স্থাপন এবং টেস্ট রান ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কারিগরি সেবা দেওয়া হবে। এছাড়া ডিজাইন, কারিগরি সুপারভিশন এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপনাবিষয়ক পরামর্শক সেবা, সিএমএস স্থাপন, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ ও স্থানীয় প্রশিক্ষণ, ৪টি যানবাহন ক্রয়, কম্পিউটার এবং আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র ক্রয় করা হবে।
প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, প্রিল্ড ইউরিয়ার তুলনায় গুটি ইউরিয়া বা গস্খানুলার ইউরিয়া ব্যবহার সহজ, এর কার্যক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী ও অপচয় কম হয়। তাই গস্খানুলার ইউরিয়া সারের চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইউরিয়া মেল্টের সঙ্গে ইউএফ-৮৫ সংযোজনের মাধ্যমে গস্খানুলার ইউরিয়া তৈরি করা হয়। গস্খানুলার ইউরিয়া উৎপাদনে সাধারণত ইউএফ-৮৫ কোটিং হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
দেশে বিদ্যমান কারখানাগুলো বছরে ৩৭ লাখ ২৯ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদিত হয়। যার মধ্যে গস্খানুলার ইউরিয়া সারের পরিমাণ ২৬ লাখ ৪০ মেট্রিক টন। এ সার উৎপাদনের জন্য বছরে ২৪ হাজার মেট্রিক টন ইউএফ-৮৫ প্রয়োজন হয়। এর সম্পূর্ণ অংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। এজন্য বছরে প্রায় ১১৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকা ব্যয় হয়। এ বিবেচনায় ইউরিয়া গ্রানুলেশন এবং অন্যান্য চাহিদা মেটানোর জন্য বিসিআইসির আওতায় ইউরিয়া ফরমালডিহাইড-৮৫ প্ল্যান্ট তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।
আরও বলা হয়েছে, প্রকল্পটি সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য ২০১৭ সালের ১৮ মে বিসিআইসি একটি কমিটি গঠন করে। কমিটির সুপারিশের জন্য মোট ৪২৮ কোটি ৯৯ লাখ ৩৬ হাজার প্রাক্কলিত ব্যয়ে বিসিআইসি প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রণয়ন করা হয়। পরবর্তী সময়ে ২০১৮ সালের ১ ফেব্রুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত প্রকল্প যাচাই কমিটির সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যন্ত্রপাতির মূল্য যৌক্তিকভাবে নির্ধারণ করে মোট ৭২৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ে ডিপিপি পুনর্গঠন করা হয়।