নিউজ ডেস্ক:
আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের প্রার্থীদেরই দলীয় মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। দুর্নীতি ও অপকর্মে জড়িত প্রার্থীরা দলের মনোনয়নের জন্য বিবেচিত হবেন না। এমনকি বর্তমান চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে এমন কোনো অভিযোগ থাকলেও তারা দলীয় মনোনয়ন পাবেন না।
গতকাল শুক্রবার গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় ও স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের মূলতবি বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা দলের এমন সিদ্ধান্তের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন বলে বৈঠক সূত্র জানায়। তিনি জানান, বিতর্কিত ও অনুপ্রবেশকারী কেউ স্থানীয় সরকারসহ কোনো পর্যায়ের নির্বাচনেই মনোনয়ন পাবেন না।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন দলের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, কাজী জাফর উল্লাহ, সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, কার্যনির্বাহী সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য রশিদুল আলম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাক, লে. কর্নেল (অ.) ফারুক খান, অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আবদুর রহমান ও প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের উপনির্বাচনসহ দ্বিতীয় পর্যায়ের দ্বিতীয় ধাপের ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদ এবং ১০টি পৌরসভা ও দুইটি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের দলীয় প্রার্থী বাছাই করতেই বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হয়েছিল আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের তিন দিনব্যাপী এই বৈঠক। গতকাল দ্বিতীয় দিনের বৈঠকে খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদগুলোর চেয়ারম্যান পদের প্রার্থীদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে বিকেল ৪টা থেকে প্রায় ছয় ঘণ্টার বৈঠকেও এই তিন বিভাগের প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হয়নি।
এই অবস্থায় এই তিন বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক আজ শনিবার বিকেল ৪টা পর্যন্ত মূলতবি করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার প্রথম দিনের বৈঠকে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের উপনির্বাচন এবং ১০টি পৌরসভা ও দুইটি উপজেলা পরিষদ ছাড়াও রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদগুলোর চেয়ারম্যান পদে দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়। এ ছাড়া প্রার্থীর মৃত্যুজনিত কারণে স্থগিত থাকা আরও দুটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীও চূড়ান্ত হয়।
গতকালের বৈঠক শেষে আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ূয়া সমকালকে জানান, আজকের মূলতবি বৈঠক শেষে খুলনা, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদে দলীয় প্রার্থীদের নাম সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে।
বৈঠকে অংশ নেওয়া কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, দলীয় প্রার্থিতা চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশীদের স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্ন ইমেজের পাশাপাশি জনপ্রিয়তা, যোগ্যতা ও জয়লাভের সম্ভাবনার চুলচেরা বিশ্নেষণও করা হচ্ছে। বিশেষ করে সংশ্নিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো অনিয়ম ও অপকর্মের অভিযোগ আছে কিনা- সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া আগে থেকেই সিদ্ধান্ত আছে, বিদ্রোহী প্রার্থীরা এমনকি বর্তমান চেয়ারম্যান হলেও অথবা জনপ্রিয়তা থাকলেও কোনো অবস্থায়ই দলীয় মনোনয়ন পাবেন না। আর প্রার্থিতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের জীবনবৃত্তান্ত ছাড়াও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও দলীয় জরিপে প্রাপ্ত তথ্যও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
আগামী ১১ নভেম্বর দ্বিতীয় ধাপে ৮৪৮টি ইউনিয়ন পরিষদের ভোটগ্রহণ করা হবে। এসব ইউপিতে ৪ হাজার ৪৫৮ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ ও জমা দিয়েছেন। মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠকের মাধ্যমে বিভাগওয়ারি ইউনিয়ন পরিষদের প্রার্থী চূড়ান্ত করে একসঙ্গে ঘোষণা করছে ক্ষমতাসীন দলটি।