নিজস্ব প্রতিবেদক:
গ্রামীণ ব্যাংকের গোড়াপত্তন ১৯৮৩ সালে। তখন থেকে ২০১১ সালের ১২ মে পর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানটির কলকাঠি ছিল ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে। এই ২৮ বছরে প্রতিষ্ঠানটি সদস্যদের মধ্যে ৭০ হাজার ৩০০ কোটি টাকা ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে বিতরণ করে।
ইউনূস অধ্যায়ের পরিসমাপ্তির পর থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত সাড়ে আট বছরে নতুন নেতৃত্বে পরিচালিত গ্রামীণ ব্যাংক ক্ষুদ্রঋণ হিসেবে এক লাখ ৫২ হাজার ৭৮৪ কোটি টাকা বিতরণ করে।
সেই হিসেবে ইউনূস আমলে ঋণ বিতরণের তুলনায় নতুন নেতৃত্বের হাত ধরে ব্যাংকটির ঋণ বিতরণ কার্যক্রম দ্বিগুণেরও বেশি বেড়েছে।
সব মিলিয়ে ২০২০ সালের জুনে এসে গ্রামীণ ব্যাংকের মোট বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় দুই লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকায়।
গ্রামীণ ব্যাংকের প্রকাশিত আর্থিক প্রতিবেদন ঘেঁটে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির ঋণ আদায়ের হার ৯৯ দশমিক ২৯ শতাংশ। ২০১১ সালে আদায়ের হার ছিল ৯৯ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত জুন শেষে গ্রামীণ ব্যাংকের বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল ১৫ হাজার ৮৬২ কোটি টাকা। ২০১১ সালের শেষে বিতরণ করা ঋণের স্থিতি ছিল সাত হাজার ৫৩২ কোটি টাকা।
বর্তমানে গ্রামীণ ব্যাংকের মৌলিক ঋণের স্থিতি ১৫ হাজার ১০৮ কোটি টাকা। সহনশীল (ফেক্সিবল) ঋণের স্থিতি ৪৩৮ কোটি টাকা। গৃহঋণ ৯৬ কোটি টাকা।
১৯৯৭ সালে গ্রামীণ ব্যাংক উচ্চশিক্ষা ঋণ প্রকল্প চালু করে। ২০১১ সালে শিক্ষাঋণ বিতরণ ছিল ২৩৮ কোটি টাকা। গত জুনে শিক্ষাঋণের স্থিতি ছিল ১৮৫ কোটি টাকা।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার ক্ষুদ্রপ্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ১১ হাজার ৮৮ কোটি টাকা ঋণ পায়। অন্যদিকে ২০১২ সাল থেকে ২০২০ সালের জুন পর্যন্ত এক কোটি ১৪ লাখ ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানকে ৪২ হাজার ৭৩০ কোটি টাকা ঋণ দেয় ব্যাংকটি। অর্থাৎ নতুন ব্যবস্থাপনায় ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানে ঋণ বেড়েছে প্রায় চার গুণ।
প্রতিষ্ঠানটিতে আমানত আছে ২৩ হাজার ২৪৮ কোটি টাকার। ২০১১ সাল শেষে আমানত ছিল ১১ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকার।
২০১১ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির ঋণ নিয়ে বানানো বাড়ির সংখ্যা ছিল ছয় লাখ ৯১ হাজার। ২০২০ সালের জুনে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে সাত লাখ ৬২ হাজার।
ক্ষুদ্রঋণ কার্যক্রমের বাইরে গরিব মানুষদের জীবনমান উন্নয়নে অনেক ধরনের চাহিদা পূরণেও কাজ করছে প্রতিষ্ঠানটি।
২০০২ সালের জুলাই মাসে গ্রামীণ ব্যাংক ভিক্ষুকদের বিনা সুদে ঋণ দেয়ার জন্য একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নেয়। এই ঋণ দিয়ে ভিক্ষুকরা কম্বল বা মশারি কিনতে পারে। প্রতি সপ্তাহে দুই টাকা করে ঋণ পরিশোধ করতে হয়।
২০১১ সাল পর্যন্ত গ্রামীণ ব্যাংকের ভিক্ষুক সদস্য ছিল প্রায় এক লাখ ১১ হাজার। ২০২০ সালের জুনে ভিক্ষুক সদস্য কমে ৮৩ হাজার ২৯৫ জনে নেমে আসে।
২০১১ সাল পর্যন্ত ভিক্ষুকদের বিনা সুদে ঋণ ছিল প্রায় ১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রায় ১৩ কোটি টাকা ফেরতও দিয়েছিল ভিক্ষুকরা। ২০২০ সালের জুনে মোট ঋণের পরিমাণ বেড়ে হয় ১৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ফেরত আসে প্রায় ১৬ কোটি টাকা।
২০১১ সালের শেষে গ্রামীণ ব্যাংকের শাখার সংখ্যা ছিল দুই হাজার ৫৬৫টি। তখন তিনটি শাখায় একটি কম্পিউটার ছিল। বর্তমানে শাখা দুই হাজার ৫৬৮টি। এর সবগুলোতেই কম্পিউটারাইজড পদ্ধতিতে হিসাব-নিকাশ করা হচ্ছে।
২০১১ সালে ব্যাংকটির সদস্য সংখ্যা ছিল ৮৩ লাখ ৭১ হাজার। বর্তমানে সদস্য ৯৩ লাখ ১৩ হাজার। এর মধ্যে নারী সদস্যের হার ৯৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০১১ সালে এই হার ছিল ৯৬.১২ শতাংশ। তখন গ্রামীণ ব্যাংকের নেটওয়ার্ক বিস্তৃত ছিল ৮১ হাজার ৩৮০টি গ্রামে। ৪০টি অঞ্চলে কার্যক্রম ছিল।
২০১১ সালে ক্ষুদ্রঋণ প্রতিষ্ঠানটি ৪ হাজার আবেদনকারীকে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা গৃহঋণ দিয়েছে। তখন পর্যন্ত মোট গৃহঋণ বিতরণ ছিল ৯০২ কোটি টাকা। বর্তমানে বিতরণ করা ঋণের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৯৬ কোটি টাকায়।
সার্বিক বিষয়ে গ্রামীণ ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. এ কে এম সাইফুল মজিদ নিউজবাংলাকে বলেন, ‘আমি অল্প কিছুদিন হলো ব্যাংকটির দায়িত্ব পেয়েছি। এই সময়ের মধ্যে দেখেছি ব্যাংকটি ভালোই চলছে; বরং আগের থেকে ব্যাংকটির কার্যক্রম অনেক সম্প্রাসারিত হয়েছে।’
ড. ইউনূসের অনুপস্থিতিতে গ্রামীণ ব্যাংকের কার্যক্রম কোনোভাবেই বাধাগ্রস্ত হয়নি বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন ইনস্টিটিউটের (আইবিএ) পরিচালক সাইফুল মজিদ।